গল্প নয়, সত্যি। হ্যাঁ, সিনেমার গল্পই এবার সত্যি হয়ে দেখা দিল বাস্তবেও। আর তার জেরেই আনন্দে আটখানা জুনিয়র বচ্চন। পরিস্থিতি যে আদৌ স্বপ্নপূরণের পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে না, নিজের অভিনয়ের মধ্যে দিয়ে এই বার্তা ছড়িয়ে দিতে পেরে তিনি আপ্লুত। ভাবছেন তো, ঠিক কী কাণ্ড ঘটিয়ে ফেলেছেন তিনি? আসুন তবে শুনে নেওয়া যাক।
সম্প্রতি দশম আর দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে উত্তরপ্রদেশে। আর সেই পরীক্ষার ফলেই দেখা গিয়েছে এক অভিনব চমক। সফল পরীক্ষার্থীদের তালিকায় অন্যান্য পড়ুয়াদের সঙ্গে সঙ্গে জায়গা হয়েছে ১২ জন কয়েদিরও। আর এই সাফল্যের খবরেই শোরগোল পড়ে গিয়েছে রীতিমতো। কোনও অনুপ্রেরণামূলক বইপত্র কি বক্তৃতা- এসব কিছুই নয়, এমন চমকে দেওয়া সাফল্যের কারণ হিসেবে ওই কয়েদিদের সামনে উদাহরণ হয়ে উঠেছেন একজন অভিনেতা। তিনি অভিষেক বচ্চন। আর এ-কথা জানতে পেরেই পরীক্ষায় সফল কয়েদিদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন অভিষেক স্বয়ং। আসলে ‘দসভি’ নামে ওই সিনেমাটিতে যে অভিষেক নিজেই অভিনয় করেছিলেন এক কয়েদির চরিত্রে। সেই কয়েদিও একসময় সফল হয়েছিল পরীক্ষায়। তার চেয়েও বড় কথা, যেখানে শুটিং চলেছিল ওই সিনেমার, সেই আগ্রা জেলের কয়েদিরাই সফল ভাবে উত্তীর্ণ বোর্ড পরীক্ষায়।
আরও শুনুন: ঐতিহ্যের অনুসারী বারাণসী বিমানবন্দর, সংস্কৃত ভাষাতেও শুরু ঘোষণা
চলতি বছরেই রুপোলি পর্দায় মুক্তি পেয়েছিল তুষার জলোটা-র পরিচালিত ছবি, ‘দসভি’। যেখানে দুর্নীতিগ্রস্ত এক রাজনীতিকের চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন অভিষেক বচ্চন। দুর্নীতির কারণেই রাজনীতিকের ঠাঁই হয় গারদের ওপারে। সেখানে এক মহিলা জেলারের পাল্লায় পড়ে চরিত্রটি। যে জেলারকে একদা সাসপেন্ড হতে হয়েছিল নেতার মর্জিতেই। এই জেলারই ক্রমে বদলে দিতে থাকে চরিত্রটির জীবন। অশিক্ষিত তকমা ঘুচিয়ে ওই ব্যক্তি ৪০ বছর বয়সে জেলে বসেই স্কুল ফাইনাল পরীক্ষা দেয়, এবং পাশও করে। পরবর্তীকালে জেল থেকে মুক্তি পাওয়ার পর ফের যখন আবার রাজনীতিতে ফেরে, তখন তার রাজনৈতিক কর্মসূচি আর কেবল রাজনীতির কর্মকাণ্ডেই আটকে ছিল না। সেখানে জুড়ে গিয়েছিল শিক্ষার প্রসার সংক্রান্ত ভাবনাচিন্তাও।
আরও শুনুন: কাজ বলতে পর্ন দেখা, বেতন আকাশছোঁয়া, এমনই মজার চাকরি পেলেন তরুণী
২০২১ থেকে ২০২২ সাল, প্রায় বছরখানেক ধরে এই ছবির অনেকখানি অংশই শুট করা হয়েছিল আগ্রা কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারে। আর সেই ছবি মুক্তির দু’মাস পরে প্রকাশিত হল উত্তরপ্রদেশের বোর্ড পরীক্ষার ফলাফল। সেখানে দেখা গিয়েছে, দশম শ্রেণির পরীক্ষায় সফল ভাবে উত্তীর্ণ ৯ জন কয়েদি। পাশাপাশি দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষাতেও সাফল্য মিলেছে ৩ কয়েদির। পরীক্ষায় সফল কয়েদিদের কথায়, ‘দসভি’-র মুক্তির পরে জেলেই সিনেমাটির প্রদর্শনের বিশেষ ব্যবস্থা করা হয়েছিল। আর অভিষেকের অভিনীত ওই চরিত্রটির বিবর্তন দেখেই নাকি ফের লেখাপড়া শুরু হয় কয়েদিদের, আর তারপরই এল এই অভাবনীয় সাফল্য। প্রত্যাশিত ভাবেই খুশির আমেজ সর্বত্র। খুশি অভিষেকও। এই খবর পেয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজের উচ্ছ্বাস মেলে ধরেছেন অভিষেক। পুরস্কারের চেয়েও এই প্রাপ্তিই তাঁর কাছে অনেক বেশি দামি, এমনটাই জানিয়েছেন জুনিয়র বচ্চন।