এককালে জামাইষষ্ঠী মানেই ছিল সিনেমা দেখার দিন। শ্বশুরবাড়ির সকলকে নিয়ে সিনেমা দেখার উদ্যোগ করতে হত নতুন জামাইকেই। কিন্তু জানেন কি, এই উৎসবের সঙ্গে জড়িয়ে আছে এক সিনেমার গল্পও। যে সিনেমার নাম ‘জামাইষষ্ঠী’। আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
শ্বশুরবাড়িতে মেয়ের যাতে কোনও অনাদর না ঘটে, সেজন্যই বাড়িতে ডেকে জামাইকে ভাল করে তোয়াজ করা। আদর আপ্যায়নে যাতে কোনও ত্রুটি না থাকে, সেজন্য কাঁটা হয়ে থাকেন প্রতিটি মানুষ। বাজার থেকে বেছে বেছে সেরা মাছ, মরশুমের তাজা ফল, দামি মিষ্টি- কী ধরে দেওয়া হয় না জামাইয়ের সামনে! তেমনই উদ্যোগ নেওয়ার কথা ছিল এ বাড়িতেও। কিন্তু ঘটল ঠিক তার উলটো ঘটনা। দেখা গেল, খোদ জামাইকে জামাইষষ্ঠীর দিন শ্বশুরবাড়ি থেকে বের করে দেওয়া হচ্ছে। আর এই কীর্তি অন্য কারও নয়, খোদ শ্বশুরমশাইয়ের। আসলে জামাইষষ্ঠীর দিন অনিচ্ছা সত্ত্বেও জামাইকে নেমন্তন্ন করেছিলেন শ্বশুর কুবের। আর বেচারা জামাই শ্বশুরবাড়িতে পা দিতেই শরীর খারাপের দোহাই দিয়ে তাকে বের করে দেন তিনি। হ্যাঁ, কুবের নামের এই ব্যক্তি যাকে বলে সার্থকনামা। টাকার লেখাজোকা নেই, অথচ তিনি হাড়কিপটে। সুদখোরও বটে। শাশুড়ি ইন্দ্রাণী সারাদিন স্বামীর মুখঝামটা খেয়ে চলেন। মেয়ে সরোজ। জামাই শ্রীধর রীতিমতো শান্ত, লাজুক প্রকৃতির। আর তার ভালমানুষির সুযোগ নিয়েই এহেন কাণ্ড ঘটান শ্বশুরমশাই।
আরও শুনুন: ঠকাতে হবে নতুন জামাইকে! জামাইষষ্ঠী উপলক্ষেই বাঙালির পাতে এল ‘জলভরা’
কী ভাবছেন, এমন আবার ঘটে নাকি? আজ্ঞে হ্যাঁ, এমনটাই ঘটেছিল এক সিনেমায়। যার নাম ‘জামাইষষ্ঠী’। বাংলা ভাষায় তৈরি হওয়া প্রথম সবাক চলচ্চিত্র এটিই। ১৯৩১ সালের ১১ এপ্রিল মুক্তি পেয়েছিল এই ছবিটি। ছবির চিত্রনাট্য লেখা, পরিচালনার পাশাপাশি এই ছবিতে অভিনয়ও করেছিলেন অমর চৌধুরী।
আসলে ভিতরে ভিতরে একটা চাপা লড়াই চলছিল অনেকদিন থেকেই। বোম্বের ইম্পেরিয়াল মুভিটোন আর কলকাতার ম্যাডানের মধ্যে। ম্যাডান তখন ভারতে সিনেমার সবচেয়ে বড়ো নাম। আগে গড়ের মাঠে তাঁবু খাটিয়ে বিলিতি সিনেমা দেখাতেন ম্যাডানের কর্ণধার। পরে এলফিনস্টোন থিয়েটার কিনে নিজেই সিনেমা বানাতে শুরু করেন। এদিকে হলিউডে টকি এসে গিয়েছে ১৯২৮ সালেই। একই পথে হাঁটতে চাইলেন ভারতের সিনেমা নির্মাতারা। একদিকে আর্দশির ইরানি বেছে নিলেন রাজা রানি নিয়ে এক পৌরাণিক গল্প। অন্যদিকে ম্যাডান স্টুডিওর অমর চৌধুরী নিজেই লিখলেন এক স্ল্যাপস্টিক কমেডি। নায়ক কুবেরের ভূমিকায় অভিনয় করলেন তিনি নিজে, তাঁর স্ত্রীর ভূমিকায় মিস গোলাপ আর শাশুড়ি রাণীসুন্দরী দেবী। ছবিতে যে ৯টি গান ছিল তার প্রত্যেকটির গীতিকার অমর চৌধুরী। গানে সুর ও কণ্ঠ দিলেন ক্ষীরোদগোপাল মুখোপাধ্যায়।
আরও শুনুন: ভূরিভোজে সন্তুষ্ট করতে হবে জামাইকে… কোথা থেকে এল এই জামাইষষ্ঠীর রীতি?
এদিকে ১৯৩১-এর মার্চে মুক্তি পেল ‘আলম আরা’। পৃথ্বীরাজ কাপুর অভিনীত এই ছবিই ভারতের প্রথম টকি। তাই প্রতিযোগিতা থেকে যাতে পিছিয়ে পড়তে না হয়, সেই ভয়ে মাত্র দুই হপ্তায় ‘জামাইষষ্ঠী’-র কাজ শেষ করে দেওয়া হল। এপ্রিলে ক্রাউন হলে মুক্তি পেল এই ছবি। আর বাঙালির চিরাচরিত আচারটির হাত ধরেই শুরু হল প্রথম বাংলা টকির যাত্রা।