দূরের হলেও কাছের মানুষ। অনাত্মীয় হলেও আপনজন। ফ্যানদের সঙ্গে সিনেপর্দার তারকাদের সম্পর্কটি এরকমই। আর তাই প্রিয় তারকার জন্য ফ্যানরা যে ঠিক ঠিক কী করে ফেলতে পারেন, তা না শুনলে বিশ্বাস করা যায় না। সঞ্জয় দত্তের সেরকমই এক জাবরা ফ্যানের কীর্তি বিস্মিত করেছিল সকলকে। মৃত্যুর আগে প্রায় ৭২ কোটি টাকার সম্পত্তি সঞ্জয়ের নামেই উইল করে গিয়েছিলেন এক মহিলা। আসুন শুনে নিই সেই ঘটনা।
হিন্দি সিনেমার দুনিয়ায় সঞ্জয় দত্ত যেন ঝোড়ো হাওয়া। ‘খলনায়ক’ হয়েও তিনি নায়ক। এমন একজন, যিনি প্রায় তোয়াক্কা করেননি কোনও কিছুরই। না রিল লাইফে, না রিয়েল লাইফে। পর্দায় তিনি যখন এলেন- পেশিবহুল চেহারা, লম্বা চুল, ডোন্ট কেয়ার হাবভাব – চেনা নায়কের ছবির সঙ্গে তাঁকে যেন কিছুতেই মেলানো যেত না। কিন্তু অন্যের টেমপ্লেটে তিনি নিজেকে মানিয়ে-গুছিয়ে সাজিয়ে রাখবেন কেন! হিন্দি সিনেমায় নায়কের ছাঁচটাই বদলে দিলেন সঞ্জয়। শোনা যায়, পরিচালক তাঁকে লম্বা চুল কেটে ফেলতে বলেছিলেন। সঞ্জয় রাজি তো হননি, উলটে ছবি ছেড়ে দেবেন বলেছিলেন। জিমে তাঁর যাওয়া চাই-ই, সে যত স্ট্রিক্ট পরিচালকের সঙ্গেই কাজ করুন না কেন। একটু অন্যরকম এই যে নায়ক, এঁর জন্য যেন হাপিত্যেশ করেই বসে ছিলেন দর্শক। সঞ্জয় রাতারাতি হয়ে উঠেছিলেন অনেকের ভালবাসার মানুষ। ব্যক্তিজীবনে তাঁর বহু উত্থান-পতন এসেছে। এমনকী জেলেও কাটিয়েছেন বহুদিন। কিন্তু জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়েনি। হিন্দি সিনেমার বক্স অফিস জানে, মাধুরী দিক্ষীত যদি কোনও ঝিম ধরা নেশার নাম হয়, তবে নিঃসন্দেহে ম্যাজিকের নাম সঞ্জয় দত্ত। একটা সময় এই জুটির জনপ্রিয়তা ছিল সুনামির সমান। আর সঞ্জয় একাই ঢেউ তুলেছিলেন অসংখ্য তরুণ-তরুণীর মনে। মাঝে কেটে গিয়েছে অন্তত গোতা দুই দশক। তবু সঞ্জয় নামের সেই এলোমেলো হাওয়ার কথা ভুলতে পারেননি তাঁর ফ্যানরা। বছর পাঁচেক আগের এক ঘটনায় তার প্রমাণ ফের মিলেছিল।
আরও শুনুন: মুক্তির আগেই দেশে ‘পাঠান’-ঝড়, ৩২ বছরের স্বপ্ন পূরণ হচ্ছে কিং খানের
একদিন পুলিশের তরফে একটি ফোন যায় সঞ্জয় দত্তের কাছে। জানা যায়, এক মহিলা উইলে তাঁর নাম লিখে গিয়েছেন। নাম লেখার অর্থ এই যে, মহিলা তাঁর সারা জীবনের সঞ্চয়, মোট ৭২ কোটি টাকার সম্পত্তি দিয়ে গিয়েছেন সঞ্জয়কে। কারণ ওই একটাই। তিনি সঞ্জয়ের ফ্যান। জানা যায়, মহিলার নাম নিশা পাতিল। ৬২ বছর বয়সে দুরারোগ্য অসুখে আক্রান্ত হয়ে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুর আগে তিনি একটি উইল করে সব সম্পত্তি প্রিয় তারকাকে দিয়ে যান। এমনকী ব্যাঙ্কের লকারে যে গয়না রাখা ছিল, তাও দিয়ে যান সঞ্জয়কে। খোঁজখবর নিয়ে সঞ্জয় জানতে পারেন, এই উইলের কথা নিশার পরিবারের সদস্যরা কেউ জানেন না। তিনি সব সম্পত্তি পরিবারের সদস্যদের হাতেই তুলে দেন।
তারকাদের জন্য ফ্যানের কীর্তি নানা সময়েই নজর কেড়েছে। কেউ ট্যাটু করান তো কেউ প্রিয় তারকার মতো সেজে ঘুরে বেড়ান। কীর্তির শেষ নেই। তবে নিজের সম্পত্তি প্রিয় তারকাকে উইল করে দিয়ে যাওয়ার ঘটনা বিরলই বলা যায়। বলিউডে বহু নামজাদা তারকা আছেন। তবু জনপ্রিয়তার নিরিখে এমন জাবরা ফ্যান পাওয়া বোধহয়য় শুধু সঞ্জুবাবার পক্ষেই সম্ভব।