পিকে। ভারতীয় ফুটবলের কিংবদন্তি। যেমন তাঁর বিস্ময় প্রতিভা, তেমনই তাঁর জীবনের বিচিত্র অভিজ্ঞতা। সব মিলিয়ে পিকে যেন নিজেই একটা প্রতিষ্ঠান। যার সামনে দাঁড়িয়ে প্রতিদিন জীবনবোধের হাজারও শিক্ষা নিতে পারি আমরা। সম্প্রতি তাঁকে নিয়েই প্রকাশিত হয়েছে বই, ‘পিকে’। লেখক অর্পণ গুপ্ত। আসুন সেই বইয়ের পাতায় আমরা চোখ রাখি।
সেবার জামশেদপুরের হয়ে একটি প্রদর্শনী ম্যাচ খেলছেন পিকে। উলটোদিকে বিহার অবশিষ্ট একাদশ। তেমন একটা কঠিন ম্যাচ ছিল না। পিকে খেলছিলেনও ভালো। ভালো মানে, সেই ম্যাচে জোড়া গোল করেন পিকে। খেলার একেবারে শেষের দিকে আর-একটা সুযোগ এসে যায় চকিতে। বল নিয়ে দৌড়চ্ছিলেন পিকে। মাথায় তখন হ্যাটট্রিকের নেশা চেপে বসেছে। পাশেই ফাঁকা দাঁড়িয়েছিলেন লেফট ব্যাক। কিন্তু পিকে তাঁকে বল দিলেন না। নিজেই শট নিলেন। দুর্ভাগ্যবশত বল ফিরে এলে বারে লেগে। ম্যাচ জিততে অবশ্য তাতে কোনও সমস্যা হয়নি। পিকে-র দল সেই ম্যাচ জিতেছিল হাসতে হাসতেই। ফলাফল ছিল ৩-০।
আরও শুনুন: Book Review : ‘আমি নকুবাবু’ এক সংগ্রাহকের স্মৃতির কুঠুরি
কিন্তু খেলা শেষ হওয়ার পর ঘটল এক অপ্রত্যাশিত ঘটনা। পিকে-র বাবা সজোরে এক থাপ্পড় মারেন পিকে-কে। কেন? না, তিনি ফুটবলের নিয়ম ভেঙে, দলগত খেলা না খেলে নিজের খেলার কথা ভেবেছিলেন মাত্র।. দৌড়েছিলেন হ্যাটট্রিক করতে। অথচ দলের কথা ভাবলে, আর একটা গোল অবধারিত ছিল। অহং বা একক কৃতিত্বের চিন্তা কখনই যে কাউকে বড় ফুটবলার করতে পারে না, সেদিন এই কথাটিই একেবারে অভাবনীয় কায়দায় বুঝিয়ে দিয়েছিলেন পিকে-র বাবা। আর পিকে পেয়েছিলেন জীবনবোধের অন্য এবং অনন্য এক শিক্ষা। যে শিক্ষা তাঁকে সারাজীবন পথ দেখিয়েছে। পরবর্তী সময়ে যখন তিনি প্রবাদপ্রতিম কোচ, তখনও বোধহয় ভিতরে জাগপ্রদীপের মতোই আলো জ্বেলে রেখেছিল বাবার দেওয়া সেদিনের মন্ত্র। আর তাই নিজের জন্য নয়, দলের জন্য, ফুটবলের জন্য একটা গোটা জীবন উৎসর্গ করে দিতে পেরেছিলেন তিনি। হয়ে উঠেছিলেন কিংবদন্তি।
যে বই থেকে আমরা পিকে-র জীবনের এই গল্পটি পাচ্ছি, সেটির নাম ‘পিকে’। লেখক অর্পণ গুপ্ত খুব মুনশিয়ানার সঙ্গে পিকে-র জীবনকে তুলে এনেছেন। একদিকে রাখা হয়েছে পিকে-র খেলোয়াড়ি জীবন। ফুটবলকে কতটা আত্মস্থ করলে, কতখানি ছক ভাঙা ভাবনা নিয়ে মাঠে নামলে তবে পিকে হওয়া যায় – তা উঠে এসেছে কালানুক্রমিক বিবরণে এবং তথ্যনিষ্ঠ বিশ্লেষণে।
বাকি অংশ শুনে নিন।