কালি-কলমের জন্য বাঙালির যে কতখানি আকুলতা, তা আক্ষরিক অর্থেই হাতে-কলমে প্রমাণ করে দিয়েছে ‘সুলেখা’। অনেকেই বলছেন, সুলেখা তো নেহাত কালি নয়, বাঙালির আবেগেরই নামান্তর। যেমন মোহনবাগান কিংবা ভিম নাগের সন্দেশ। সেরকমই সুলেখা কালিও বাঙালির সত্তার সঙ্গে মিশে গিয়েছে।
বইমেলার মাঠে স্বমহিমায় ‘ফিরিঙ্গি কালি’! ভাবছেন তো, বইয়ের সঙ্গে কালীপুজোর কী সম্পর্ক যে এখানে ফিরিঙ্গি কালীর দেখা মিলবে! আসলে এ যেন সেই ‘নামের ফেরে মানুষ ফেরে’র মতোই ব্যাপার। আসলে মা কালী বা আরাধ্য দেবতা কালীর কথা বলা হচ্ছে না। বলা হচ্ছে লেখার কালই বা ইঙ্কের কথা। ঐতিহ্যবাহী সংস্থা ‘সুলেখা’র স্টলের এই ‘ফিরিঙ্গী কালি’ এবারের বইমেলার অন্যতম আকর্ষণ।
আরও শুনুন: ধুতির সঙ্গে আর শার্ট নয়, পাঞ্জাবিই পোশাক! আকস্মিক ঘটনায় সিদ্ধান্ত শঙ্খ ঘোষের
কালি-কলমের জন্য বাঙালির যে কতখানি আকুলতা, তা আক্ষরিক অর্থেই হাতে-কলমে প্রমাণ করে দিয়েছে ‘সুলেখা’। অনেকেই বলছেন, সুলেখা তো নেহাত কালি নয়, বাঙালির আবেগেরই নামান্তর। যেমন মোহনবাগান কিংবা ভিম নাগের সন্দেশ। সেরকমই সুলেখা কালিও বাঙালির সত্তার সঙ্গে মিশে গিয়েছে। অবশ্য মধ্যে অনেক উত্থান-পতন আছে। একসময় বাঙালি অনেক খুঁজেও সুলেখার সন্ধান পায়নি সেভাবে। তবে সে-পর্ব অতীত। সংস্থার বর্তমান সদস্যদের অক্লান্ত পরিশ্রমে ফিরেছে সুলেখা-মায়া। বইমেলায় প্রিয় কালির স্টল দেখে নস্ট্যালজিক হয়ে পড়ছেন প্রবীণরা। ছোটবেলার সেই পরীক্ষা দেওয়ার দিনকালে ফিরে গিয়েছেন তাঁরা। তবে তরুণদের মধ্যেও উৎসাহ কম নয়। ডিজিটাল যুগ তো কলমবিমুখ। আঙুল চলে মোবাইলের ভার্চুয়াল কি-বোর্ডে। কিন্তু সে অপবাদ গায়ে না মেখে বরং তরুণ প্রজন্ম আঙুলে মেখে নিচ্ছে হরেক কালির রং।
আরও শুনুন: বাঙালির প্রিয় মিষ্টি ল্যাংচা, কিন্তু কেন তার এমন নাম?
অন্যান্য অনেক কালির সঙ্গে এবারে সুলেখা এনেছে ‘ফিরিঙ্গী কালি’। কিন্তু এরকম নামকরণের কারণটাই বা কী? কলমপ্রেমী তথা সুলেখা পরিবারেরই ঘনিষ্ঠ সদস্য শুভব্রত গঙ্গোপাধ্যায় শোনালেন সেই ইতিহাস। বললেন, “সে অনেককাল আগের কথা। তখন সুলেখার কর্ণধার যাঁরা, তাঁরা একজন কালি তৈরি করতেন, অন্যজন সাইকেলে করে ঘুরে ঘুরে কালি বিক্রি করতেন। তাঁরা সকলেই মহাত্মা গান্ধীর আদর্শে অনুপ্রাণীত ছিলেন। বাড়ির মহিলারা, যাঁরা স্বাধীনতা সংগ্রামের জন্য জেলও গিয়েছেন, তাঁরাও এই কালি তৈরির কাজে অংশ নিয়েছিলেন। সেই সময় অর্থাৎ ১৯৩৪-৩৫ সাল নাগাদ বাংলাদেশের রাজশাহীতে এক মেমসাহেব কালি তৈরির কথা জানতে পেরে এই মহিলাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করেন। তাঁর নাম কেউই জানতেন না। তবে তাঁকে সকলে ‘মোম মেমসাহেব’ বলে ডাকতেন। সেই মেমসাহেব ছবি আঁকতেন, আর সেই কারণেই বিশেষ ধরনের কালি তৈরি করে দেওয়ার অনুরোধ করেন তিনি। সে কালি তখন তৈরি হয়েছিল কিনা তা নিশ্চিত করে বলা যায় না। তবে সুলেখার কর্ণধারের খাতায় ওই বিশেষ রকমের কালির ছ-টি ফর্মুলা পাওয়া গিয়েছিল। সেই ফর্মুলা ধরেই বর্তমানে তৈরি করা হয়েছে বিশেষ কালি, যা রাখা আছে আলতা থাকে যেরকম বোতলে, সেরকম দেখতে দোয়াতে। এরই নাম দেওয়া হয়েছে ‘ফিরিঙ্গী কালি’। যা এবারে নজর কেড়েছে বইমেলায় আগত বইপ্রেমীদের।”
কালি-কলমের কাছে ফিরছে বাঙালি। কালি-কলমও ফিরছে বাঙালির কাছে। ছোটরা যাতে কালি ও ঝরনা কলম ব্যবহার করে, সে ব্যাপারে বিশেষ উদ্যোগী সুলেখা কর্তৃপক্ষ। আর তাঁদের উদ্যোগ যে অনেকটাই সফল, এবার সুলেখার স্টলে ছোটদের ভিড় ও আগ্রহ, বুঝিয়ে দিয়েছে সে কথাই।