বিষ্ণুপুরের ‘রাবণ কাটা’ উৎসবের সূচনা হয় মল্লরাজা রঘুনাথ সিং-এর আমলে। রামভক্ত বৈষ্ণবদের এই উৎসবে হয় বিশেষ ধরনের নাচ। স্থানীয় লোকশিল্পীদের এই নাচ বিষ্ণুপুরের অন্যতম ঐতিহ্য। এবার দ্বাদশীতেও বের হবে শোভযাত্রা। সব শেষে ‘রাবণ কাটা’-র পালা।
শরতের শিউলি, কাশ যে বার্তা এনেছিল, যা শুরু হয়েছিল মহালয়া তিথিতে, দশমীর সন্ধ্যায় প্রতিমা নিরঞ্জনে ঘটে সেই উৎসবের সমাপ্তি। মন খারাপ হয় বাঙালির। অশুভ শক্তির বিনাশে গোটা ভারতে এদিনই হয় রাবণ দহন। যাকে আমরা বলি ‘দশেরা’। মল্লরাজাদের রাজধানী বিষ্ণুপুরে কিন্তু দশমীতে শারদোৎসবের শেষ হয়েও হয় না শেষ। বরং এই দিন থেকেই বহুকালের ঐতিহ্য মেনে ‘রাবণ কাটা’ উৎসবে মেতে ওঠেন স্থানীয়রা।
আরও শুনুন: শুধুই খেলনা নয়, ছাপোষা মানুষের প্রতিবাদের প্রতীক হল তালপাতার সেপাই
‘রাবণ কাটা’ আসলে এক রকমের রাবণ বধ। রীতি মেনে দশমীতে শুরু হয় এই উৎসব। শেষ হয় দ্বাদশীর রাতে। রাবণ ‘কাটা’র বা বধের পর। ইতিহাস বলছে, প্রাচীন এই উৎসব শুরু করেন রামায়েৎ বৈষ্ণব গোষ্ঠী অর্থাৎ রামভক্ত বৈষ্ণবরা। তখন বিষ্ণপুরের রাজা ছিলেন মল্লরাজা রঘুনাথ সিং। কাটানধার হল বাঁকুড়ার অতি প্রাচীন এক শহর। এই শহরের রামায়েৎ বৈষ্ণবদের রঘুনাথজিউর মন্দির প্রাঙ্গন থেকে আজও বের হয় ‘রাবণ কাটা’র বিশেষ শোভাযাত্রা। শোভাযাত্রার অন্যতম আকর্ষণ হল বাঁকুড়ার লোকশিল্পীদের ‘রাবণ কাটা’ নাচ।
আরও শুনুন: মৃত্যু হয় হুদুড় দুর্গার, দুর্গাপুজোর সময় আজও শোকপালন করেন ‘মহিষাসুরের বংশধররা’
পুরাতাত্ত্বিকদের মতে, রাম-রাবণের যুদ্ধে কুম্ভকর্ণ ও ইন্দ্রজিৎকে আগে বধ করা হয়েছিল। এরপর দ্বাদশীর রাতে রাবণকে বধ করেন শ্রীরামচন্দ্র। রাবণকে কেটে খণ্ড-বিখণ্ড করা হয় বলেই বিষ্ণুপুরের এই উৎসবের নাম ‘রাবণ কাটা’ উৎসব। রীতি মেনে দশমীতে রঘুনাথ জিউর পুজোর পর কুম্ভকর্ণ বধ হয় বিষ্ণুপুরের এই উৎসবে। একাদশীর সন্ধ্যায় ইন্দ্রজিৎ-কে বধ করা হয়। আর দ্বাদশীর রাতে ওই মন্দির প্রাঙ্গনেই রাবণ বধের মাধ্যমে ঘটে উৎসবের সমাপ্তি।
বাকি অংশ শুনে নিন।