অনুপ ঘোষালের সতেজ গলা আর স্বতঃস্ফূর্ত গানের চলনে ঠিক গুপিকেই খুঁজে পেয়েছিলেন সত্যজিৎ। তপন সিনহার ‘সাগিনা মাহাতো’ ছবিতেও তিনি গান গাওয়ার ডাক পেয়েছিলেন। তাও খোদ দিলীপ কুমারের লিপে। ৭৮ বছর বয়সে প্রয়াত হলেন গায়ক এবং প্রাক্তন তৃণমূল বিধায়ক অনুপ ঘোষাল।
গুপি গাইন বাঘা বাইন-এর গল্পকে পর্দায় আনার তোড়জোড় শুরু করেছেন সত্যজিৎ রায়। গুপি গাইতে ভালবাসে অথচ গাইতে পারে না, আর সেই গান নিয়েই তো গল্প শুরু। সুতরাং কেবল নতুন মুখ নয়, নতুন গলার সন্ধানও করছিলেন পরিচালক। আর সেইখানেই মুশকিল আসান হয়ে দেখা দিয়েছিলেন অনুপ ঘোষাল। বিজয়া রায় পরবর্তী কালে ‘আমাদের কথা’-য় লিখেছেন, তপেন চট্টোপাধ্যায় আর অনুপ ঘোষালের যুগলবন্দি কীভাবে গুপিকে বইয়ের পাতা থেকে বাস্তব রূপ দিয়েছিল। তাঁর মতে, গায়কীর তুলনা টানলে হয়তো সেসময়ের নামী শিল্পীদের তুলনায় অনুপ ঘোষাল তেমন এগিয়ে ছিলেন না। কিন্তু তাঁর সতেজ গলা আর স্বতঃস্ফূর্ত গানের চলনে ঠিক গুপিকেই খুঁজে পেয়েছিলেন সত্যজিৎ। আবার পরবর্তীতে ‘হীরক রাজার দেশে’ ছবিতে বাউলের গান গাওয়ার জন্য অমর পালের খোঁজও এনে দিয়েছিলেন অনুপ-ই।
আরও শুনুন: ‘নিজে ছবি ডিরেক্ট করছেন না কেন?’ সিনেমাপাড়ার তরুণকে পরিচালনায় আসার ডাক উত্তমকুমারের
অনুপ ঘোষালের সঙ্গে গুপির নাম এক হয়ে আছে বটে, তবে কেবল সত্যজিতের ছবিতেই তিনি কাজ করেছিলেন এমনটাও তো নয়। তপন সিনহার ‘সাগিনা মাহাতো’ ছবিতেও তিনি গান গাওয়ার ডাক পেয়েছিলেন। তাও খোদ দিলীপ কুমারের লিপে। ‘ছোটি সি পঞ্ছী ছোট্ট ঠোঁটে রে, মিষ্টি ফুলের মধু লুটে রে’, এই জনপ্রিয় গানটি গেয়েছিলেন অনুপ ঘোষাল। পরে এই গানের জন্যই পুরস্কারও এসেছিল তাঁর ঝুলিতে। আবার অন্যধারার ছবির বাইরে তথাকথিত কমার্শিয়াল ধারার ‘ছদ্মবেশী’ ছবিতেও গান গেয়েছেন অনুপ। উত্তমকুমারের সঙ্গে নায়িকার ঘর ছাড়ার পর ড্রাইভার চরিত্রে জহর রায় যে চুটকি গোছের গানটি গেয়ে ওঠেন, সেই গান গেয়েছিলেন অনুপ ঘোষালই। আবার বলিউড ছবিতেও ‘মাসুম’-এ নাসিরুদ্দিন শাহ, ‘শিসে কি ঘর মে’-রাজ বব্বর অনুপ ঘোষালের গানে লিপ দিয়েছেন।
আরও শুনুন: ‘আপনার ফ্লোরে থাকা দরকার’ জ্বরে কাতর তরুণ মজুমদারের পাশে দাঁড়ালেন স্বয়ং সুচিত্রা
আসলে চলে যাওয়া তো শাশ্বত। মানুষকে কখনও না কখনও তার জায়গা ছেড়ে যেতেই হয়। কাজের ক্ষেত্রে, জীবনের ক্ষেত্রেও। কিন্তু স্মৃতিতে বেঁচে থাকে তার কাজটুকুই। যেমন রয়ে গেলেন অনুপ ঘোষালও।