বাংলা লেখালিখির জগতে আজও যে প্রাণ আর গতি আছে, রোববার ডট ইন-এ প্রকাশিত লেখায় পাঠকের প্রশ্রয়ই সে-কথা নতুন করে মনে করিয়ে দিচ্ছে। পাঠক মিলিয়ে নিয়েছেন প্রথম প্রতিশ্রুতি। সম্ভাবনার সব দরজাই খোলা থাকল আগামী পথচলায়। আপনি সঙ্গী হচ্ছেন তো?
অফিসের ক্যান্টিনের ছাপোষা চা-হরকরা। তাঁর অন্তর-গহনে ডুব দিয়ে তুলে আনা যায় জীবনের মণিমুক্তো। ক্ষণস্থায়ী প্রায় উড়ে-যাওয়া কাগজ সংগ্রহ করেন একজন সংগ্রাহক। আসলে তো তিনি কাগজ জুড়ে-জুড়ে রচনা করেন জনজীবনের কিস্সা। অটোর পিছনে লেখা ভুল বানানের অজস্র পঙক্তি কি নয় মনস্তত্ত্বের আলোছায়া! বাদল সরকারের থার্ড থিয়েটারের প্রভাবও তো সঙ্গোপনে থেকে যায় শিল্পী সনাতন দিন্দার কাজে। ডার্বির আগের দিন ইস্টবেঙ্গল টিম হোটেলে গিয়েও তো দিব্যি আড্ডা দিতে পারেন জোস ব্যারেটো।
বিষয়বৈচিত্রের হেন সমাহার কোথায় মিলবে, তা বলার জন্য আপাতত কোনও পুরস্কার নেই। কেননা এখন পাঠক মাত্রই জানেন রুচিশীল বাঙালি পাঠকের ঠিকানা- রোববার ডট ইন।
মুদ্রিত পত্রিকার পাশাপাশি বছরখানেক আগে যখন রোববার ডট ইন-এর যাত্রা শুরু হয়েছিল, তখন বাঙালির ভাবনার এই আকাশটাই যতটা সম্ভব ছুঁয়ে দেখার সাধ ছিল। সংবাদ প্রতিদিন-এর প্রধান সম্পাদক সৃঞ্জয় বোস জানিয়েছিলেন, “যুগের আন্তরিক চাহিদা মেনেই আধুনিক ও সমসাময়িক হল ‘রোববার’, যার পোশাকি নাম robbar.in। রোববার-এর যে-আভিজাত্য, সাংস্কৃতিক কৌলীন্য, তা থেকে আমরা সরে আসছি না। অর্থাৎ এই পরিবর্তন চরিত্রগত নয়, বরং অনেক বেশি মাধ্যমগত। তবে, নতুন কিছু সংযোজনও থাকল। সেই প্রথম দিনে যে সমসাময়িকতার কথা ভাবা হয়েছিল, নয়া সংস্করণে তা বাস্তবায়িত হল। রোববার ডিজিটাল যেমন প্রবহমান বাস্তবকে ছুঁয়ে থাকবে, বিশ্লেষণী দৃষ্টিকোণ থেকে দেখবে সাম্প্রতিককে, তেমনই তা ছুঁয়ে থাকবে সাহিত্য-সংস্কৃতির সনাতনী পথ। রবীন্দ্রনাথ থেকে অধ্যাত্ম, রান্না থেকে ফ্যাশন– কোনও বিষয়ই ব্রাত্য নয়। আবার ডিজিটাল বলেই তা লঘুও নয়। রুচিশীলতা ও সংস্কৃতিমনস্কতা বজায় রেখেও আধুনিক সময়ের নাড়ির স্পন্দন ছুঁয়ে থাকাই রোববার ডিজিটাল-এর লক্ষ্য।” রোববার-এর সম্পাদক অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায় লিখেছিলেন, “ঋতুদার ইচ্ছে ছিল রোববার হয়ে উঠুক প্রকৃত লাইফস্টাইল এক ম্যাগাজিন, যা সাহিত্য-অনুসারী। আজ এত বছর পর রোববারের নবকলেবরে সবচেয়ে বোধহয় খুশি হতেন ঋতুদা। হয়তো তাঁর, এগিয়ে থাকা সে-ভাবনাটুকুর মর্যাদা দিতেই এই রোববার.ইন। নবযৌবনের সরণি নবজাতক লিখবে নিশ্চিত। তার একহাত ধরে থাকবে ভুবনগোলক, অন্যহাত ছুঁয়ে থাকবে রোববারের হৃদয়, জয়যাত্রায় যাও গো, নতুন। হে পাঠক, স্পর্ধায় এই মাথা তোলার ঝুঁকিতে সময় করে একটু উঁকি দিন।”
জন্মদিনের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে রোববার ডট ইন। বয়সে কাঁচা হলেও কলার তুলে সে এখন বলতেই পারে যে, মননশীল পাঠক তার ঘরে এসে দিব্যি উঁকি দিয়ে যান নিয়মিত। প্রতি মাসে লক্ষাধিক পাঠক এসে আদরে ভরিয়ে দেয় তাকে। অতএব লেখক, যাঁরা কিনা রোববার ডট ইন-এর অভিভাবক, তাঁরাও দিব্যি খোশমেজাজে। লেখকসূচি যেন তাই প্রবীণ-নবীনের কফি হাউসের আড্ডা। অরুণ সোম সেখানে বসে শোনান ‘রুশকথা’, শুদ্ধব্রত দেব বলে যান কবিতায় প্রতিরোধের গল্প হলেও সত্যি। আবার একেবারে তরুণ লেখক প্রিয়ক মিত্র কলম তুলে নেন সিনেমার সূত্রে জীবন দেখার অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিতে। রবীন্দ্রনাথকে আধুনিক সময়ের প্রেক্ষিতে চিনিয়ে দেওয়ার কাজটি যেমন নিয়েছেন বিশ্বজিৎ রায়, অন্যদিকে রবীন্দ্রনাথের ছবির বিশ্ব বুঝিয়ে দেওয়ার ভার সুশোভন অধিকারীর। প্রখ্যাত অভিনেতা দেবশঙ্কর হালদারের জীবনের পর্দা যেমন উঠছে কলামের কল্যাণে, তেমনই সনাতন দিন্দা অক্ষরে রচনা করছেন তাঁর শিল্পপ্রতিমা। ময়দানের সবুজ-তোতা যেমন তাঁর গল্প বলছেন, তেমনই রাজর্ষি গঙ্গোপাধ্যায় তুলে আনছেন ক্রীড়াবিশ্বের নিবে যাওয়া তারাদের। অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়ের ‘ঋতু’যাপন থেকে যশোধরা রায়চৌধুরীর মহিলা লেখকদের সায়েন্স ফিকশন; অভীক ঘোষের ‘উপাসনাগৃহ’ থেকে সঞ্জীত চৌধুরীর ‘ফ্রেমকাহিনি’; যে পাঠক বাংলা আর বাংলা সাহিত্য-সংস্কৃতি ভালোবাসে, তিনি প্রেমে না পড়ে আর যান কোথায়! নৃসিংপ্রসাদ ভাদুড়ী, কবীর সুমন, মার্টিন কেম্পশেন, শিলাজিৎ, সোহিনী সরকার, রাহুল বন্দ্যোপাধ্যায়, রঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়, চিন্ময় গুহ, অনিতা অগ্নিহোত্রী থেকে তরুণ প্রজন্মের অর্ক ভাদুড়ী, অম্লানকুসুম চক্রবর্তী, অর্পণ গুপ্ত, কামরুল হাসান মিথুন, রোদ্দুর মিত্র, তন্ময় ভট্টাচার্য, গৌরবকেতন লাহিড়ীর মতো লেখকদের লেখায় বাংলা আধুনিক লেখালিখির নতুন দিগন্তই খুলে গিয়েছে রোববার ডট ইন-এ।
ব্যক্তির অনুভবকে বাদ দিয়ে সাহিত্য হয় না। নিষ্প্রাণ তত্ত্বের কাগুজে গজগজ মগজে আর সেভাবে বিস্ফোরণ ঘটাতে পারে কই! অথচ বাংলা লেখালিখির জগতে আজও যে প্রাণ আর গতি আছে, রোববার ডট ইন-এ প্রকাশিত লেখায় পাঠকের প্রশ্রয়ই সে-কথা নতুন করে মনে করিয়ে দিচ্ছে। পাঠক মিলিয়ে নিয়েছেন প্রথম প্রতিশ্রুতি। সম্ভাবনার সব দরজাই খোলা থাকল আগামী পথচলায়। আপনি সঙ্গী হচ্ছেন তো?