নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর নামটি ভারতে উচ্চারিত হয় পরম শ্রদ্ধার সঙ্গে। কিন্তু তাঁর ব্যক্তিগত জীবন কি কেবল গাম্ভীর্যে ভরা? সে কথা বোধহয় সত্যি নয়। আসুন, শুনে নেওয়া যাক তাঁর জীবনের এক অজানা গল্প।
দেশ ছেড়ে যাওয়ার পর অজ্ঞাতবাসের দিনগুলিতেই বিয়ে করেছিলেন নেতাজি। সহধর্মিণী হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন অনীতা শেঙ্কলকে। যদিও এই বিয়ের খবর সত্যি না মিথ্যে, তা নিয়ে বিতর্কও দানা বেঁধেছে একাধিকবার। আসলে অল্পবয়স থেকেই বিয়েতে অনীহা ছিল সুভাষের, এমন দাবি করেছেন তাঁর কোনও কোনও জীবনীকার। বিয়ে প্রসঙ্গে সুভাষের মতামত কেমন ছিল, তা জানা যায় বাসন্তী দেবীর বক্তব্য থেকেও। বাসন্তী দেবী দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের স্ত্রী, যাঁকে ‘মা’ বলে ডাকতেন সুভাষ। কী বলেছিলেন তিনি? শুনে নেওয়া যাক সে কথা।
আরও শুনুন: হাতিতে চড়ে দেখান বাঘের খেলা, দেশের প্রথম মহিলা সার্কাস খেলোয়াড় এক বাঙালি সাহসিনীই
সুভাষ তখন সুদর্শন তরুণ। দুর্দান্ত বাগ্মী। কংগ্রেসের তেজি নেতা। দেশবন্ধুর ডান হাত। দেশবন্ধু কলকাতার প্রথম মেয়র হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার পরেই ক্যালকাটা মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশনের চিফ এগজিকিউটিভ অফিসার হয়েছেন সুভাষ। এই পরিস্থিতিতে এলিজিবল ব্যাচেলর, অর্থাৎ যোগ্য পাত্রদের তালিকার প্রথম দিকেই যে তাঁর নাম থাকবে, সে কি আর বলার অপেক্ষা রাখে! তাঁর সঙ্গে মেয়ের বিয়ের সম্বন্ধ নিয়ে দাশ দম্পতির দরবারে হাজির হতেন অনেকেই। একবার তেমনই এসেছিলেন একজন। কংগ্রেসের তিলক তহবিলে এক লক্ষ টাকা দান করবেন তিনি, তবে শর্ত একটাই। সুভাষকে জামাই হিসেবে পেতে চান তিনি।
আরও শুনুন: স্বদেশী আন্দোলনই প্রেরণা, বাঙালির ব্যবসায় জোয়ার এনেছিল সুরেন্দ্রমোহনের ‘ডাকব্যাক’
চিত্তরঞ্জন দাশ তখন কংগ্রেসের অন্যতম শীর্ষ নেতা। কিন্তু শিষ্যের সঙ্গে মশকরা করার এমন সুবর্ণ সুযোগ ছাড়েননি তিনিও। বাড়িতে জরুরি তলব করেন তাঁকে। হন্তদন্ত হয়ে সুভাষ এসে হাজির। তাঁকে অনুদানের খবর জানান দেশবন্ধু। দেশের কাজে তখন নিয়মিতই টাকার দরকার। ফলে সুভাষ যথারীতি উচ্ছ্বসিত। এরপরই আসল কথাটি ভাঙেন চিত্তরঞ্জন। বলেন, টাকা পাওয়ার আগে ছোট্ট একটা সমস্যা আছে। সুভাষ বিয়ে করলেই সেই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। আকাশ থেকে পড়েন সুভাষ। সারাদিনের পরিশ্রমের পর ব্যতিব্যস্ত হয়ে এসে এমন ঠাট্টা যে তাঁর মোটেই পছন্দ হয়নি, সে কথা বুঝিয়ে দিতেও কসুর করেননি তিনি।
অবশ্য এই সময়ে রেগে গেলেও বাসন্তী দেবীর প্রশ্নের উত্তরে স্পষ্ট উত্তর দিয়েছিলেন সুভাষ। বিয়ের ব্যাপারে তাঁর কী মত, এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি নাকি জানিয়েছিলেন, বিয়ে না করার মতো কোনও সিদ্ধান্ত নেই তাঁর। পরবর্তীকালে অনীতা শেঙ্কলের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হওয়া বোধহয় সেই কথারই সাক্ষ্য দিয়েছিল।