মানুষ নয়, ধর্মের দিকেই চোখ। তাই প্যালেস্তাইনের মৃত্যুমিছিল নিয়ে কথা বললেই ধেয়ে আসবে আক্রমণ। তারপরেও, ট্রোলের তোয়াক্কা না করেই এবার সাহসী বার্তায় মুখ খুললেন বলিউডের একাধিক তারকা। আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
যুদ্ধের মারে নুইয়ে পড়া জীবন। তবুও সেই জীবনকে মাটিতে মিশিয়ে দিতে আয়োজনের কমতি নেই। প্যালেস্তাইনের আশ্রয় শিবিরেও তাই নির্বিচারে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইজরায়েল। আর সেই হামলাতেই সম্প্রতি প্রাণ গিয়েছে অন্তত ৪৫ জনের, জখম ১১০ জনেরও বেশি। যদিও হিসেবটা সরকারি, তবে সরকারি ঔদাসীন্য বা ঔদ্ধত্য দিয়েও সে হিসেবকে পুরোপুরি অস্বীকার করে যাওয়া সম্ভব নয়। তাই তীব্র সমালোচনার সুর চড়াতে হয়েছে গোটা বিশ্বকেই, আর তার সামনে পড়ে কার্যত ঢোক গিলতে বাধ্য হয়েছেন খোদ ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু।
আরও শুনুন:
FTII-তে শুধু নয়, কান-এর মঞ্চেও রাজনৈতিক প্রতিবাদ জারি রেখেছিলেন পায়েল
কথা হল, এই সমালোচনার দলে এবার চোখে পড়ছে ভারতের চেনা মুখদেরও। প্যালেস্তাইন তো বটেই, রাজনীতি নিয়ে কথা বললেই ট্রোলড হতে হয় তাঁদের। এবারও হচ্ছে তেমনটাই। প্যালেস্তাইনের হত্যালীলাকে সমর্থন করছেন না, তারকারা এহেন বার্তা দেওয়া মাত্রই ঝাঁপিয়ে পড়ে বয়কটের ডাক দিচ্ছে ট্রোলবাহিনী। তারপরেও দেখা যাচ্ছে, এবার সাহসী হয়ে উঠেছেন বলিউডের একটা বড় অংশ। ট্রোলের তোয়াক্কা না করেই মুখ খুলছেন তাঁরা। প্রিয়াঙ্কা, আলিয়া, করিনা, সোনম, স্বরা ভাস্কর বা দিয়া মির্জারা সোশ্যাল মিডিয়ায় ‘অল আইজ অন রাফা’ লিখতে কুণ্ঠিত হচ্ছেন না। এই হ্যাশট্যাগে শামিল সামান্থা, কঙ্কনা, ভূমি, রকুলপ্রীত, অ্যাটলি-র মতো আরও অনেক তারকাই। বোমার ঘায়ে রাফার শরণার্থী শিবিরে পুড়ে যাওয়া শিশুদের ছবির কথা মনে করিয়েছেন ইউনিসেফের মুখ করিনা। আলিয়া মনে করিয়ে দিয়েছেন, ভালোবাসা, নিরাপত্তা, শান্তি কিংবা জীবনে অধিকার রয়েছে প্রত্যেকটি শিশুর। আর প্রত্যেক মায়ের অধিকার রয়েছে তাঁর সন্তানকে এই সবকিছু দেওয়ার।
গাজার ঘটনাতে এতদিন যে তারকারা বিশেষ কথা বলেছিলেন, তেমনটা কিন্তু নয়। এমনিতে ভারতীয় তারকাদের একটা বড় অংশই নিজেদের ভ্যানিটি ভ্যানের নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতেই পছন্দ করেন। কুস্তিগিরদের আন্দোলনই হোক, কি মণিপুরের অস্থিরতা, দেশের ভেতরে ঘটে চলা এমন নানা বড় অশান্তির সময়েও দেখা গিয়েছে, তাঁদের বেশিরভাগেরই মুখে কুলুপ। বলিউড তারকারা রুপোলি স্ক্রিনে অবশ্য বরাবরই ন্যায়ের পক্ষে সওয়াল করে আসছেন, পাপীদের শাস্তি দিতেও তাঁদের জুড়ি নেই, কিন্তু বাস্তবের দুনিয়ায় তাঁদের হাতে সে ন্যায়দণ্ডের দেখা প্রায় মেলে না। আর যে কজন কথা বলতে চান? কথা বলার কথা ভাবেন? সেই তারকাদের বিরুদ্ধে আবার অস্ত্রশস্ত্র শানিয়ে নেমে পড়ে ট্রোলবাহিনী। দেশে যে ক্রমশ অসহিষ্ণুতা বেড়ে চলেছে, এক অ্যাওয়ার্ড শো-তে তা নিয়েই উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন আমির খান। ফল ভালো হয়নি। বলিদুনিয়া থেকে আম দর্শক, দু-পক্ষের লাগাতার আক্রমণ ধেয়ে এসেছে তাঁর প্রতি। সম্প্রতি লাল সিং চাড্ডার সময়েও বয়কটের ডাক শুনেছেন বলিউডের খান। থেমেই গিয়েছেন তিনি। থেমে গিয়েছেন শাহরুখও। যে দেশে বর্ষীয়ান সংগীতশিল্পীর মৃত্যুতে দোয়া পড়লেও তাঁকে কুৎসিত আক্রমণ করা হয়, সে দেশে দাঁড়িয়ে কী-ই বা বলার আছে তাঁর? লুঙ্গি ডান্সের পাশে তাঁর রাজনৈতিক ভাবনার কথা কেউ শুনবেও না, জানেন বলিউডের বাদশা। অতএব, কেউ বলেন না, কেউ বলতে পারেন না। সব মিলিয়ে বজায় থাকে মাইলের পর মাইল শান্তিকল্যাণ।
আরও শুনুন:
যে শহরে শিশু নেই, সেখানে বড়দিন আসে না
সেই নীরব বিনোদুনিয়াতেই এবার ঝড় তুলেছেন প্রিয়াঙ্কা-করিনারা। মাধুরী দীক্ষিতের মতো কেউ কেউ অবশ্য ট্রোলের ভয়ে পোস্ট মুছেছেন ইতিমধ্যেই। কিন্তু সবাই ভয় পাচ্ছেন না। আক্রমণের সামনে মাথা নোয়াচ্ছেন না। বরং সমস্ত ঘৃণার সামনে, বিষের সামনে বারবার বলে যাচ্ছেন, বোমার ঘায়ে একটি শিশুর মৃত্যু হলেও তা অন্যায়। কোনও ধর্ম, কোনও রাজনীতির দোহাই দিয়েই তার সাফাই দেওয়া চলে না। যতই ট্রোল হোক না কেন, ঘৃণার চেয়ে ভালোবাসার জোর এখনও বেশি, যুদ্ধদীর্ণ প্যালেস্তাইনের পাশে দাঁড়িয়েই তা বুঝিয়ে দিচ্ছেন বলিউডের তরুণ ব্রিগেড।