পেরিয়ে গেল দুটো দশক। ২০০১ সালের ১৪ ডিসেম্বর মুক্তি পেয়েছিল করণ জোহরের ছবি ‘কভি খুশি কভি গম’। তখন কে জানত, ভারতীয় সিনে-ইতিহাসে পাকাপাকি জায়গা করে নেবে ছবিটি! এখন দু-দশক পরে ফিরে দেখলে মনে হয়, সময়ের একটা স্পন্দন ছুঁতে পেরেছিল ছবিটি, তাই তার জনপ্রিয়তা আজও অটুট। আরও অবাক হতে হয় ছবি তৈরির নেপথ্য কাহিনি জেনে। ফিলহাল সময়ের এই জনপ্রিয় সিনেমার কেন্দ্রে নাকি আছে মহাকবি বাল্মীকির ‘রামায়ণ’। তেমনটাই জানিয়েছেন খোদ পরিচালক করণ জোহর। আসুন আমরা একটু বিস্তারে শুনে নিই তাঁর ভাবনা।
ভারতীয় পপুলার সিনেমা বলতে আমরা যা বুঝি, সেগুলোকে অনেকসময়ই স্রেফ বিনোদনের চৌহদ্দিতে আটকে রাখা হয়। অর্থাৎ কিনা হইহই করে সিনেমা দেখা হল, ভালো লাগল আর পয়সা উসুল হল। এর বেশি গুরুত্ব এইসব সিনেমার কপালে তেমন জোটে না। কিন্তু এটাও তো ভাবার মতো বিষয় যে, কোন মন্ত্রবলে এই ধরনের সিনেমাগুলো বছরের পর বছর মানুষের মনে দাগ কেটে যায়? বিনোদন তো নিশ্চয়ই একটা বিষয়, কিন্তু বিনোদনের সাধারণ উদ্দেশ্য পেরিয়ে এইসব সিনেমা কি আরও গভীর কিছু কথা বলে! তাই কি বারবার দর্শক সেই সিনেমার কাছে ফিরে যান!
আরও শুনুন: কোন প্রশ্নের কী উত্তর দিয়ে বিশ্বকে মন্ত্রমুগ্ধ করলেন ‘মিস ইউনিভার্স’ হরনাজ?
একটু খতিয়ে দেখলে অবশ্য দেখা যাবে, ব্যাপারটা সেরকমই। শুধু বিনোদন নয়, বিনোদনের সূত্রে এই ধরনের সিনেমা এমন কিছু গভীর অনুভবের কাছে আমাদের নিয়ে যায় যে, এদের জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়ে না। এই কভি খুশি কভি গম-এর কথাই ধরা যাক না কেন। আজ থেকে বিশ বছর আগের কথা। পরিচালক করণ জোহর তখন তরুণ। প্রথম ছবিতেই বাজিমাত করেছেন। ‘কুছ কুছ হোতা হ্যায়’ মুক্তি পেল ১৯৯৮-তে। সুপারহিট হল সে সিনেমা। তরুণ পরিচালক নিজের সাফল্যে খুশি। তাঁর আর্থিক অবস্থারও উন্নতি হল। মন দিয়ে নিজের পরের কাজ ভাবতে শুরু করলেন তিনি। সে সময় বন্ধু পরিচালক আদিত্য চোপড়া ব্যস্ত ‘মহব্বঁতে’ ছবি তৈরির কাজে। সে ছবিতে ছিলেন অমিতাভ বচ্চন এবং শাহরুখ। দুই চরিত্রের মাধ্যমে পরিচালক আদিত্য মুখোমুখি বসাচ্ছেন সময়ের দুই রূপকে। নতুন আর পুরনো সময় একে অপরকে প্রশ্ন করছে, সন্দেহ করছে আবার মীমাংসাতেও পৌঁছাচ্ছে। একধরনের অর্থডক্স চিন্তা ভেঙে যাচ্ছে নতুন ভাবনার জোয়ারে। সে ছবির শুটিং-এ গিয়েই প্রথম কভি খুশি গম-এর ভাবনা নিজের আত্মীয়দের বলেন করণ জোহর।
আরও শুনুন: বিয়ে না করেও মা হওয়ার সাহসী সিদ্ধান্ত, নজর কেড়ে নজির গড়েছেন যাঁরা
আমরা হয়তো ছবিটাকে ছাপোষা একটি ফ্যামিলি ড্রামা হিসেবে দেখি। কিন্তু পরিচালকের ভাবনা জানলে ছবির আর-একটি দিকও সামনে উঠে আসে। নিজের আত্মজীবনীতে করণ জানিয়েছেন, তিনি আসলে রামায়ণকে দেখতে চাইছিওলেন আধুনিক দৃষ্টিভঙ্গীতে। ছবিতে আমরা দেখি, একটি বিশেষ কারণে নির্বাসিত হতে হয় পরিবারের বড় ছেলেটিকে, অর্থাৎ শাহরুখ খান যে চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন সেই চরিত্রটিকে। এখানে অবশ্য দশরথ-রামের আখ্যানের সরাসরি প্রয়োগ নেই। কেননা এই চরিত্র নির্বাসিত হচ্ছে বাবার অপছন্দের মেয়েকে বিয়েকে করায়। কিন্তু খেয়াল করলে দেখা যায়, এই মেয়েটিকে কেন্দ্র করেই ক্রমে ঘনিয়ে উঠছে, দিক বদলাচ্ছে ছবির গল্প। এবং পরিবার থেকে বড় ছেলের নির্বাসন হয়ে উঠছে ছবির কেন্দ্রীয় বিষয়। পরবর্তীতে দেখা যায়, সেই বাড়িরই ছোট ছেলে অর্থাৎ ভাই চেষ্টা করে তার দাদা ও বউদিকে ফিরিয়ে আনার। এখানে আমরা চিনতে পারি রামায়ণের লক্ষ্মণকে। অর্থাৎ হৃতিক রোশন অভিনীত চরিত্রটিকে করণ তৈরি করেছিলেন রামায়ণের লক্ষ্মণ চরিত্রের আদলেই।
বাকি অংশ শুনে নিন।