রাতে যখন ছোটরা ঘুমোতে চায় না, মা তখন ভয় দেখিয়ে বলেন তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়তে, নাহলে গব্বর চলে আসবে। তেমনই ডাকসাইটে ভিলেন গব্বর। যার ভয়ে কাঁপে রামগড় তথা গোটা বলিউড। আর এই একটি চরিত্র করেই বলিউডের রীতিমতো হাড় কাঁপানো ভিলেনের তকমা পেয়ে গিয়েছিলেন আমজাদ খান। তবে জানেন, শোলে থেকে নাকি বাদই পড়ে যাচ্ছিলেন এমন মারকাটারি ভিলেন আমজাদ। কেন? শুনে নিন সেই গল্পই।
‘আরে ও সাম্বা! কিতনে আদমি থে’। রামগড় কাঁপানো সেই ডাকাত সর্দার গব্বর সিং বলিউডের সব ‘দুর্ধর্ষ দুশমন’দের অন্যতম। এই একটা চরিত্রই বোধহয় বদলে দিয়েছিল আমজাদ খানের কেরিয়ারগ্রাফটাকে। সব দিক থেকে চরিত্রটাকে বিশ্বাসযোগ্য করে তুলতে কম খাটেননি আমজাদ। আর তার ফলাফলও পেয়েছেন হাতেনাতে। বলিউডের সর্বকালের ভয়ঙ্কর ভিলেনদের তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে গব্বর সিং। রমেশ সিপ্পির তৈরি সেই সিনেমা শুধু জবরদস্ত মসালা ছবিই নয়, বলিউডের কাল্ট বললেও অতিকথন হবে না।
আরও শুনুন: শখের বলিহারি! রকমারি সাবান জমাতে ভালবাসেন বলিউডের ভাইজান
তা এই শোলে ছবির ভিলেন গব্বর সিং কিন্তু আক্ষরিক অর্থেই দুর্ধর্ষ দুশমন। ঘোড়া চালাতে চালাতে গুলি ছুড়তে পটু সে। এক নিমেষে শ্মশান করে দিয়ে চলে যেতে পারে দাপুটে পুলিশ অফিসার ঠাকুর সাবের সাজানো সংসার। নিজের সহচরকে গুলি করতে হাত কাঁপে না যার, সে যে ঠাকুর সাবের হাত কেটে নিতে দুবার ভাববে না, তা তো জানা কথাই। সত্যি কথা বলতে, জয়-বীরুর অমন কালজয়ী বন্ধুত্ব কিংবা পর্দা জুড়ে চুলবুলে বসন্তীর অনর্গল বকবক থাকা সত্ত্বেও সিনেমার প্রাণই ওই গব্বর। যতক্ষণ সে পর্দায় থেকেছে, পিঠ টান টান করে বসে থাকতে হয়েছে দর্শকদের। এই বুঝি কিছু একটা ঘটে গেল। গোটা শরীর, অভিব্যক্তি, মুখের রেখায় সেই নিষ্ঠুরতা ফুটিয়ে তুলতে সফল হয়েছিলেন আমজাদ। কিন্তু জানেন, এ হেন আমজাদকে নাকি গব্বর চরিত্রে নিতে রাজিই ছিলেন না শোলে ছবির যৌথ চিত্রনাট্যকার জাভেদ আখতার ও সেলিম খান। এমন সাধের চরিত্রের সঙ্গে আমজাদ সুবিচার করতে পারবেন না বলেই ধরে নিয়েছিলেন তাঁরা।
বরং ওই চরিত্রটির জন্য ড্যানি ডেনজাপ্পাকেই বেশি পছন্দ ছিল চিত্রনাট্যকারদের। সইও করে ফেলেছিলেন তিনি। কিন্তু ফিরোজ খানের একটি ছবির জন্য শেষমেশ পিছিয়ে যান ড্যানি। গব্বরের খোঁজ করতে করতেই জাভেদ আখতারের মনে পড়ে এক অভিনেতার কথা। ‘অ্যায় মেরি বতন কি লোগো’ সিনেমায় আমজাদকে দেখেছিলেন জাভেদ আখতার। তিনিই প্রথম আমজাদের কথা উল্লেখ করেন রমেশ সিপ্পির কাছে।
আরও শুনুন: এই ছবির শুটিং করতে গিয়ে স্মৃতিশক্তিই হারিয়ে ফেলেছিলেন কাজল! কী সিনেমা জানেন?
প্রথম দর্শনেই আমজাদকেই দারুণ পছন্দ হয়ে যায় পরিচালক রমেশ সিপ্পির। তবে আমজাদের সঙ্গে দেখা হওয়ার পর বাধ সাধলেন জাভেদরাই। গব্বরের চরিত্রে আমজাদের বদলে অন্য কাউকে নেওয়ার দাবি জানালেন তাঁরা। তার পিছনে তাঁদের যুক্তি ছিল, ডাকাত সর্দার হওয়ার জন্য আমজাদ খানের গলাটা নাকি একেবারেই ভিলেন হওয়ার যোগ্য নয়। তাই তাঁরা খারিজ করে দিলেন আমজাদকে। এ নিয়ে নাকি সামান্য মতানৈক্যও ঘটেছিল রমেশ সিপ্পির সঙ্গে জাভেদ আর সেলিমের। ওই দুই চিত্রনাট্যকার তো নিজেরাই তদবির করেছিলেন গব্বর চরিত্রে আমজাদকে নেওয়ার জন্য। তার পরে নিজেরাই বাতিল করে দিলেন তাঁকে। পুরো ব্যাপারটা জানতে পেরে খুবই মর্মাহত হয়েছিলেন আমজাদ।
এদিকে, গব্বর চরিত্রটা নিয়ে তখন রীতিমত কাড়াকাড়ি পড়ে গেছে। সঞ্জীব কপূর ও অমিতাভ বচ্চন দুজনেই নাকি গব্বর চরিত্রে অভিনয় করার আবদার জুড়েছিলেন। তবেই বুঝুন গব্বরের মহিমা, যার জন্য হিরোর রোল পর্যন্ত ছাড়তে রাজি ছিলেন অমিতাভ বা সঞ্জীব কুমারের মতো তাবড় অভিনেতারা।
তবে ওই যে ভাগ্যের লিখন, কে খণ্ডাবে বলুন। এই চরিত্রটা যেন লেখাই হয়েছিল আমজাদের জন্য। পরে রমেশ সিপ্পি জানিয়েছেন, আমজাদ যখন প্রথম বার দরজা দিয়ে ঢোকেন, তখনই তিনি বুঝে গিয়েছিলেন, তাঁর ছবির ভিলেন তিনি পেয়ে গিয়েছেন। তাই জাভেদদের পরামর্শ সত্ত্বেও শেষ পর্যন্ত আমজাদকেই নির্বাচিত করলেন রমেশ। আর বাকিটা তো ইতিহাস।
তবে শুধু গলার জন্য আমজাদকে যেভাবে খারিজ করেছিলেন দুই চিত্রনাট্যকার, সেই ব্যাপারটি কিন্তু সহজে ভুলতে পারেননি আমজাদ। ভবিষ্যতেও তাই জাভেদ আখতারদের সঙ্গে আর কোনও কাজ করেননি এই শক্তিশালী অভিনেতা। আমজাদকে পরেও বেশ কয়েকটি সিনেমায় ভিলেন হিসেবে পেয়েছে বলিউড, তবে গব্বরের সেই আমজাদ বোধহয় আজও তুলনাহীন।