সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজের অসুস্থ অবস্থার ছবি পোস্ট করেছেন দক্ষিণী অভিনেত্রী সামান্থা। জানিয়েছেন, মায়োসাইটিস নামে একটি বিরল রোগ বাসা বেঁধেছে তাঁর শরীরে। কিন্তু কেবল রিয়েল লাইফে নয়, রিল লাইফেও অনেক সময়ই এমন সব বিরল রোগের শিকার হয়েছেন তারকারা। আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
ছোট হাতের ‘বি’ লিখতে গিয়ে ‘ডি’, কিংবা ‘ডি’ লিখতে গিয়ে ‘বি’ লিখে ফেলছে শিশুটি। বাড়ি হোক কি স্কুল, বকুনি আর মারধর খেতে খেতে তার প্রাণ ওষ্ঠাগত। হতাশ বাবা-মা শেষে ছেলেকে পাঠিয়ে দিলেন হোস্টেলে, যদি কড়া শাসনে ছেলেটা মানুষ হয় শেষমেশ। কিন্তু সেখানেও সেই আগের ঘটনার পুনরাবৃত্তি। তবে পুরো গল্পটাই বদলে গেল হঠাৎ করে। স্কুলের নতুন স্যার এসে জানালেন, তাঁর ছাত্রের ভুল করার কারণ অমনোযোগ নয় মোটেই। আসলে সে এক বিরল রোগে আক্রান্ত, আর এই সবকিছু সেই রোগেরই উপসর্গ। হ্যাঁ, এমন করেই ‘ডিসলেক্সিয়া’ নামে একটি অচেনা রোগকে দেশজুড়ে চিনিয়ে দিয়েছিলেন ‘তারে জমিন পর’ সিনেমার নিকুম্ভ স্যার ওরফে আমির খান।
আরও শুনুন: পর্দায় নয়, বাস্তবে রেগে গেলে কী করেন সানি দেওল? জেনে অবাক ফ্যানরা
এই প্রথম নয়, এই শেষও নয়। অনেক সময়ই বলিউডের সূত্র ধরে সাধারণ মানুষের কাছে এসে পৌঁছেছে এমন সব বিরল রোগের কথা, যেগুলির নামও চট করে শোনা যায় না। নাচগান আর অ্যাকশন দৃশ্যের বাইরে গিয়ে এই সিনেমাগুলি মানুষকে খানিক সচেতন করে তুলেছে, এমনটা বললে হয়তো ভুল হয় না। কী কী সিনেমা রয়েছে এই তালিকায়?
‘তারে জমিন পর’ সিনেমায় রোগটিকে চিনিয়েছিলেন আমির খান। আর ‘গজনি’ সিনেমায় তিনি নিজেই অভিনয় করেছিলেন এক অসুস্থ ব্যক্তির চরিত্রে। এই সিনেমার নায়ক আন্তেরোগ্রেড অ্যামনেশিয়ায় আক্রান্ত ছিল, যার ফলে সময়ে সময়ে তার স্মৃতি হারিয়ে যেত। আবার অ্যালঝাইমার্স ডিজিজ, অর্থাৎ পুরোপুরি স্মৃতিভ্রংশের অসুখের কথা উঠে এসেছিল অজয় দেবগণ ও কাজল অভিনীত ‘ইউ, মি, অওর হাম’ ছবিতে। সঞ্জয় লীলা বনশালীর ‘ব্ল্যাক’-এও এই রোগে আক্রান্ত হয়েছিল অমিতাভ বচ্চন অভিনীত চরিত্রটি।
সঞ্জয় লীলা বনশালীর সিনেমা মানেই রোমান্টিকতার কল্পরাজ্য। কিন্তু ‘গুজারিশ’ ছবিতে সেই সিনেম্যাটিক রোমান্টিকতা পেরিয়ে এক নরম ভালবাসার গল্প বুনেছিলেন পরিচালক। যে ভালবাসার ভরকেন্দ্র ছিল এক মারাত্মক রোগ, কোয়াড্রিপ্লেজিয়া। কাঁধ থেকে গোটা শরীরটা প্যারালাইজড হয়ে যাওয়ার ফলে আক্রান্তের নাকের উপর বসা মাছিটুকুও সরানোর ক্ষমতা ছিল না। অন্যদিকে মস্তিষ্ক আর মন সচল ছিল আগের মতোই। শরীর আর মনের জোড় না মেলার এই দ্বন্দ্বকে চূড়ান্ত দক্ষতায় পর্দায় ফুটিয়ে তুলেছিলেন হৃতিক রোশন।
‘পা’ সিনেমায় একটি তেরো বছরের বাচ্চার ভূমিকায় নিজেকে মানিয়ে নিয়েছিলেন বিগ বি। বিরল রোগ প্রজেরিয়া তথা হাচিনসন-গিলফোর্ড সিনড্রোমের কথা তুলে ধরেছিল আর বালকির এই ছবি। যে জিনঘটিত রোগে কোনও বাচ্চার শরীরে বৃদ্ধ বয়সের লক্ষণগুলি দ্রুত দেখা দেয়। আবার অনুরাগ বাসুর ‘বরফি’-তে এক অটিজম আক্রান্ত কিশোরীর ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন প্রিয়াঙ্কা চোপড়া। ‘মার্গারিটা উইথ আ স্ট্র’ ছবিতে কাল্কি কোচলিনের চরিত্রটি ছিল সেরিব্রাল পলসিতে আক্রান্ত।
‘মাই নেম ইজ খান’ সিনেমায় এসআরকে-র চরিত্রটি অ্যাসপারগার্স সিনড্রোমে আক্রান্ত ছিল। এই রোগে কোনও মানুষ অন্য কাউকে নিজের মনের ভাব গুছিয়ে বলে উঠতে পারে না। অসংলগ্ন কথার দরুন কারও সঙ্গে মিশতেই সমস্যা হয় এই রোগীদের। একটানা কথা বলতে সমস্যা হত ‘হিচকি’ সিনেমায় রানি মুখার্জির চরিত্রটিরও। ট্যুরেট সিনড্রোমে আক্রান্ত ছিল এই চরিত্রটি। আবার ‘কার্তিক কলিং কার্তিক’-এ উঠে এসেছিল স্কিজোফ্রেনিয়ার কথা।
আরও শুনুন: স্নান না করে প্রায় দু’সপ্তাহ কাটিয়েছিলেন আমির খান, কিন্তু কেন?
বলিউড মানেই কেবল বিনোদন নয়। দেশের বিপুল জনসাধারণের কাছে যে মাধ্যমটি পৌঁছে যাওয়ার ক্ষমতা রাখে, তার সূত্র ধরে এমন অনেক অজানা তথ্যই সকলের কাছে পৌঁছনো সম্ভব। আর সে কথাই প্রমাণ করে দিয়েছে এই সিনেমাগুলি।