কাছে এল পুজোর ছুটির দিন। যে কটা দিন সব মনখারাপের জ্বর সেরে যায়। সব না-পাওয়া, সমস্ত না-থাকারা লুকিয়ে পড়ে। সবারই। যার আছে, তারও। যার নেই, তারও ঠিক জুটে যায় কিছু না কিছু। সব হাসি এক মুখে মানায় না, সব মুখে হাসি না থাকলে উৎসব ঘনায় না। সবাই যেখানে মেলে, সেখানেই তো উৎসবের মরশুম, তাই না? লিখছেন সরোজ দরবার।
আলোর গায়ে ছায়ার আলপনা কে যে এঁকে দেয় কে জানে! শরতের শরীরে সেই আলোছায়াটুকু দুলে উঠলেই বাতাসে বাতাসে রটে যায় বার্তা- মা আসছেন।
মা তো আসবেনই। এ তো জানা কথা। না না, পঞ্জিকার ঘোলাটে খসখসে পাতা নয়, সে কথা সকলের কানে কানে এসে বলে গেছে পটুয়ার একচিলতে ঘর। সেই কবে থেকেই তো সেখানে মা আসার প্রস্তুতি। এক কামরায় সেজে উঠছে মায়ের সংসার। কুমোরটুলি অনেক দূর, কে জানে কতদূর সেই কলিকাতা গ্রাম, বাঙালির গাঁ-গঞ্জে ওই এক পটুয়ার ঘরই সবেধন কুমোরটুলি। মার্কস বলবেন এ দুনিয়া ভাঙা হ্যাভস আর হ্যাভ নটস-এ। সে কথা সত্যি বটে, তবু উৎসবেরও আছে কিছু নিজস্ব পাঠক্রম। সে হ্যাভস-এর মুখে ফেলে ঝাড়বাতির আলো, আর হ্যাভ নটস-এর গায় বুলিয়ে দেয় শারদীয়া রোদ্দুর। মোদ্দা কথাটুকু এই যে, সামর্থ্যের হেরফের আছে, ছিল, থাকবেই। এ সমাজ কত থাকে ভাঙা, কত রকমের খাঁচায় বন্দি, সে পুরাণ আর নাই-বা ঘাঁটা হল। শুধু ফুটনোটে লেখা থাকে, সেই সমস্ত ভাঙা পথের রাঙা ধুলো উড়িয়েই উৎসব আসে এক অলৌকিক ফেরিওয়ালা হয়ে। ঝুলিতে তার একচিলতে হাসির উপহার। সে হাসি হ্যাভস-এর, হ্যাভস নট-এরও। যে যার নিজের রঙে রাঙানো। সব হাসি এক মুখে মানায় না, সব মুখে হাসি না থাকলে উৎসব ঘনায় না। উৎসব তাই যেন এক দারুণ সাম্যবাদী।
এদিকে ক্লাসরুমের মন আনচান। কাঠের বেঞ্চগুলো যেন ডানা পেলে উড়ে যায়। বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র আশ্বিনের শারদপ্রাতের উৎসবের নান্দীমুখ করে দেওয়ার সেই কতদিন আগে থেকেই তো সনৎ সিংহ গাইছেন, চণ্ডীতলার আটচালাতে কুমোর ঠাকুর গড়ে/ মন বসে কি আর!
সত্যি মন কি আর বসে! পটুয়ার ঘরে সেই খড়ের কাঠামো এতদিনে হয়ে উঠেছে মৃন্ময়ী। ছেলেপুলে সমেত মা যে একটু একটু করে হয়ে উঠেছেন, সে তো দেখা চোখের সামনেই। এবার বাকি শুধু চক্ষুদান। পাশেই সেজে উঠেছে সাদামাটা একখানা মণ্ডপ।
লেখা: সরোজ দরবার
অলংকরণ: সুযোগ বন্দ্যোপাধ্যায়
শুনে নিন পুজোর দিনের বাকি কথা।