একে বাঙালি, তায় মেয়ে। তার মানেই সে হবে নরমসরম লতার মতো, এমনটাই ধারণা করেন অনেকে। সেই ভাবনাকেই ভেঙেচুরে দিয়েছিলেন ঠাকুরবাড়ির এই মেয়ে। একা হাতে জমিদারি সামলানোর দক্ষতা তাঁকে এনে দিয়েছিল ‘মুকুটহীন রানি’-র খেতাব। শুনে নিন তাঁর কথা।
জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি বললে অনিবার্যভাবেই সবার প্রথমে মনে আসে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাম। কিন্তু এই বাড়ি যে আরও কত মনে রাখার মতো মানুষ উপহার দিয়েছে এই দেশকে, তার হিসেব রাখা ভার। আসলে বোধহয় এই বাড়ির জলহাওয়াতেই ছিল স্বাতন্ত্র্যের বীজ। তাই এ বাড়ি থেকে অনেক দূরে গিয়েও সেই স্বাতন্ত্র্য বজায় রাখতে পেরেছিলেন ঠাকুরবাড়ির এক মেয়ে, সুদক্ষিণা দেবী। না, সাহিত্য কিংবা সংস্কৃতি জগতে তিনি কোনও নিজস্ব অবদান রেখেছেন, এমনটা নয়। কিন্তু তবুও তিনি আলাদা। সেকালের মেয়েদের তুলনায় আলাদা তো বটেই, আলাদা ঠাকুরবাড়ির মেয়েদের থেকেও।
আরও শুনুন: প্রথম বাঙালি মহিলা হিসেবে লিখেছিলেন আত্মজীবনী, জানেন কে তিনি?
সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথ তাঁর কাকা। রবীন্দ্রনাথের সেজদাদা হেমেন্দ্রনাথ ঠাকুরের মেয়ে সুদক্ষিণা ওরফে পূর্ণিমা। ঠাকুরবাড়ির নিজস্ব সাংস্কৃতিক পরিসরেই তাঁর বেড়ে ওঠা। ভাইবোনেদের মতো কলম চালানো বাড়ির নিজস্ব পত্রিকা ‘পুণ্য’-র পাতায়। তারপরই অবশ্য এই পরিমণ্ডল থেকে অনেকটা দূরে সরে যেতে হয় তাঁকে। রাজরানির মতো রূপ যে মেয়ের, তার জন্য অভিভাবকেরা পাত্র খুঁজেছিলেন রাজার ঘরেই। বিয়ে হয় উত্তরপ্রদেশের হরদই জেলার জমিদার, আইসিএস অফিসার পণ্ডিত জ্বালাপ্রসাদ পান্ডের সঙ্গে। বাংলা তথা ঠাকুরবাড়ির সংস্কৃতি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলেন বটে সুদক্ষিণা, তবে স্বামী হাতে ধরে শেখালেন ঘোড়ায় চড়া, বন্দুক চালানো, জমিদারির কাজ, সবকিছুই। জ্বালাপ্রসাদ কি জানতেন যে তাঁর আয়ু ফুরিয়ে এসেছে! কে জানে! তিনি যখন মারা যান, তখন সুদক্ষিণার বয়স মাত্র সাতাশ বছর। বিদেশ বিভুঁইয়ে, অন্য ভাষা, অন্য গোষ্ঠীর মানুষজনের মধ্যে সম্পূর্ণ একা হয়ে পড়লেন ঠাকুরবাড়ির মেয়েটি।
আরও শুনুন: কাকা রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে কার্টুন এঁকেছিলেন গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুর
কিন্তু গল্পটা বদলে গেল এর পর থেকেই। অভিভাবকহীন জমিদারির দিকে নজর পড়েছিল অনেকেরই। জমিদারি বাজেয়াপ্ত করে নেওয়ার সুযোগ খুঁজছিল ব্রিটিশ সরকারও। সকলের মতলবের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ালেন একা মেয়েটি। ঘোড়ায় চড়ে নিজেই বেরিয়ে পড়লেন জমিদারি পরিদর্শনে। প্রজাদের দুঃখকষ্টের কথা শোনা, অন্যায় অবিচার কঠোর হাতে দমন করা, সব ভার তুলে নিলেন নিজের হাতেই। আর তাঁর সহায় হল কারা? দুর্ধর্ষ একদল ডাকাত। তাদের নিয়েই নিজস্ব রক্ষীবাহিনী গড়ে তুলেছিলেন তিনি। এরপর আর তাঁর কাছে ঘেঁষবে কে! শোনা যায় তাঁর প্রেমে পড়েছিলেন এক তরুণ ইংরেজ অফিসার, তবে গল্প এগোয়নি। আর রাজত্বের বাকি ইংরেজ অফিসারেরা রীতিমতো তটস্থ থাকতেন রানি সুদক্ষিণার দাপটে।
বাকি অংশ শুনে নিন।