একটি অনুষ্ঠানের বদলকে ঘিরে এমত ঘটনা সম্ভবত ভূ-ভারতে নেই। অনেকে বলে থাকেন, এ ঘটনা আসলে জানান দেয় বাঙালি নতুনকে গ্রহণে নারাজ। আবার একই সঙ্গে এও তো সত্যি, যা তার সাংস্কৃতিক চিহ্নস্বরূপ, তাকে যে বাঙালি পরম যত্নে আগলে রাখে, এ ঘটনা তারও তো প্রমাণ।
তিনি বাঙালির ম্যাটিনি আইডল। তাঁর তাকানো, হাসি, বেশভূষা, তাঁর সংলাপ বলার ধরন, বডি ল্যাঙ্গোয়েজ বাঙালিকে দিয়েছে নিজস্ব স্টাইল স্টেটমেট। অভিজাত উত্তরীয়ের মতোই বাঙালি তাঁকে আপন করে জড়িয়ে নিয়েছে তাঁর সাংস্কৃতিক সত্তায়। সেই এক এবং অদ্বিতীয় উত্তমকুমারকেও অন্তত একবার পড়তে হয়েছিল বাঙালির তীব্র প্রত্যাখ্যানের মুখে। বলা যায়, বাঙালি মহানায়ক হেরে গিয়েছিলেন মাত্র একজনের কাছে। তিনি বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র। যাঁর চণ্ডীপাঠেই বাঙালির সেরা পার্বণের বোধন। তাঁর পরিবর্তে এমনকী মহানায়কের কণ্ঠও মেনে নিতে নারাজ ছিল বাঙালি শ্রোতা।
আরও শুনুন: রামায়ণ ছাড়া মহাভারতেও ছিলেন দেবী দুর্গা, কারা পূজা করেছিলেন তাঁর?
‘মহিষাসুরমর্দিনী’। এ কেবল একটি রেডিও অনুষ্ঠান নেই আজ আর, বরং বাঙালি সংস্কৃতির অভিজ্ঞান অঙ্গুরীয়। একটি অনুষ্ঠান কোন মেধাগত উচ্চতায় পৌঁছলে, সামগ্রিক ভাবে একটি জাতির পার্বণের সঙ্গে অঙ্গীভূত হয়ে যায়, তা সহজেই অনুমেয়। আকাশবাণী-র প্রযোজনায় এই অনুষ্ঠান বহু রদবদলের মধ্যে দিয়ে গিয়েছে। বর্তমানে আমরা যে রেকর্ডিংটি শুনতে পাই, সেটির রূপদান করেছিলেন বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র, বাণীকুমার, পঙ্কজ কুমার মল্লিকের মতো ব্যক্তিত্ব। প্রত্যাশিত ভাবেই বাঙালির কাছে এই অনুষ্ঠান একটি অন্য তাৎপর্য বহন করে আনে। মহালয়ার দিন অনুষ্ঠানটির সম্প্রচার হয়। সেদিন পিতৃপক্ষের অবসান। পিতৃপুরুষের উদ্দেশে এদিন জলদান অর্থাৎ তর্পণের রীতি আছে। আর ঠিক তাঁর পরদিন থেকেই শুরু হচ্ছে দেবীপক্ষ। এই মহালয়া যেন সেই দুই মুহূর্তের সন্ধিলগ্ন। কেউ কেউ বলেন, পিতৃলোক ও মনুষ্যলোক ব্রহ্মার নির্দেশে এই সময় কাছাকাছি চলে আসে বলেই বৃহৎ ও মহান আলয় তৈরি হয়। আবার কেউ কেউ বলেন, ঠিক এর পর থেকেই দেবীপক্ষ শুরু হচ্ছে, অর্থাৎ মা দুর্গাই এখানে সেই আলয় বা আশ্রয়। শাস্ত্রগত ব্যাখ্যায় এই তিথির গুরুত্বের সঙ্গেই কালক্রমে মিলেমিশে এক হয়ে গিয়েছে ভোরের অনুষ্ঠানের ওই চণ্ডীপাঠ। যে নিষ্ঠা, শৃঙ্খলা মেনে অনুষ্ঠানটি তৈরি করা হত, তার গল্প পরে বাঙালি যত শুনেছে তত অবাক হয়েছে। একটি অনুষ্ঠানকে মানুষের মনের মণিকোঠায় পৌঁছে দিতে গেলে যে কী মাত্রায় অনুশীলন, পরিশ্রম প্রয়োজন তা জানিয়েছে সেই নেপথ্য গল্পগুলি। একবার সেই অনুষ্ঠানে সম্প্রচারের অভ্যাসে বদল আনা হল, আর তাতেই যত বিপত্তি।
বাকি অংশ শুনে নিন।