বেঁচে থাকার জন্য জরুরি অন্নজল। এমনটাই আমরা জানি। কিন্তু কেউ কেউ পারেন একে ভুল প্রমাণ করতে। এক ভারতীয় সাধু নাকি একদিন দুদিন নয়, টানা ৭৬ বছর একফোঁটা জল, এক কণা খাবার না খেয়েই বেঁচেছিলেন। প্রায় অবিশ্বাস্য হলেও সাধু এবং তাঁর ভক্তরা এমনটাই দাবি করেন। এবং এই ঘটনা জও যেন রহস্যে আবৃত। আদতে নাম প্রহ্লাদ জনি হলেও ভক্তেরা তাঁকে চুনরিওয়ালে মাতাজি বলেই বেশি চিনতেন। শুনে নেওয়া যাক সেই সাধুর গল্প!
ছিয়াত্তরটা বছর! অন্নজল স্পর্শ করেননি তিনি। ভাবতে পারেন! তা সত্ত্বেও বেঁচেছিলেন বহাল তবিয়তেই। শরীরের প্রত্যেকটা অঙ্গপ্রত্যঙ্গই ছিল এক্কেবারে ফিট। ভাবছেন তো কী করে হতে পারে এমন আশ্চর্য অলৌকিক কাণ্ড!
সাধু প্রহ্লাদ জনি কিন্তু মনে করতেন সবটাই ঈশ্বরের কৃপা। না হলে প্রায় আট-টা দশক না খেয়ে না দেয়ে কেউ থাকতে পারে নাকি! গুজরাটের মানুষ কিন্তু চুনরিওয়ালে মাতাজি নামেই বেশি চিনত এই সাধুকে। ১৯২৯ সালে গুজরাটের মহাসেনা জেলায় জন্ম হয় প্রহ্লাদের। মাত্র সাত বছর বয়সেই ঘর ছেড়ে জঙ্গলে গিয়ে থাকতে শুরু করেন প্রহ্লাদ। বয়স বারো পেরোতে না পেরোতেই দেবী অম্বার ভক্ত হয়ে ওঠেন। তখন থেকেই মহিলা ভক্তদের মতো সাজপোশাক ধারণ করা শুরু করেন। তাই তাঁর নাম হয় চুনরিওয়ালে মাতা।
আরও শুনুন: দেবী জগদ্ধাত্রীকে স্বপ্নে দেখেন নবাবের কারাগারে বন্দি রাজা কৃষ্ণচন্দ্র
এই চুনরিওয়ালে মাতাকে দেখতে দূর দূর থেকে জড়ো হতেন দর্শনার্থীরা। দীর্ঘদিন ধরে অন্ন-জল ত্যাগ করে কী করে বেঁচে আছেন এই সাধু! দর্শনার্থীদের মধ্যে হইচই পড়ে যেত তাঁর দেখা পেতে।
অনেক ভক্তই বিশ্বাস করতেন, দেবী অম্বাই তাঁকে প্রয়োজনীয় জল সরবরাহ করেন সবার অলক্ষ্যে। ১৯৪০ থেকে জল এবং খাবারদাবার খাওয়া একেবারে বন্ধ করে দেন প্রহ্লাদ। হঠাৎ কেন এই সিদ্ধান্ত? যোগী প্রহ্লাদই সে কথা জানিয়েছিলেন গল্পে গল্পে। তখন নবরাত্রি চলছে। হঠাৎ মাঝরাত্তিরে ঘুম ভেঙে যায় প্রহ্লাদ জনির। স্বপ্ন না ঘোর, কিছুই বুঝতে পারেননি। দেখতে পান, তাঁকে দর্শন দিয়েছেন তিন দেবী। লক্ষ্মী, সরস্বতী ও কালী। তাঁরাই প্রহ্লাদকে খাওয়া-দাওয়া ছাড়ার নির্দেশ দেন। না খেলে বাঁচবেন কী করে? দেবীদের প্রশ্ন করেন প্রহ্লাদ। দেবীরা একে একে তাঁর ঠোঁটে আঙুল রাখেন এবং জানান, আর কোনও দিনও প্রহ্লাদকে খাওয়াদাওয়ার কথা ভাবতে হবে না। মৃত্যু পর্যন্ত আর কখনও সত্যিই খাবার নিয়ে তাঁকে কোনও চিন্তা করতে হয়নি। না খেয়েই জীবিত ছিলেন তিনি।
আরও শুনুন: কেরানি থেকে হলেন সাধক কবি, মা কালী কি সত্যিই কৃপা করেছিলেন রামপ্রসাদ সেনকে?
বিজ্ঞানী থেকে গবেষক, চিকিৎসকেরা সহজে বিশ্বাস করতে চাননি যোগী প্রহ্লাদের এই আশ্চর্য ক্ষমতার কথা। এর কোনও বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যাও পাচ্ছিলেন না তাঁরা। বিস্তর পরীক্ষানিরিক্ষাও করেন তাঁরা সাধু প্রহ্লাদকে নিয়ে। ড. সুধীর শাহ নামে এক চিকিৎসক ২০০৩ সালে আমেদাবাদের একটি হাসপাতালে তাঁকে দশ দিন কড়া নজরে রাখেন। একটি বন্ধ ঘরে তাঁকে চিকিৎসকদের কড়া নজরদারিতে আটকে রাখা হয়। এমনকি বসানো হয় সিসিটিভিও। তবে এই দশদিন না প্রহ্লাদকে কিছু খেতে দেখা গিয়েছে, না বর্জ্য ত্যাগ করতে।
বাকি অংশ শুনে নিন।