কলকাতায় অনুষ্ঠান করতে এসে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে প্রয়াত জনপ্রিয় সঙ্গীতিশিল্পী কেকে। সারা দেশ কাঁদছে। কাঁদছেন অসংখ্য অনুরাগীরা। এভাবেই বিভিন্ন সময় শিল্পীর অকালপ্রয়াণে কেঁদেছেন তাঁদের অনুরাগীরা। ইতিহাসের পাতা ওলটালে দেখা যায়, বহু শিল্পীই মঞ্চে পারফর্ম করতেই অকস্মাৎ ঢলে পড়েছেন মৃত্যুর কোলে। জানেন তাঁরা কারা? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
প্রথমেই যাঁর কথা উঠে আসে, তিনি কেরলের সঙ্গীতশিল্পী এডাভা বশির। চলতি বছরের মে মাসের ২৮ তারিখ। পারফর্ম করছিলেন আল্লাপুঝার একটি মঞ্চে। চিরাচরিত ভঙ্গিতে এডাভা গলা মিলিয়েছেন অর্কেস্ট্রার তালে। কিন্তু সেই গান আর শেষ করা হল না তাঁর। সবাইকে অবাক করে দিয়ে এডাভা হঠাৎই পড়ে গেলেন মঞ্চে। দ্রুত তাঁকে নিয়ে যাওয়া হলো চেরঠালার একটি প্রাইভেট হাসপাতালে। আর সেখানেই তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসক মহল। গাইতেন মূলত ভক্তিগীতি। আর ধর্মের ভেদাভেদ ভুলে গান পরিবেশন করতেন মন্দির-মসজিদ উভয় স্থানেই। সঙ্গীত পরিবেশনের জন্য পাড়ি দিয়েছেন দেশ-বিদেশের বহু জায়গায়। বশিরের এই মৃত্যুর মাত্র কয়েকদিন পরেই আবারও এরকম একটি ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটবে তা বোধহয় কেউ ভাবতেও পারেনি।
আরও শুনুন: গেয়েছেন অসংখ্য জনপ্রিয় গান, পেয়েছেন নামমাত্র পুরস্কার… তবু আক্ষেপ করেননি KK
এরপর যার কথা আসে, তিনি তালাল মাদাহ। সৌদি আরবের এই সঙ্গীতকার পরিচিত ছিলেন ‘দ্য আর্থস ভয়েস’ নামে। ছিলেন অসাধারণ সুরেলা কণ্ঠের অধিকারী। তুরষ্কের পরিচিত বাদ্যযন্ত্র উড বাজানোয় ছিলেন সিদ্ধহস্ত। যুক্ত ছিলেন ৮০টিরও বেশি মিউজিক অ্যালব্যামের সঙ্গে। এমনই একজন মানুষের আকস্মিক মৃত্যু হয়েছিল ৬০ বছর বয়সে। টেলিভিশনে লাইভ অনুষ্ঠান চলাকালীন হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর মুখে ঢলে পড়েন তালাল।
আরও শুনুন: তোমায় হৃদমাঝারে রাখব… কয়েক প্রজন্মের গুমরে ওঠা কান্নার নাম KK
একই সঙ্গে উঠে আসে ব্রুশ হ্যাম্পটনের কথা। মার্কিন এই গায়ক ছিলেন একাধারে বিখ্যাত গিটারিস্ট, লিরিসিস্ট এবং একটি জনপ্রিয় ব্যান্ডের লিড সিঙ্গার। বছর সত্তরের জনপ্রিয় এই গায়ক সঙ্গীতজগতে অধিক পরিচিত ছিলেন গ্রান্ডড্যাডি নামে। ছিলেন বহু নামকরা গায়কের মেন্টর। বয়সের বাধা পেরিয়ে ব্রুশ শেষদিন অবধি মাতিয়ে রাখতেন মঞ্চ। দিনটা ছিল তাঁরই সত্তর তম জন্মদিন, ফক্স থিয়েটারের একটি কনসার্টে গান করতে করতে মঞ্চেই মৃত্যু মুখে ঢলে পরেন ব্রুশ। গোটা নিউ ইয়র্ক স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল তাঁর এই অকালপ্রয়াণে।
তালিকার পরবর্তী নাম শিল্পী মার্ক স্যান্ডম্যান-এর। যিনি আমেরিকার লো রক ব্যান্ড মরফিনের জনপ্রিয়তার মূল কাণ্ডারি ছিলেন। তাঁর বিশেষত্ব ছিল দুই তারের বেস গিটার আর অদ্ভুত একটি কণ্ঠস্বর। মাত্র ৪৬ বছর বয়সে মঞ্চে অনুষ্ঠান করতে করতেই মারা যান মার্ক। রোমের একটি তিনদিনের কনসার্টের দ্বিতীয় দিনে গান গাইতে উঠে হাজারো দর্শকের সামনে পড়ে যান তিনি। পরে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে মৃত বলে ঘোষণা করা হয় মার্ক-কে। তাঁর এই আকস্মিক মৃত্যুতে ভেঙে যায় সাধের মরফিন ব্যান্ডটিও।
আরও শুনুন: হোটেলে গান গাওয়া থেকে টাইপরাইটার বিক্রি, গানের জন্য চাকরিও ছেড়েছিলেন কেকে
এরপর বলা যায় ম্যাঙ্গো-র কথা। পুরো নাম জিউসেপ ‘পিনো’ ম্যাঙ্গো। অনেকেই এখনও ইতালির অন্যতম সেরা গায়ক হিসাবে বিবেচনা করেন তাঁকে। ইতালির ভূমধ্যসাগরীয় পপ সঙ্গীতকে বিশ্বের সামনে তুলে ধরেছিলেন ম্যাঙ্গো। তাঁর মৃত্যু যদিও বেশ অবাক করা। ইতালির একটি মঞ্চে পরিবেশন করছিলেন তাঁর বিখ্যাত হিট গান ‘ওরো’। গান গাইতে গাইতে হঠাৎ থেমে ‘এক্সকিউজ মি’ বলে শ্রোতাদের দিকে এগিয়ে দিয়েছিলেন মাইক্রোফোন। ঠিক তার পরমুহূর্তেই স্টেজে পড়ে যান তিনি। এরপর হাসপাতালে নিয়ে গেলে মৃত বলে ঘোষণা করা হয় তাঁকে।
পর্বের শেষ শিল্পী জনি ওয়াটসন। ওয়াটসন ছিলেন তৎকালীন ফাঙ্ক মিউজিকের স্রষ্টা। সত্তরের দশকে সকলের কাছে পরিচিত ছিমেন ‘গিটার’ ডাকনামেই। একসময় আর-অ্যান্ড-বি চার্টের শীর্ষে ধারাবাহিকভাবে জায়গা করে নিয়েছিল তাঁর ব্লুজ গান। ১৯৯৬ সালে জাপানের ইয়োকোহামায় একটি অনুষ্ঠানে আকস্মিক মৃত্যু হয় তাঁর। স্টেজে উঠে দর্শকদের উদ্দেশে কয়েকটি কথা বলতে বলতেই মাটিতে লুটিয়ে পড়েন তিনি। হাতে ধরা ছিল গিটার। শেষবারের মতো আর বেজে ওঠেনি সেই গিটার।
এ তালিকা দীর্ঘ। মঞ্চে অনুষ্ঠান চলাকালীন, প্রিয় গান গাইতে গাইতে বা শ্রোতাদের সঙ্গে কথা বলতে বলতে মৃত্যু মুখে ঢলে পড়েছেন অনেক খ্যাতনামা শিল্পীই। এভাবেই পৃথিবী হারিয়েছে মেধাবী সঙ্গীত ব্যক্তিত্বকে। সেই তালিকায় যুক্ত হলেন ভারতের জনপ্রিয় গায়ক কেকে।