নারীকে আপন ভাগ্য জয় করবার অধিকার- না কেউ হাতে তুলে দেয় না। অধিকার ছিনিয়ে নিতে হয়। কেউ তা পারেন, কেউ পারেন না। যাঁরা পারেন, তাঁদের জীবনই একসময় হয়ে ওঠে ‘লার্জার দ্যান লাইফ’। আর সেই জীবনই জায়গা করে নেয় সিনেমায়। সেরকমই কয়েকজন নারীর কথা আজ শুনে নিই, যাঁদের জীবনই হয়ে উঠেছে সিনেমা।
গাঙ্গুবাই কাঠিয়াবাড়ির কথা সেই সেদিনও খুব কম মানুষই জানতেন। সিনেমার মতো জনপ্রিয় মাধ্যমে যখন তাঁর জীবন ফুটে উঠল, তখনই বহু মানুষ জানলেন এই নারীর সংগ্রাম ও কৃতিত্বের কথা। আলিয়া ভাট রূপদান করেছেন এই চরিত্রে। এই ছবি শুধু বক্সঅফিসে বাজিমাত করছে তাই-ই নয়, অনেকরকম সামাজিক সংস্কারও ভাঙছে। যৌনকর্মীদের জীবন, তাঁদের সামাজিক উত্তরণের বিষয়েও অনেকে সচেতন হচ্ছেন। সচেতনতার এই উপাদান লুকিয়ে ছিল গাঙ্গুর জীবনেই। সিনেমা তা ছড়িয়ে দিয়েছে বহুজনের মধ্যে। আসলে সকলেই তো গাঙ্গুবাই হতে পারেন না। তবে গাঙ্গুবাই যে অনেককে লড়াইয়ের অনুপ্রেরণা জোগাতে পারেন, তা নিশ্চিত করেই বলা যায়।
আরও শুনুন – সিনেমার পর্দায় ‘প্রথম চুম্বন’, ট্যাবু ভেঙে পথ দেখিয়েছিলেন দেবিকা রানি
খেয়াল করলে আমরা দেখব, নারীদের সাফল্যের পথ কোনওদিনই ফুলে-ঢাকা ছিল না। অনেক লড়াই করেই এক একজন তাঁদের স্বপ্ন স্পর্শ করতে পেরেছেন। তাঁদের জীবনের গল্পেই লুকিয়ে আছে সেই উত্থানপতনের কাহিনি। সিনেমা তাকে সেলিব্রেট করেছে বিভিন্ন সময়। ধরা যাক গুঞ্জন সাক্সেনার কথা। ১৯৯৯-তে কার্গিল যুদ্ধে লড়াই করেছিলেন। তাঁকেও অনেক বাধা অতিক্রম করতে হয়েছিল। সিনেইন্ডাস্ট্রি তাঁকেও শ্রদ্ধা জানিয়েছিল। তৈরি হয়েছিল ‘গুঞ্জন সাক্সেনা – দ্য কারগিল গার্ল’। গুঞ্জনের চরিত্র পর্দায় ফুটিয়ে তুলেছিলেন এই সময়ের নায়িকা জাহ্নবী কাপুর।
আরও শুনুন – ‘শোলে’ থেকে বাদই পড়ে যাচ্ছিলেন খোদ গব্বর সিং! কেন জানেন?
শুধু আধুনিক সময়ের কথাই বা কেন! ইতিহাসের দিকে ফিরে তাকালেও এমন বীরাঙ্গনার কথা আমরা শুনি, যাঁদের সামনে শ্রদ্ধায় মাথা নত হয়ে আসে। ভারতবর্ষের ব্রিটিশবিরোধী সংগ্রাম কি সম্পূর্ণ হবে যদি ঝাঁসির রানি লক্ষ্মী বাইয়ের কথা না বলা হয়! তাঁর জীবন উঠে এসেছিল কঙ্গনা রানাউত অভিনীত ‘মণিকর্নিকা – দু কুইন অফ ঝাঁসি’ ছবিতে। আবার একালের বীরাঙ্গনা নীরজার কথাই ধরুন। ১৯৮৬-এর বিমান অপহরণের ঘটনায় জঙ্গিদের চোখে চোখ রেখে লড়াই করেছিলেন। অসম সাহসে প্রাণ রক্ষা করেছিলেন যাত্রীদের। সিনেমায় তাঁর জীবন উঠে এসেছিল, নীরজার চরিত্রে রূপদান করেছিলেন সোনম কাপুর। এই সময়ের আর একটি গুরুত্বপূর্ণ ছবি ‘রাজি’। ছবিটিকে অনেকেই এখনকার অন্যতম একটি সিনেমা হিসাবে গণ্য করেন। আলিয়া ভাট এখানে এক সিক্রেট এজেন্টের চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। এই সিনেমাও বাস্তব এক এজেন্টের জীবন অবলম্বন করেই তৈরি। তিনি এক পাকিস্তানি ব্যক্তিকে বিয়ে করেছিলেন, পাঠিয়েছিলেন জরুরি তথ্য, যা ব্যবহৃত হয় দেশরক্ষার কাজে। এই আত্মোৎসর্গের কাহিনিকেও তাই আপন করে নিয়েছিল সিনেমা। আবার একটু উলটো পিঠের কথা যদি ভাবা যায়, তবে হাসিনা পারকারের নাম করতে হয়। দাউদ ইব্রাহিমের বোনের জীবন উঠে এসেছিল সিনেমাতে, সে চরিত্রে রূপদান করেছিলেন শ্রদ্ধা কাপুর। তাঁর জীবনও তো ছাপোষা কোনও জীবন নয়।
আরও শুনুন – শখের বলিহারি! রকমারি সাবান জমাতে ভালবাসেন বলিউডের ভাইজান
আসলে সিনেমা সবসময় খোঁজ করেছে একটু বড় কোনও জীবনের। জীবনের সাধারণ ফ্রেম ছাপিয়ে যায় যাঁদের জীবনকথা, তাঁদেরকেই আঁকড়ে ধরেছে রূপোলি পর্দার বাস্তবতা। বাস্তব জীবনের এই নারীরা অনায়াসেই এই সীমানা পেরিয়ে গিয়েছেন তাঁদের অসামান্য ক্ষমতায়। আর তাই সিনেমা এসে দাঁড়িয়েছে এঁদের জীবনের কাছেই। গল্প নয়, বলেছে সত্যিকারের জীবনের কথাই।