গিরিজা দেবীর গান সিনেমায় ব্যবহার করেছিলেন সত্যজিৎ রায়। কিন্তু প্রবাদপ্রতিম এই গায়িকার থেকে নাকি তার আগে কোনও অনুমতি নেননি তিনি। জানতে পেরে কী প্রতিক্রিয়া হয়েছিল গায়িকার? শুনে নেওয়া যাক।
ধ্রুপদি সংগীতের জগতে অবিস্মরণীয় এক নাম গিরিজা দেবী। ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ থেকে ওস্তাদ আলি আকবর খাঁ, আবার পণ্ডিত রবিশঙ্কর থেকে ওস্তাদ বিলায়েত খান, গানের সূত্রে সকলের সঙ্গেই একান্ত ব্যক্তিগত সম্পর্ক ছিল তাঁর। যদিও রবিশঙ্কর কিংবা বিলায়েত খানের মতো সিনে-দুনিয়ায় আসার কথা তিনি কখনোই ভাবেননি। বাবা এবং স্বামীর বারণ মেনে রুপোলি জগৎ থেকে নিজেকে সযত্নেই সরিয়ে রেখেছিলেন অসামান্য প্রতিভাশালিনী এই গায়িকা। কিন্তু সে প্রতিশ্রুতি ভেঙে গিয়েছিল তাঁর অজান্তেই। কথা রাখতে না পারার জন্য অবশ্য তাঁকে দায়ী করা চলে না। এর জন্য দায়ী ছিলেন আরেক প্রবাদপ্রতিম চিত্র পরিচালক, যাঁর নাম সত্যজিৎ রায়।
আরও শুনুন: নিজে ব্রহ্মের উপাসক, অথচ দেবী লক্ষ্মীকে নিয়ে গান লিখেছিলেন খোদ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
কী হয়েছিল ঠিক? তাহলে খুলেই বলা যাক।
শোনা যায়, গিরিজা দেবীর প্রথম যৌবনেই তাঁকে ‘ঝনক ঝনক পায়েল বাজে’ ছবিতে গান গাওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন বলিউডের নামী পরিচালক ভি শান্তারামজি। কিন্তু সে প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছিলেন শিল্পী। অথচ তার অনেক পরে সত্যজিৎ রায় যখন তাঁর পিতামহ উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর গল্প অবলম্বনে ‘গুপী গাইন বাঘা বাইন’ ছবিতে হাত দিয়েছেন, তাঁর ভারী মনে ধরে গেল গিরিজা দেবীরই ‘বরসন লাগি বদরিয়া’ গানটি। মানানসই গানটিকে নিজের সিনেমায় পছন্দমতো ব্যবহার করেও বসলেন পরিচালক। তবে মাত্র এক লাইন। কিন্তু এক লাইন হলেও, গানটি সিনেমায় ব্যবহারের আগে নাকি শিল্পীর অনুমতিই নেননি পরিচালক সত্যজিৎ রায়। ছবি মুক্তি পাওয়ার পর সে খবর কানে আসে গিরিজা দেবীর।
তবে এ নিয়ে বিশেষ রাগ ক্ষোভ পুষে রাখেননি শিল্পী। এ প্রসঙ্গে গায়িকা জানিয়েছিলেন, পরে একসময় দিল্লি এয়ারপোর্টে সত্যজিতের সঙ্গে দেখা হয়েছিল তাঁর। বিনা অনুমতিতে গানের পঙ্ক্তিটি ব্যবহার করা নিয়ে মৃদু অনুযোগও করেছিলেন গিরিজা দেবী। সত্যজিৎ পালটা হেসে বলেছিলেন, “কী করব, খুব ভাল লাগল যে। আপনাকে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। কিন্তু গানটা খুব দরকার ছিল। আাপনি আসবেন আমাদের বাড়ি।” গিরিজা দেবী এরপর খানিক প্রশ্রয়ের সুরেই বলেন, কী আর বলব, এই সব বলার পর!
আরও শুনুন: কেবল ধনসম্পদের দেবী নন, বাংলায় শস্যের দেবী রূপেও এককালে পূজা পেতেন লক্ষ্মী
আসলে, প্রায় নিঃসম্বল অবস্থায় যিনি ‘পথের পাঁচালী’-র মতো ছবি করার সাহস দেখাতে পারেন, সিনে-শিল্পের প্রতি তাঁর হৃদয়ের টান প্রশ্নাতীত। শিল্পের জন্য যে কোনওরকম ঝুঁকি নিতে যে তিনি পিছপা হবেন না, সে কথাও বলাই বাহুল্য। শিল্পের প্রতি এক শিল্পীর এই অমোঘ টানকে নিশ্চয়ই চিনে নিয়েছিলেন ধ্রুপদি সংগীতজগতের প্রবাদপ্রতিম শিল্পী গিরিজা দেবী। সে কারণেই হয়তো, এই বিষয়টি নিয়ে আর ক্ষোভ জমিয়ে রাখেননি তিনি।