‘কালী’ তথ্যচিত্রের পোস্টার ঘিরে উত্তাল দেশ। হিন্দুদের ধর্মীয় ভাবাবেগকে সেখানে আঘাত করা হয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছেন অনেকে। পরিচালক লীনা মণিমেকলেইয়ের বিরুদ্ধে দিল্লিতে ইতিমধ্যেই দায়ের করা হয়েছে এফআইআর। পরিচালকের পাশে দাঁড়িয়ে কার্যত আগুনে ঘি ঢেলেছেন তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র। এমন ঘটনা প্রথম নয়। এর আগেও বলিউডের বহু ছবি এবং ওয়েবসিরিজই এমন বিতর্ক উস্কে পড়েছে। আসুন, শুনে নেওয়া যাক ধর্মীয় রোষের মুখে পড়েছে কোন কোন সিনেমা।
সিনেমা কি শুধুই বিনোদনের প্রয়োজনে? সামাজিক বা বৌদ্ধিক দায় কি নেই তার কোনও? আলবাত আছে। আর সেসব ব্যতিক্রমী ছবি যেমন সমাদর পায়, তাদেরকে পড়তে হয় বিভিন্ন রকম বাধার মুখেও। স্পর্শকাতর কিংবা রক্ষণশীল বিষয়আশয় নিয়ে কথা বলার কারণে বহু সময়েই বিতর্ক তৈরি হয়েছে বহু সিনেমাকে ঘিরে। বহু সিনেমার বিরুদ্ধেই অভিযোগ উঠেছে ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত দেওয়ার। তার জন্য় সমস্যায় পড়তে হয়েছে ছবির পরিচালক এবং কলাকুশলীদের। আর সেই তালিকা কিন্তু বেশ দীর্ঘ।
‘কালী’ তথ্যচিত্রের পোস্টারে হিন্দু দেবীকে অবমাননা করা হয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছেন হিন্দুত্ববাদীরা। বছর খানেক আগে সঞ্জয় লীলা বনশালীর ‘পদ্মাবত’ নিয়েও কম হইচই হয়নি। অভিনেত্রী দীপিকা পাডুকোণকে খুনের হুমকি পর্যন্ত দেয় কর্ণি সেনা। সম্প্রতি মুক্তি পাওয়া সিনেমা ‘পৃথ্বীরাজ’-কে নিয়েও কম হইচই হয়নি। ২০১৪ সালে আমির খান অভিনীত ‘পিকে’ ছবিটিকে ঘিরেও কম বিতর্ক দানা বাঁধেনি। ছবির বেশ কয়েকটি মুহূর্ত নিয়ে আপত্তি জানিয়েছিল বেশ কয়েকটি হিন্দুত্ববাদী সংগঠন। ছবিটির বেশ কয়েকটি দৃশ্য নিয়ে আপত্তি জানিয়েছিল বিশ্ব হিন্দু পরিষদ ও বজরং দল-সহ বেশ কয়ে হিন্দুত্ববাদী দল। একই রকম আপত্তি উঠেছিল পরেশ রাওয়াল ও অক্ষয় কুমার অভিনীত ‘ওহ মাই গড’ সিনেমাটি নিয়েও।
আরও শুনুন: দাড়ি-গোঁফ রাখা চলবে না, সংস্থার ‘আজব’ ফরমানে চাকরি হারালেন শতাধিক শিখ কর্মী
‘সিং ইজ কিং’, ‘জো বোলে সো নিহাল’, ‘দিল বোলে হাড়িপ্পা’, ‘সন অব সর্দার’, ‘জিরো’ এমনকি ‘লাভ আজকাল’ সিনেমাটিকে ঘিরেও আপত্তি উঠেছিল একসময়ে। এই সব ছবির বেশ কয়েকটি দৃশ্যে নাকি শিখ ভাবাবেগকে আঘাত করা হয়েছিল বলেই অভিযোগ উঠেছিল। ‘মাই নেম ইজ খান’ ছবিটি নিয়ে তীব্র আপত্তি জানিয়েছিল শিবসেনা। এমনকি অস্কারজয়ী হলিউড সিনেমা ‘স্লামডগ মিলিনিয়র’ সিনেমাটি নিয়ে আপত্তি জানিয়েছিল জনজাগৃতি সমিতি। ছবিটিতে ভগবান রামকে বিকৃত করে দেখানো হয়েছিল বলে অভিযোগ তুলেছিল হিন্দুত্ববাদী ওই দলটি।
সুশান্ত সিং রাজপুত ও সারা আলি খান অভিনীত ‘কেদারনাথ’ ছবিটি নিয়েও বিতর্ক তৈরি হয়। সেখানে লাভ জিহাদকে সমর্থন করা হয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছিলেন কেউ কেউ। ‘কমিনে’ ছবির একটি দৃশ্যে শৌচাগারের ভিতরে লেখা ছিল ‘আপনা হাত জগন্নাথ’- কথাটি। সে নিয়ে হিন্দু দেবদেবী অবমাননার অভিযোগ উঠেছিল। অখিল ভারতীয় জাঠ মহাসভার রোষের মুখে পড়ে ‘পানিপত’ ছবিটিও। এমনকী ছবিটি নিষিদ্ধ করার দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি পর্যন্ত জমা দেন তারা।
আরও শুনুন: অনুপ্রেরণা অভিষেক বচ্চনের সিনেমা, বোর্ডের পরীক্ষায় সফল ভাবে উত্তীর্ণ ১২ কয়েদি
শুধু সিনেমাই নয়। বারংবার অসহিষ্ণুতার মুখে পড়েছে ওটিটি প্ল্যাটফর্মের বহু ছবি ও ওয়েবসিরিজও। ‘পাতাললোক’ নামে এই ওয়েবসিরিজ নিয়েও হিন্দুত্ববাদীদের রোষের মুখে পড়েছিলেন অনুষ্কা শর্মা। আদতে তাঁর প্রযোজনা সংস্থা থেকেই মুক্তি পেয়েছিল সিরিজটি। সইফ আলি খান অভিনীত ‘তাণ্ডব’ সিরিজটি নিয়েও কম তাণ্ডব হয়নি। সিরিজটি বয়কটেরও দাবি ওঠে। এমনকী কয়েকটি দৃশ্য বদলে দিতেও বাধ্য হন পরিচালক। ‘আশ্রম’ নামে ওয়েবসিরিজটিও ওটিটি প্ল্যাটফর্মে বেশ জনপ্রিয়তা পায়। বেশ কয়েকটি সিজন ইতিমধ্যেই দেখে ফেলেছেন দর্শকেরা। সিরিজটি নিয়ে আপত্তি তুলে পরিচালক প্রকাশ ঝা ও অভিনেতা ববি দেওয়ালকে নোটিস দেয় রাজস্থানের যোধপুরের দায়রা ও জেলা আদালত। সিরিজটি হিন্দু ভাবাবেগকে আঘাত করেছে বলেও দাবি করা হয়েছে সেই নোটিসে। তব্বু এবং ইশান খট্টর অভিনীত ‘স্যুটেবল বয়’ নামে ওয়েবসিরিজটি নিয়েও আপত্তি তুলেছিলেন ভারতীয় জনতা যুব মোর্চার ন্যাশনাল সেক্রেটারি গৌরব তিওয়ারি। দায়ের করা হয় এফআইআরও।
এই ধারাবাহিকতা যেন চলছেই। ইতিমধ্যেই ‘কালী’ তথ্যচিত্রটি নিয়ে অশান্তির আবহ তৈরি হয়েছে দেশ জুড়ে। পরিচালক লীনা মণিমেকলেইয়ের মুন্ডচ্ছেদেরও হুমকি দিয়েছেন অযোধ্যার এক পুরোহিত। বিষয়টি নিয়ে অবশ্য তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছেন অনেকেই। লীনাকে সমর্থন করে হুমকির মুখে তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্রও। তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছেন স্বরা ভাস্কর থেকে শুরু করে তসলিমা নাসরিনের মতো অনেক বিশিষ্টরাই।