৯২ বছরে পা দিলেন সঙ্গীতজগতের স্বনামধন্য তারকা লতা মঙ্গেশকর। তাঁর জন্মদিনে এক অভিনব উপহার দিলেন পরিচালক বিশাল ভরদ্বাজ। সে উপহার যতখানি প্রবাদপ্রতিম গায়িকার জন্য, তাঁর অনুরাগী শ্রোতাদের জন্য হয়তো তার চেয়েও বেশি মূল্যবান। কী উপহার দিলেন খ্যাতনামা পরিচালক?
সুরের দুনিয়ায় তাঁর অবাধ বিচরণ। তাঁর কণ্ঠের জাদুতে মুগ্ধ হয়েছিলেন খোদ জওহরলাল নেহরু-ও। তাঁর গলায় ‘অ্যায় মেরে ওয়াতন কে লোগো’ শুনে নাকি চোখে জল এসেছিল পণ্ডিতজির। তিনি, লতা মঙ্গেশকর। ৯২ বছরে পৌঁছনোর পরেও যাঁর সুরমূর্ছনায় মজে সারা দেশের অসংখ্য ভক্ত। আর তেমন এক ভক্তের কাছ থেকেই এবার জন্মদিনের উপহার পেলেন লতাজি। যা দেখে, থুড়ি শুনে আপ্লুত সকলে।
আরও শুনুন: রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ, মঞ্চে নগ্ন হওয়ার সাহস দেখিয়েছিলেন সাবিত্রী
উপহারটি দিয়েছেন বলিউডের বিখ্যাত পরিচালক বিশাল ভরদ্বাজ। লতা মঙ্গেশকর-এর একটি নতুন গান সবার সামনে নিয়ে এসেছেন তিনি। গানটির গীতিকার আরেক স্বনামধন্য ব্যক্তিত্ব, গুলজার। আর গুলজার-লতার যুগলবন্দির সামনে দাঁড়িয়ে কোনও সঙ্গীতপ্রেমীর কি মুগ্ধ না হয়ে উপায় আছে! গানটির শিরোনাম, ‘ঠিক নহি লাগতা’। নতুন গান, তবে নতুন রেকর্ড হওয়া কোনও গান নয় সেটি। আসলে এই গানটি রেকর্ড হয়েছিল নব্বইয়ের দশকে, কিন্তু কোনও দিন মুক্তি পায়নি সেই রেকর্ড। লতাজিকে ‘নাইটিঙ্গেল অফ ইন্ডিয়া’ সম্বোধন করে নিজের টুইটার পেজে এই নতুন রেকর্ডের হদিশ দিয়েছেন বিশাল ভরদ্বাজ, যেটি নিজের মিউজিক কোম্পানি থেকে রিলিজ করলেন তিনি। তাঁর পরিচালনায় একটি মিউজিক ভিডিওটির আকারে সামনে এসেছে লতাজির সেই হারিয়ে যাওয়া গান। আর তাতে স্থান পেয়েছে লতাজির যৌবনের একগুচ্ছ ছবি। রয়েছে তাঁর জীবনের কিছু চমকপ্রদ গল্পও। তাঁর নামকরণের গল্পটিই ধরা যাক। জন্মের পর তাঁর নাম দেওয়া হয়েছিল হেমা। পরে তাঁর বাবা দীননাথ মঙ্গেশকর, যিনি মারাঠি নাটকের জগতের পরিচিত মুখ ছিলেন, তাঁর লেখা একটি নাটকের চরিত্র লতিকার নাম থেকে মেয়ের নাম দেন লতা। সঙ্গীতসম্রাজ্ঞীর এমনই সব ছবি-গল্পের সমাহারে ভিডিওটি সাজিয়ে তুলেছেন পরিচালক।
আরও শুনুন: গুলজারের জন্মদিনে কবিতার উদযাপন, শুনে নিন তাঁর স্বকণ্ঠে কবিতা
কী করে এই হারিয়ে যাওয়া গান হাতে এল তাঁর? বিশাল জানিয়েছেন, ১০-১২ বছর আগে গানটি অনেক খুঁজেও পাননি তিনি। কিন্তু তিন বছর আগে তাঁর কাছে একটি ফোন আসে সেই স্টুডিও থেকেই, যেখানে গানটি রেকর্ড করা হয়েছিল। স্টুডিওটি তখন বন্ধের মুখে। সেখান থেকে লতাজির অনেক গানের একটি টেপ পেয়ে যান তিনি। আর তার মধ্যে থেকেই উদ্ধার হয় হারিয়ে যাওয়া গানটি।
ষাটের দশকে পুরো এক বছর গান করেননি লতা মঙ্গেশকর। কারণ সুর লাগছিল না চড়া আর খাদে। হাই পিচে গাওয়ার প্রতিশোধ নিয়েছিল গলা। গানের জগতের পরম শ্রদ্ধেয় উস্তাদ আমীর খাঁ সাহেব তাঁকে রীতিমতো তিরস্কারের সুরেই আদেশ করেন আপাতত গান গাওয়া বন্ধ রাখতে। বলেছিলেন, নিজের গলা নষ্ট করে ফেলার কোনোরকম অধিকার নেই তাঁর।
ঈশ্বরপ্রদত্ত সেই কণ্ঠকে সেদিন নষ্ট হতে দেননি লতা মঙ্গেশকর। আর সেইজন্যই তাঁর সুরের মায়ায় আজও আচ্ছন্ন হই আমরা। দু-দশক আগের হারিয়ে যাওয়া গানের টান তাই আজও কমেনি এতটুকুও।