একটি ছোট্ট ইঁদুর। দেখতে ছোট্ট, কিন্তু সে যে কী করতে পারে তা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন একটা গোটা দেশের বিজ্ঞানীমহল। মারণ ভাইরাস করোনাকে সমূলে বিনাশ করার পথে অনেকখানি সাফল্য অর্জন করেছিল সে দেশটি। কিন্তু সেই সাফল্যকেই প্রশ্নচিহ্নের মুখে ফেলে দিয়েছে ইঁদুরটির কাণ্ডকারখানা। কী করেছে সে? শুনে নিন সে কথা।
তাইওয়ানের সেরা গবেষণাগারে কাজ করতে গিয়ে করোনা ভাইরাসের ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত হলেন এক তরুণী। সে দেশের অ্যাকাডেমিকা সিনিকা ল্যাবরেটরির জিনোমিক রিসার্চ সেন্টারে কর্মরত ছিলেন তিনি। তাইওয়ানের মোট ১৮টি বায়োসেফটি লেভেল-থ্রি ল্যাবরেটরির মধ্যে নিরাপত্তার মাপকাঠিতে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে এই গবেষণাগার। ফলে সেখানে করোনা ভাইরাসের প্রবেশ বেশ চমকে দেওয়ার মতোই খবর। তা ছাড়া গোটা তাইওয়ানেই এক মাসের বেশি সময় ধরে স্থানীয় কোনও মানুষ করোনা আক্রান্ত হননি। নভেম্বর মাসের ৫ তারিখে দ্বীপরাষ্ট্রটিতে শেষ কেসের খবর পাওয়া গিয়েছিল। এদিকে এই তরুণীও সাম্প্রতিক কালে ওই অঞ্চল ছেড়ে অন্য কোথাও বেড়াতে যাননি, অর্থাৎ সাম্প্রতিক অতীতে তাঁর কোনও ট্রাভেল হিস্ট্রি নেই। তার থেকেও বড় কথা, সম্প্রতিই টিকাকরণ হয়েছে তাঁর। মডার্না ভ্যাকসিনের দুটি ডোজ নিয়েছেন ওই তরুণী। তাহলে কোথা থেকে তাঁর শরীরে বাসা বাঁধল এই মারণ ভাইরাস? সেই প্রশ্নই উঠেছে সকলের মনে।
আরও শুনুন: কোন ব্লাড গ্রুপের মানুষদের করোনায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি?
এমনিতেও কোনও হাই-সিকিউরিটি ল্যাবরেটরিতে যখন একজন কর্মী সংক্রামক রোগে আক্রান্ত হন, তখন তা নিয়ে মাথা ঘামানো ছাড়া গতি নেই। কারণ এই জাতীয় গবেষণাগারে গবেষণার জন্য প্রয়োজনীয় নমুনা, রাসায়নিক ইত্যাদিকে যথাযথভাবে সংরক্ষণ করার জন্য চূড়ান্ত সচেতনতা অবলম্বন করা হয়। যে কোনও রকম সংক্রমণ এই জিনিসগুলিকে নষ্ট করে ফেলতে পারে, তাই এত কড়াকড়ি। আর সেই দুর্ভেদ্য পাহারা পেরিয়ে কোনও রোগের প্রবেশ মানেই কোথাও ফাঁক রয়ে গিয়েছে। ফলে সকলেই উঠেপড়ে লাগেন সেই ফাঁকটি খুঁজে বের করার কাজে। এবার সেই উদ্যোগ নিতেই সামনে এল সংক্রমণের আসল কারণ।
আরও শুনুন: ৪৫ বছর পর মিলল গাড়ির হদিশ, ভেতরে ছড়ানো মানুষের হাড়… এ কোন রহস্য?
জানা গিয়েছে, গবেষণাগারের একটি ইঁদুরের কামড়ই সম্ভবত দায়ী ওই তরুণীর করোনা সংক্রমণের জন্য। না, বাদুড়ের বদলে ইঁদুরের থেকে করোনা হচ্ছে আজকাল, ব্যাপারটা এমন নয়। আসলে ওই ইঁদুরটিও ছিল করোনা আক্রান্ত। তার কামড় খাওয়ার ফলেই তরুণীর ওই দশা বলেই মনে করছেন অনেকে। আর এই ধারণা সত্যি হলে কেবল ওই তরুণী নন, বলতে হবে গোটা দেশের করোনা দূরীকরণে যে সাফল্য, তার পথেই বড়সড় কাঁটা তুলে দিয়েছে একটি ছোট্ট ইঁদুর। তবে এ বিষয়ে বিস্তারিত গবেষণা করার আগে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে আসতে নারাজ বিজ্ঞানীরা। ভবিষ্যতে কি ইঁদুরও হয়ে উঠবে করোনা ভাইরাসের বাহক? সে উত্তর জানতে আরও অপেক্ষা করা ছাড়া উপায় নেই।