একসময় শীত পড়লেই তার অনিবার্য জুড়িদার হয়ে আসত সার্কাসের তাঁবু। বাঘের খেলা দেখার জন্য ভিড় জমাত আট থেকে আশি। কিন্তু বাংলায় সার্কাসের এত রমরমা শুরু হয়েছিল কার হাত ধরে, সে কথা জানেন? আসুন, শুনে নেওয়া যাক সেই সাহসী মানুষটির কথা।
হাতি, বাঘ, সিংহের মতো ভয়ংকর সব বন্যপ্রাণীদের নিয়ে খেলা, আর তা দেখাবে কিনা মেয়েরা? তাও বাঙালি মেয়ে? এও কখনও সম্ভব? আজ্ঞে হ্যাঁ, এমন ঘটনাই সম্ভব হয়েছিল এক অকুতোভয় বাঙালির হাত ধরে। সে আবার এমন এক সময়, যখন মেয়েদের ঘরের বাইরে পা রাখাই বারণ। এমনকি গঙ্গাস্নানে করতে চাইলে পালকি সুদ্ধু জলে চুবিয়ে আনা হয়। অথচ সেই উনিশ শতকের বাংলাতেই নাকি সার্কাসে খেলা দেখাতেন সুশীলাসুন্দরী, যাঁকে ভারতের প্রথম মহিলা সার্কাস খেলোয়াড় বলা হয়। ছিলেন তাঁর বোন কুমুদিনীও। বাঙালি মেয়ে মৃন্ময়ী এখানে হাতির পিঠে বসে বাঘের খেলা দেখাতেন। আর পিরামিড অ্যাক্ট, প্যারালাল বার, হরাইজন্টাল বার ও ঘোড়ায় চড়ে খেলা দেখানোর দায়িত্ব নিয়েছিলেন খোদ সার্কাস মালিক প্রিয়নাথ বোস।
আরও শুনুন: কথায় বলে ‘চালাও পানসি বেলঘরিয়া’… কেন নৌকা চড়ে বেলঘরিয়াতেই যেতেন সেকালের মানুষ?
সার্কাস ব্যাপারটা ঠিক কেমন, বাঙালি তা জেনেছিল ইংরেজদের সূত্র ধরেই। বিদেশি শাসকদের দৌলতে পাশ্চাত্য শিক্ষার পাশাপাশি যে বিলিতি বিনোদনের ঢেউও এদেশে এসে পৌঁছেছিল, তার প্রভাবে এদেশেও অল্পবিস্তর সার্কাসের চর্চা শুরু হয়। কিন্তু তা নিছক বিনোদন ছিল না, বরং তার সঙ্গে জড়িয়ে ছিল জাতীয়তাবাদের ভাবনা। যাকে বিদেশি শাসকদের চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেওয়া বললেও বোধহয় ভুল হবে না। বাঙালির সার্কাসে হাতেখড়ি হয়েছিল হিন্দুমেলার প্রতিষ্ঠাতা নবগোপাল মিত্রের ‘ন্যাশনাল সার্কাস’-এর মাধ্যমে। এই ‘ন্যাশনাল’ নামকরণ থেকেই স্পষ্ট হয়ে যায়, অনেকেই একে বিলিতি সার্কাসের উলটোদিকে জাতীয় সার্কাস হিসেবে দেখতে চেয়েছিলেন। আর এই জাতীয়তাবোধকেই ধারণ করে প্রথম বাঙালির সম্পূর্ণ নিজস্ব সার্কাস গড়ে তোলেন যে মানুষটি, তাঁর নাম প্রিয়নাথ বোস।
আরও শুনুন: মুক্তিযুদ্ধের দরুন পাওয়া গেল ORS, বিশ শতকের সেরা আবিষ্কারের কৃতিত্ব তিন বাঙালির
নবগোপাল মিত্রের সার্কাসে মূলত বিভিন্ন ধরনের জিমন্যাস্টিকসের খেলা দেখানো হত, আর জন্তুজানোয়ার বলতে ছিল কয়েকটি রোগাসোগা ঘোড়া। তাঁর জামাই রাজেন্দ্রলাল সিংহ যে ‘গ্রেট ইন্ডিয়ান সার্কাস’ খোলেন, সেখানে আবার মূল পরিচালক থেকে শুরু করে অধিকাংশ খেলোয়াড়ই ছিলেন বিদেশি। কিন্তু মালিক এবং পরিচালক থেকে সমস্ত খেলোয়াড়ই ভারতীয় হওয়ায় প্রিয়নাথের তৈরি ‘প্রোফেসর বোস’স গ্রেট বেঙ্গল সার্কাস’ টেক্কা দিয়েছিল বিদেশি সার্কাসকে।
শুনে নিন বাকি অংশ।