গণিকা, রক্ষিতা, বাইজি কিংবা যৌনকর্মী। বহু নাম তাঁদের। দেহপসারিণীদের জন্য কতটুকুই বা সম্মান বরাদ্দ করে আমাদের সমাজ! তাঁদের পরিজনদের জন্যও তোলা থাকে কটূ কথা, সামাজিক অসম্মান। গাঙ্গুবাই কাঠিয়াওয়াড়ির মতো কেউ কেউ হয়ে ওঠেন ব্যতিক্রম। লড়াই করে ছিনিয়ে নেন নিজের জায়গাটা। কিন্তু এমন অসংখ্য গাঙ্গুবাইয়ের লড়াইগুলো থেকে যায় ধামাচাপা। তবে সেই ট্যাবু ভাঙারই বোধহয় সময় এসেছে। যেমন ভেঙেছেন এই সাংবাদিক। টুইটারে পর্দার গাঙ্গুবাইয়ের সঙ্গে ভাগ করে নিয়েছেন নিজের মায়ের ছবি। সম্মান জানিয়েছেন মায়ের শিল্প এবং যুদ্ধকে। কী বলেছেন তিনি? আসুন, শুনে নিই।
অবিকল যেন মা। সাদা শাড়ি, লাল টিপ, হাতে চুড়ি, কোমরে শাড়ির আঁচল গোঁজা। গাঙ্গুবাই ছবিতে আলিয়া ভাটকে দেখে নিজের মাকেই যেন খুঁজে পেলেন ছেলে।
পেশায় তিনি সাংবাদিক। অন্যান্য লেখালিখিও করেন। আজ সব দিক থেকে সামাজিক প্রতিষ্ঠা পেলেও নিজের শিকড়কে ভোলেননি তিনি। আর সেই ইতিহাস আজ আর তাঁকে লজ্জা দেয় না। বরং সেই নিয়ে কথা বলতেই পছন্দ করেন মনীশ গায়কোয়াড়।
আরও শুনুন: স্বামী বিক্রি করে দিয়েছিল নিষিদ্ধপল্লিতে, সেই গাঙ্গুবাইয়ের জীবনই এখন সিনেমায়
সদ্য মুক্তি পেয়েছে সঞ্জয় লীলা বনশালির গাঙ্গুবাই কাঠিয়াওয়াড়ি। প্রেক্ষাগৃহে রমরমিয়ে চলছে ছবিটি। নাম ভূমিকায় আলিয়া ভাট। ছবিতে একজন গণিকার চরিত্রে অভিনয় করেছেন আলিয়া। ছবি মুক্তির পর থেকেই টুইটারে, সোশ্যাল মিডিয়ায় মায়ের কথা ভাগ করে নিয়েছেন মনীশ। শেয়ার করেছেন মায়ের ছবিও। তাঁর মা রেখাবাই-ও এককালে ছিলেন গাঙ্গুর মতোই একজন যৌনকর্মী।
মুম্বইয়ের এক তথাকথিত কোঠা বাড়িতে বড় হয়ে ওঠা মনীশের। তাঁর মা সেই নিষিদ্ধপল্লিরই বাসিন্দা। গাঙ্গুর মতো মনীশের মায়ের জীবনেও নেমে এসেছিল ট্র্যাজেডি। খুব ছোটবেলায় বিয়ে হয় তাঁর। পুনের কাঞ্জারভাত সম্প্রদায়ে জন্মালেও আগ্রায় একটি পরিবারে দিনমজুরের কাজ করতেন তিনি। তারপর সেখান থেকেই একদিন কলকাতায় বিক্রি করে দেওয়া হয় তাকে। তার পর হাত বদল হয়েছে বহুবার। কখনও মুম্বইয়ের কংগ্রেস হাউস, কখনও কলকাতার নিষিদ্ধপল্লি- বিভিন্ন জায়গায় ঘুরেছেন তিনি।
মনীশ জানাচ্ছেন, দারুণ নাচতে পারতেন তাঁর মা। ঝলমলে পোশাক, সুগন্ধীর গন্ধে ভাসত নাচঘর। ভাল গজল-ও গাইতেন। মায়ের সেই সব গুণ দেখে মুগ্ধ হতেন মনিশ। পর্দায় গাঙ্গুবাই কাঠিয়াওয়ারি দেখে তাই মায়ের কথাই বারবার মনে পড়ে গিয়েছে তাঁর। গাঙ্গুরূপী আলিয়ার সাদা শাড়ি, লাল টিপ, ভঙ্গি সবটাই যেন হুবহু মায়ের সঙ্গে মিলে গিয়েছে। আর আলিয়ার এই ছবটাই বারবার নস্টালজিক করে তুলছে মনীশকে।
আরও শুনুন: এই ছবির শুটিং করতে গিয়ে স্মৃতিশক্তিই হারিয়ে ফেলেছিলেন কাজল! কী সিনেমা জানেন?
না, মা নিষিদ্ধপল্লির বাসিন্দা বলে কোনও ট্যাবু বা লজ্জা নেই তাঁর। তাই মায়ের নাম সোশ্যাল মিডিয়ায় উল্লেখ করতেও পিছপা হননি মনীশ। যদিও গাঙ্গুবাইয়ের সময়ের থেকে তাঁর মা রেখাবাইয়ের সময়ের দূরত্ব বেশ খানিকটা। তবে গাঙ্গুরূপী সাজগোজ, ভঙ্গির সঙ্গে রেখার সামঞ্জস্য অবাক করেছে নেটদুনিয়াকেও।
পর্দায় যাঁর ভূমিকা তুলে ধরেছেন আলিয়া ভাট, সেই গাঙ্গুবাইয়ের দত্তক পুত্র-কন্যারা ছবিটি নিয়ে অখুশি। গাঙ্গুবাইকে যৌনকর্মী হিসাবে দেখানো নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তাঁরা। আর সেখানেই মনীশ ব্যতিক্রমী। এ সমাজ আজও যেভাবে যৌনকর্মীদের অনেকটা খাটো করে দেখে, সেই সংস্কারই ভাঙতে চান মনীশ। মনের অন্ধকারে জ্বালিয়ে দিতে চান আলোর মশাল।