একদিকে অতিমারী, অন্যাদিকে প্রাকৃতিক বিপর্যয়। স্টারডম ভুলে আর্ত, সহায়-সম্বলহীন মানুষের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন তারকারা। ছুটে যাচ্ছেন ঝড়-বিধ্বস্ত এলাকায়।
করোনা পরিস্থিতির জেরে রাজ্যে আবার লকডাউন। বন্ধ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, অফিস, কল-কারখানা। ফের সংকটে রাজ্যের অর্থনীতি।
যশের তাণ্ডবে ক্ষতিগ্রস্ত দিঘা ও সুন্দরবনের বিস্তীর্ণ এলাকা। ত্রাণ ও উদ্ধারকাজ শুরু।
না না, খবর বলছি না। বিগত দুবছর ধরে খবরের কাগজ বা নিউজ চ্যানেল খুললেই এইসবই হেডলাইন। কেমন আছেন, জিজ্ঞেস করতেই ভয় করে। উত্তরটা তো জানাই। কেউ হয়তো বলবেন, ‘‘আর বলবেন না, এভাবে চললে আর কতদিন চালাতে পারব জানি না।’’ কেউ শোনাবেন কীভাবে করোনার সঙ্গে লড়াই করে সুস্থ হয়েছেন তার কাহিনি। সত্যিা, শেষ দেড় বছরে কে কবে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছে বলুন তো?
শুরুটা হয়েছিল চিনে। তখনও খবর শুনে মনে হয়নি এই ভয়াল থাবা গ্রাস করবে পৃথিবীকে। করোনা আক্রান্ত পৃথিবীতে একদিকে মৃত্যুভয়, খেয়ে-পরে বেঁচে থাকার লড়াই তো চলছেই, তারই মধ্যে গোদের ওপর বিষফোঁড়ার মতো যোগ হয়েছে প্রাকৃতিক বিপর্যয়। অতিমারীর কবলে থাকা অসুস্থ পৃথিবীকে রেয়াত করেননি প্রকৃতিদেবীও। করোনা-আমফান-যশের ত্রিফলা আক্রমণে বদলে গেছে জীবনযাত্রা। মানুষ আজ সহায়-সম্বলহীন। করোনার জেরে বিপর্যস্ত জীবিকা ও জীবন ।
আরও শুনুন : করোনায় বন্ধ Live Show, গান শোনার আগ্রহ কি কমছে?
শিক্ষা, শিল্প, বিনোদন সব ক্ষেত্রেই চরম অবস্থা। উপার্জনের রাস্তা বন্ধ। বন্ধ শুটিং, নাটক, বিচিত্রানুষ্ঠান। এই বিপর্যয়ে সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষের সঙ্গে এগিয়ে এসেছেন বিনোদন জগতের তারকারাও । নিজেরাও চরম দুঃসময়ের মধ্যে দিয়ে গেলেও পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন অসহায়, আর্ত মানুষদের।
ছোটদের অবস্থা এখন আরও খারাপ। এ কেমন শৈশব? স্কুল বন্ধ। বন্ধুদের সঙ্গে আর দেখা হয় না। পার্কও বন্ধ থাকায় খেলতে যাওয়ার উপায় নেই। তার ওপর নাচ, গান, আঁকা সবকিছুই তো এখন অনলাইন, বাড়ির চার দেওয়ালের মধ্যেই।
ছোটদের কথা ভাবলেই মন খারাপ হয়ে যেত লোপামুদ্রা মিত্র-র। এই জেলখানার জীবনে বাচ্চাদের একটু মুক্তির আনন্দ দিতে শুরু করেছিলেন ওয়ার্কশপ। দুদিনের এই ওয়ার্কশপে প্রিয় শিল্পীকে কাছে পেয়ে বাচ্চারাও মন খুলে কথা বলতে পেরেছিল।
আরও শুনুন : বাচ্চারা কি সারাক্ষণ Mask পরবে! করোনাকালে ছোটদের সুরক্ষায় কী করবেন?
যশের তাণ্ডবে বিধ্বস্ত এলাকায় ত্রাণ নিয়ে ছুটে গেছেন ইমন চক্রবর্তী। পনেরো দিনে প্রায় দশ হাজার মানুষের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন ত্রাণ। আগামী দিনে আবার পাশে দাঁড়াবেন কথা দিয়েছেন।
করোনার দ্বিতীয় ঢেউ যে এত ভয়াবহ হতে পারে তার আগাম কোনও আঁচ ছিল না। তাই শুরু থেকেই হাসপাতালে বেড, অক্সিজেনের সমস্যায় প্রাণ হারিয়েছেন বহু মানুষ। চোখের সামনে প্রিয়জন চিকিৎসা না পেয়ে মারা গেছেন। এই সমস্যায় সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন অভিনেতা যিশু সেনগুপ্ত। কলকাতা-মুম্বাইয়ের ব্যস্ত শিডিউলের মধ্যেই পরিকল্পনা করেছেন সেফ হোমের। কথা বলেছেন আধিকারিকদের সঙ্গে। দক্ষিণ কলকাতার সংস্কৃতি-চর্চা কেন্দ্র বাণীচক্রে কোভিড রোগীদের জন্য ব্যবস্থা করেছেন নিভৃতবাসের। একসঙ্গে ২৫ জন কোভিড পজিটিভ রোগী থাকতে পারবেন এখানে। শুধু তাই নয়, যশ-বিধ্বস্ত পাথরপ্রতিমার গঙ্গারামপুরে পৌঁছে গিয়েছিলেন ত্রাণ সামগ্রী নিয়ে।
গত দুবছর ধরে যে অতিমারীর মধ্যে দিয়ে আমরা চলেছি, তার শেষ কোথায় এখনও আমরা জানি না। কবে আবার নীরোগ পৃথিবীকে দেখব তার অপেক্ষায় সবাই। তবে শুধু অপেক্ষা নয়, এর সঙ্গে হয়ে উঠতে হবে সমব্যথী। বিন্দু বিন্দু সাহায্য দিয়েই সিন্ধু পার করতে হবে।