বঙ্গভঙ্গের প্রতিবাদে সারা বাংলা জুড়ে পালিত হয়েছিল ‘অরন্ধন’। সে কথা আমরা সবাই জানি। কিন্তু জানেন কি, প্রতি বছর নিয়ম করে অরন্ধন পালিত হয় বাংলার অনেক ঘরে? দেশপ্রেমের তাগিদে নয়, এ নিছকই লৌকিক এক আচার। এক দেবতার পুজোর দিনে এক লৌকিক দেবীর আরাধনা। আসুন, শুনে নেওয়া যাক সে গল্প।
অলংকরণ: সুযোগ বন্দ্যোপাধ্যায়
ইংরেজি ক্যালেন্ডারে সেপ্টেম্বরের ১৭ তারিখ মানেই বিশ্বকর্মা পুজো। বছরের পর বছর যায়, কিন্তু এই দিনের খুব একটা নড়চড় হয় না। দেবশিল্পী বিশ্বকর্মার পুজো বলে কথা! কলে কারখানায় অফিসে কাছারিতে মহা সমারোহে চলে তাঁর পুজোর আয়োজন। আকাশ ছেয়ে যায় রংবেরঙের ঘুড়িতে। আর এই সব কোলাহলের আড়ালে অন্য এক ঠাকুরের ঘট পাতা হয় বাংলায় কয়েকটি ঘরে। মা মনসার পুজো। সে পুজোর আয়োজন অবশ্য বেশ অন্যরকম। তাতে লেগে আছে ঘরোয়া আচারের ছাপ। সেদিন মাটিতে পুঁতে দেওয়া হয় মনসা গাছের ডাল। পুজো জন্য তুলে আনা হয় কাছাকাছি সরোবরে ফুটে থাকা শালুক ফুল। ভাদ্রের গ্রাম বাংলায় এ ফুলের দেখা মেলে প্রায় সর্বত্রই। তাই এই ফুলেই পুজো হয় মা মনসার। আর ঘটটিকে ঘিরে থাকে মাটি দিয়ে বানানো আটটি সাপ। অষ্টনাগের প্রতিকৃতি। হ্যাঁ, বিশ্বকর্মা পুজোর দিনেই বাংলার ঘরে ঘরে আছে মনসা পুজোর রেওয়াজ।
আরও শুনুন: Hilsa: ইলিশ মাছকে নাকি সেকালে ভাবা হত ‘নিরামিষ’! কেন জানেন?
এই দিনটিরই সঙ্গেই জড়িয়ে আছে বাংলার আর এক সংস্কৃতি- রান্নাপুজো। সারা বছর যে উনুনে রান্না হয়, এক অর্থে তারও পুজো এই সময়। বা বলা যায় উনুনের বিশ্রাম। তাই মনসা পুজোর দিন উনুন জ্বালান না বাংলার মহিলারা। একটা দিন অরন্ধন। তাই আগের দিনই উনুন ধুয়ে মুছে নিকিয়ে ফেলা হয় নতুন করে। কোথাও কোথাও আবার তৈরি করে নেওয়া নতুন মাটির উনুন। তারপর তাতে রান্না চাপে। এর আয়োজন অবশ্য চলে গোটা ভাদ্র মাস জুড়েই। ঘরের ধুলো-ময়লা ঝেড়ে, মাটির দেওয়াল নিকিয়ে ঝকঝকে তকতকে করে তোলা হয়। পেড়ে আনা হয় সম্বচ্ছরকার তুলে রাখা পিতলের বাসনকোসন। তারপর মাসের শেষের এই লগ্নে আসে রান্নাপুজোর মুহূর্ত। এ একান্তই বাংলার মেয়েদের নিজস্ব পুজো। দিনভর তাই চলে কুটনো কাটা বাটা। সন্ধেয় স্নান সেরে, উনুন পুজো করে শুরু হয় রান্না। সারা রাত ধরেই চলে রান্নাবান্না। ভোরের আলো যখন ফুটছে তখন রান্নার পালা শেষ হলে, সদ্য রান্না করা সেই খাবার উৎসর্গ করা হয় দেবতার প্রতি।
বাকি অংশ শুনে নিন প্লে-বাটন ক্লিক করে।