প্রাচীনকালে রাজারাজড়ার দরবারে যথেষ্ট কদর ছিল এই খাবারের। মহানায়ক উত্তমকুমার থেকে আম বাঙালির সান্ধ্য ভোজনের অন্যতম হিট আইটেম শিঙাড়া। শহর থেকে মফসসলের অলিতে গলিতে যে শিঙাড়া ছাড়া আমাদের সকাল সন্ধে বিরস। সেই খাবার আদতে না বাংলার না ভারতীয়!
শিঙাড়া। বাঙালির আবেগের সঙ্গে সমার্থক হয়ে আছে এই তেকোনা খাবারটি। শীতকালে ফুলকপি দেওয়া শিঙাড়া। কুচোকুচো আলু, আদা আর বাদাম দিয়ে বাঙালি শিঙাড়া। অথবা মিষ্টির দোকানে ক্ষীরের পুর দেওয়া শিঙাড়া। বাঙালির শিঙাড়ার সঙ্গে অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক। মহানায়কের শিঙাড়া প্রীতির কথা অনেকেই জানেন। নিয়মিত শ্রীহরির ফুলকপির শিঙাড়া ছাড়া উত্তমকুমারের চলতই না। সে সময়ে ডায়েট নিয়ে অত কেউ মাথা ঘামাতেন না।সান্ধ্য অনুষ্ঠানের আসরের খাবার হিসেবে হোক বা আড্ডার স্ন্যাক্স হিসেবে। পাত্র-পাত্রী দেখতে গেলে বাঙালির চিরকালীন খাবার যাই হোক, তাঁর সঙ্গে শিঙাড়া থাকবেই থাকবে। পাত্র বা পাত্রী পছন্দ হোক বা নাই হোক চেনা বুলি ছিল, ‘চা শিঙাড়া না খেয়ে যাবেন না কিন্তু! আমাদের এখানের দোকানটি কিন্তু খাসা শিঙাড়া বানায়।’ বাঙালি দোকানে যেমন শিঙাড়া কুঁচো কুঁচো করে আলু কেটে, বাদাম, আদা, ভাজা মশলা দিয়ে তরকারি করে, সেই তরকারির পুর ময়দার লেচির মধ্যে ভরে তৈরি হয়। আবার হিন্দুস্তানি শিঙাড়ার পুর তৈরির ধরন খানিক আলাদা। সেখানে আলু সেদ্ধ করে চটকে, তাতে নানাবিধ মশলা সহযোগে তৈরি হয় পুর। শুধু এখনই নয়, রসরাজ অমৃতলাল বসু, ১৮৯৬ সালে একটি গানে লেখেন, ‘তপত কচুরি ঘিয়েতে ভাজে/ পুরত শিঙাড়া আলুয়া সাজে/ করব গরম তেয়াগি লাজে/ শাশুড়ি লেয়াও লেয়াও লো’।
আরও শুনুন – থর মরুভূমির বুকে স্কুল, অথচ নেই কোনও Air Conditioner!
বাঙালির অ্যাসিড এবং ইমোশন, দুইয়ের সঙ্গে জুড়ে থাকা এই খাবারটির জন্ম কিন্তু বাংলায় বা ভারতে নয়। ইংরেজি বা হিন্দি শব্দ সামোসা শব্দটির উৎপত্তি, মধ্যপ্রাচ্যের পার্সি শব্দ সানবুসাগ থেকে। শিঙাড়ার সুখ্যাতি বা খাদ্য বন্দনা মেলে নবম শতাব্দীর পার্সি কবি ইশাক-আল-মাওয়াসিলি’র লেখায়। দশম থেকে ত্রয়োদশ শতাব্দীর আরবি খাবারের বইয়ে শিঙাড়ার রেসিপি থাকতই, থাকত। তবে সেখানে নাম হিসেবে ছিল সানবুসাক এবং সানবুসাজ। যদিও এই সব নামগুলোই পার্সি শব্দ সানবুসাগের উচ্চারণভেদ, অথবা এসেছে সানবুসাগ থেকেই।
ইরানের ব্যবসায়ীরা ভারতে এসেছিলেন ত্রয়োদশ কিংবা চতুর্দশ শতাব্দীতে। ব্যাবসার প্রয়োজনে তাঁদের ঘুরতে হত প্রচুর। দীর্ঘ যাত্রার পর রাতে আশ্রয় নিতেন সরাইখানায়। সেখানেই পরদিন খাওয়ার জন্য তৈরি করতেন সানবুসাগ বা শিঙাড়া। মাংসের পুর ভরা সেই শিঙাড়া ভাজা হত বেশ কড়া করে। তাতে নাকি দীর্ঘ সময় ভালো থাকত। সেই খাবার শালপাতার তবকে মুড়ে ঘোড়ার পিঠে ঝুলিয়ে নিয়ে তাঁরা পথ চলতেন। দুপুরের খাবার হিসেবে অথবা রাস্তায় খিদে নিবারণের জন্য তাঁরা খেতেন এই খাবার। … বাকিটা শুনে নিন প্লে-বাটন ক্লিক করে।