পরীক্ষার আগে ডিম খেলে ডিমের মতোই নম্বর পাবে। বা দু-শালিক দেখা শুভ। কিংবা বিড়াল রাস্তা কাটলে মোটেও তা সৌভাগ্যজনক নয়। এমনই নানা কুসংস্কারের গল্প শুনতে শুনতে বড় হয়েছি আমরা। বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অনেকেই সেসব জলাঞ্জলি দিয়েছি, কেউ কেউ আবার ততটা পারিনি। তবে শুধু আমআদমীরা নয়, বলিউডের তাবড় তারকাদেরও রয়েছে এমনই নানা কুসংস্কার। আসুন, শুনে নেওয়া যাক সেই গল্পই।
তারকাদের জীবনযাপন থেকে শুরু করে ছোটখাট জিনিস দেখে অনুপ্রাণীত হন মানুষ। তাঁদের অনেক কিছুই নিজেদের জীবনেও অনুকরণও করে বসেন ভক্তেরা। তারকারা তাঁদের জীবনে এমন অনেক কিছুই পরেন বা করেন, যার সঙ্গে লুকিয়ে রয়েছে কোনও না কোনও সংস্কার। সলমন থেকে আমির, শাহরুখ থেকে দীপিকা, এমন কুসংস্কার রয়েছে বহু বলিউড তারকারই।
আরও শুনুন: ‘ভিলেন’-এর চরিত্রে পর্দা কাঁপিয়েছেন এই বলিউড ‘হিরো’-রা, পিছিয়ে নেই নায়িকারাও
সলমন খানের হাতের বিখ্যাত সেই ব্রেসলেটের কথা তো অনেকেই জানেন। কোনও সময় সেটিকে হাতছাড়া করেন না সল্লুভাই। বাবা সেলিম খানের কাছ থেকে পাওয়া বলে তো বটেই। এমনিতেও নীল পাথরযুক্ত ওই ব্রেসলেটটিকে খুবই পয়া বলে মনে করেন বলিউডের ভাইজান। এমনকী সেটির বিশেষ ক্ষমতা রয়েছে বলেও বিশ্বাস তাঁর। শুটিংয়ের প্রয়োজনেও ব্রেসলেটটিকে কখনও কাছছাড়া করেননি সল্লুভাই। ইদানীং নাকি আবার পয়া জিনিসের তালিকায় ঢুকে পড়েছে একটি লকেটও। সেটিকে নিয়েও বেশ স্পর্শকাতর অভিনেতা।
বলিউড তারকা আমির খানেরও রয়েছে এমনই সংস্কার। না, কোনও বস্তু নিয়ে না থাকলেও মাস নিয়ে রয়েছে স্পর্শকাতরতা রয়েছে তাঁর। আমিরের কাছে ডিসেম্বর ও খ্রিস্টমাস, এই দুটিই বেশ পয়া। বিশেষত বক্স অফিসের জন্য তো বটেই। একটু খেয়াল করলেই দেখা যাবে, ‘গজনি’ থেকে শুরু করে ‘থ্রি ইডিয়টস’ কিংবা ‘ধূম-৩’, সবকটি ছবিই মুক্তি পেয়েছিল ওই সময়ে। ‘পিকে’ বা ‘দঙ্গল’ মুক্তির সময়েও তার নড়চড় হতে দেন বলিউডের মিস্টার পারফেকশনিস্ট।
কী ভাবছেন, শাহরুখ খানের তেমন কোনও সংস্কার নেই? আলবাত আছে। একটি বিশেষ সংখ্যা নিয়ে খুবই স্পর্শকাতর তিনি। তাঁর প্রতিটি গাড়ির নম্বরপ্লেটে সেই নম্বরটির উল্লেখ থাকতেই হবে। কোনও গাড়ির প্লেটে ওই সংখ্যা না থাকলে, তা সরাসরি প্রত্যাখ্যান করে দেন তিনি। আসলে সংখ্যার ক্ষমতায় বেশ বিশ্বাস করেন কিং খান। তাঁর সেই পয়া সংখ্যাটি কী নিশ্চয়ই জানতে ইচ্ছা করছে? তিনটে পাঁচ। অর্থাৎ ৫৫৫। এই অদ্ভুত সংখ্যায় দারুণ বিশ্বাস বলিউড বাদশার। ঐশ্বর্য রাই এবং সঙ্গীত পরিচালক এ আর রহমানের আবার পছন্দের সংখ্যা ৭৮৬।
আরও শুনুন: অনস্ক্রিন প্রেমিকাকে চুমু খাওয়ার জন্য আত্মত্যাগ! মাংস খাওয়াই ছাড়লেন ‘থর’ সিনেমার নায়ক
জিনিস, মাস এবং নম্বর তো হল। এবার আসি জায়গার কথায়। এই বলি তারকার রয়েছে জায়গা নিয়ে সংস্কার। তিনি আর কেউ নন, ভিকি কৌশল ঘরনী ক্যাটরিনা কাইফ। আজমের শরিফ নিয়ে বেশ দুর্বলতা রয়েছে ক্যাটের। যে কোনও ছবির মুক্তির আগে অজমের শরিফে গিয়ে বেশ কিছু রীতিরেওয়াজ পালন করবেনই তিনি। বলিউডের অন্যতম জনপ্রিয় তারকা দীপিকা পাডুকোনেরও রয়েছে তেমনই সংস্কার। ছবি মুক্তি পাওয়ার আগে প্রভাদেবীর সিদ্ধিবিনায়ক মন্দিরে যাওয়া চাই-ই-চাই তাঁর।
অমিতাভ বচ্চনের ক্রিকেট ম্যাচ নিয়ে রয়েছে আশ্চর্য কুসংস্কার। তিনি নাকি কখনওই কোনও ম্যাচের সরাসরি সম্প্রচার দেখেন না। তাঁর বিশ্বাস তেমনটা করলেই তাঁর পছন্দের দল খেলাটি হেরে যায়। শুনে মজা লাগলেও ব্যাপারটি নিয়ে কিন্তু বেশ স্পর্শকাতর বিগ বি। সোনম কাপুরের কুসংস্কার শুনলে তো ভিরমি খাবেন। তিনি নাকি একবার একটি ছবির শুটিংয়ে পড়ে গিয়েছিলেন। আর সেই ছবিটি দারুণ হিট হয় বক্সঅফিসে। তার পর থেকেই সোনমের বিশ্বাস, শুটিং ফ্লোরে পড়ে যাওয়াটা বেশ সৌভাগ্যের তাঁর জন্য। তারকা মিঠুন চক্রবর্তী আবার কখনও নিজের ছবির মহরৎ-এ উপস্থিত থাকতেন না। তাঁর দৃঢ় বিশ্বাস ছিল, মহরৎ-এ তিনি থাকলেই সেই ছবির বক্স অফিসে মুখ থুবড়ে পড়া অবশ্যম্ভাবী।
পরিচালক করণ জোহর ও প্রযোজক একতা কাপুরের ‘K’ বর্ণটির প্রতি দুর্বলতার কথা তো সকলেই জানেন। কেরিয়ারের গোড়ায় প্রতিটি ছবিরই আদ্যাক্ষর শুরু করতেন করণ ‘K’ বর্ণ দিয়ে। ‘কুছ কুছ হোতা হ্যায়’ থেকে ‘কভি খুশি কভি গম’ বলুন কিংবা ‘কাল হো না হো’, বিষয়টি নিয়ে সেসময় বেশ চর্চা ছিল বি-টাউনে। পরে অবশ্য ‘ক’-এর গেরো থেকে বেরিয়ে আসেন করণ। কম যাননি একতাও। ‘কিউ কি সাঁস ভি কভি বহু থি’ থেকে শুরু ‘কাহানি ঘর ঘর কি’ কিংবা ‘কুমকুম’, সেসময় ছোটপর্দায় ‘K’ সিরিয়ালের রমরমা ছিল চোখে পড়ার মতোই।
বহু তারকারই আবার নিউমেরোলজিতে অটুট বিশ্বাস। সৌভাগ্য ফেরাতে অনেকেই নিজের নাম থেকে একাধিক শব্দ বাদ দিয়েছেন। যোগ করেছেন বা বদলে ফেলেছেন এমন তারকাও আছেন সেই তালিকায়। সঞ্চয় দত্তই যেমন নিজের নামের গোড়া থেকে ‘U’ বর্ণটিকে বদলে ফেলেছিলেন নিউমেরোলজিস্টদের পরামর্শে। আবার নিজের পদবি থেকে ‘A’ বর্ণটিকে ছেটে ফেলেন অজয় দেবগন।
আবার সৌভাগ্যের আশায় নিজের গোটা পদবিটাই বদলে ফেলেছেন এমন তারকাও কম নেই। বি-টাউনে এসে কার্তিক তিওয়ারি থেকে আরিয়ান হয়ে উঠেছিলেন ভুলভুলাইয়া-টু খ্যাত অভিনেতা। রাজকুমার রাওয়েরও জন্মসূত্রে পাওয়া পদবি ছিল যাদব। তবে নিউমেরোলজির চক্করে গোটা পদবিটাই বদলে ফেলেন এই তারকা।
আরও শুনুন: স্বামীর চেয়ে স্ত্রীর উপার্জনই বেশি, বলিউডের বেতন বৈষম্যকে উড়িয়ে দিয়েছেন এই তারকা দম্পতিরা
তবে সংস্কার বা কুসংস্কার যাই থাকুক না কেন, সাফল্যের আসল কথা যে পরিশ্রম, তা কিন্তু কখনওই ভোলেন না তারকারা। ওই যে কথায় বলে, যে কোনও সাফল্যের পিছনে ৩ শতাংশ ভাগ্য থাকলে বাকি ৭ শতাংশই কিন্তু পরিশ্রম। তাই তারকাদের থেকে তাঁদের কুসংস্কার অনুকরণের আগে সব সময় মনে রাখতে হবে তাঁদের অক্লান্ত পরিশ্রমের গল্প। যার জোরেই আজ সফলতার সিঁড়ি চড়েছেন বি-টাউনের এইসব জনপ্রিয় তারকারা।