বিনোদন জগতের খ্যাতি, বৈভব এক কথায় ছেড়ে দেওয়া মুখের কথা নয়। বিরূপ পরিস্থিতি কিংবা সংসারের প্রয়োজনে অনেকেই গ্ল্যামারের দুনিয়াকে বিদায় জানিয়েছেন। তবে সাধন-ভজনকেই জীবনের উদ্দেশ্য করে সবকিছু ছেড়ে দেওয়ার নজির বিরল। সেই কাজটিই করেছেন অভিনেত্রী অনঘা ভোঁসলে। আসুন শুনে নিই তাঁর এই ব্যতিক্রমী সিদ্ধান্তের কথা।
আধুনিক সময়ে প্রায় সকলেরই জীবন ভীষণ ব্যস্ত। জীবনের চাহিদাও প্রচুর। আর চাহিদা পূরণ করতে গিয়ে কেরিয়ারের চড়াই-উতরাই পেরোতে পেরোতে ক্লান্ত হয় মানুষ। কখনও ঘিরে ধরে অবসাদ। বোঝা যায়, এই ঝাঁ-চকচকে জীবনের ভিতর আছে অনেক কিছুই। বস্তুগত প্রাপ্তির ভাঁড়ার হয়তো কম নয়। কিন্তু তা না দেয় তৃপ্তি, না দেয় শান্তি। এই জায়গা থেকেই যত গোলমালের সূত্রপাত। কিন্তু কোন পথে যেমুক্তি তা খুঁজে পান না অনেকেই। সেই নিরিখেই ব্যতিক্রমী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন অভিনেত্রী অনঘা ভোঁসলে। বিনোদন জগতে যথেষ্ট খ্যাতি পাওয়ার পরও এই আলোর দুনিয়া তিনি ছেড়ে দিয়ে আশ্রয় করেছেন সাধন-ভজনের পথ।
আরও শুনুন: সিনেমা নয়, সত্যি! ৪৭-এ অন্তঃসত্ত্বা মা, লজ্জা না পেয়ে বোনকে স্বাগত জানাল ২৩-এর দিদি
অভিনেত্রীর এই সিদ্ধান্ত নতুন নয়। তবে যখনই আধুনিক জীবনে অবসাদের প্রসঙ্গ ওঠে, তখনই তাঁর সিদ্ধান্তের কথা মনে করেন অনেকেই। জীবনের খারাপ সময়ে আধ্যাত্মিকতার আশ্রয় নেন অনেকেই। সেখানেই খুঁজে পান শান্তি। মনের ভিতরকার তোলপাড় শান্ত হলে আবার ফিরে যান কর্মজগতে, আসে সাফল্য। বিরাট কোহলির কথাই ধরা যাক। কেরিয়ারের ক্রমাগত অফ ফর্ম যখন বিশ্বের সেরা ব্যাটারকে প্রায় কাবু করে ফেলেছিল, তখন এই পথেই তিনি নতুন জীবনের সন্ধান পান। দেশ-বিদেশের বহু বিখ্যাত সফল ব্যক্তির জীবনেও এরকম নিদর্শন আছে। আধ্যাত্মিকতার পথ অনুসরণ করেই জীবনের লক্ষ্য ও তাৎপর্য খুঁজে পেয়েছেন তাঁরা। আর তাতে তাঁদের পেশাগত জীবনে পুনরায় সাফল্য এসেছে।
কিন্তু এই অভিনেত্রী যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তা আরও গুরুত্বপূর্ণ। কৃষ্ণের ভজনাকেই তিনি জীবনের ধ্রুবতারা করেছেন। আর তাই ছেড়ে দিয়েছেন গ্ল্যামার দুনিয়ার সব মোহ। এ তো বড় সহজ কথা নয়। তবে বিনোদুনিয়া ছাড়ার মুহূর্তে তিনি নিজের জীবনের দর্শনের কথা সকলকে জানিয়েছিলেন। সেই কথাগুলি বেশ গুরুত্বপূর্ণ। অভিনেত্রী জানিয়েছিলেন, জীবনে নিজের কাজ করে যাওয়া যে গুরুত্বপূর্ণ তা তিনি জানেন। তবে যে কাজ কাউকে আধ্যাত্মিকতার পথ থেকে সরিয়ে দেয়, সে-পথ ছেড়ে দেওয়াই কাম্য। বলা প্রয়োজন, এখানে ভগবান কৃষ্ণের সাধনাকেই তিনি তাঁর লক্ষ্য হিসাবে চিহ্নিত করতে চেয়েছেন। আর তাই তাঁর পরামর্শ, যে পরিস্থিতি বা যে সমস্ত লোকেদের দরুন এই লক্ষ্য থেকে মানুষ বিচ্যুত হয়, সেখান থেকে সকলেরই বেরিয়ে আসা উচিত। অভিনেত্রী তাই গ্ল্যামারের দুনিয়া ত্যাগ করতে দ্বিধা করেননি। এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, বিনোদনের দুনিয়ার ক্রমাগত প্রতিযোগিতা, নানারকমের রাজনীতি, সারাক্ষণ সুন্দরী হয়ে লোকচক্ষুর সামনে থাকার চাপ তাঁকে ক্লান্ত করত। জীবনের লক্ষ্য থেকে তাঁর দূরত্ব বাড়িয়ে দিত। আর তাই তাঁর এই সিদ্ধান্ত।
আরও শুনুন: মন দিয়েছিলেন দুই যুবতীকে, কারও ‘আপত্তি’ না থাকায় দুজনকেই বিয়ে যুবকের
অভিনেত্রীর এই সিদ্ধান্ত কঠিন সন্দেহ নেই। তবে তাঁর দর্শন কিন্তু শিক্ষণীয়। কেরিয়ার বা জীবনে সাফল্যের জন্য অনেকেই অনেক কিছু ক্রমাগত করতে থাকেন। আর ক্রমশ নিজের লক্ষ্য থেকে দূরে সরে যান। এই ক্লান্তির পথ থেকে প্রাপ্তির কিছু নেই। বরং তা থেকে সরে নিজের লক্ষ্যের পথ বেছে নেওয়াই যে বাঞ্ছনীয়, অভিনেত্রীর এই সিদ্ধান্ত যেন আমাদের সে কথাই মনে করিয়ে দেয়।