দেখতে সাদা-কালো তুলোর বলের মতো। সিনেমা, কার্টুন থেকে সফট-টয়- ল্যাদখোর, আয়েশি এই চারপেয়ের কিন্তু জনপ্রিয়তার অভাব নেই। ঠিক ধরেছেন, আমরা কথা বলছি জায়েন্ট পান্ডাকে নিয়ে। ইউটিউব খুললেও দেখতে পাওয়া যায় এদের হরেক মজাদার কাণ্ডকারখানা। সেসব দেখে দেদার মজা পায় নেটবিশ্ব। আপনি কি জানেন, এই সমস্ত পান্ডার সত্ত্ব আসলে চিনের। ঠিকই শুনেছেন। পান্ডা আপনার যতই প্রিয় হোক না কেন, এ আদতে চিনেরই সম্পত্তি। কেন? শুনে নিন।
পান্ডাদের বাস যেখানেই হোক না কেন, আর আপনি তাকে যতই ভালোবাসুন না কেন, আসলে কিন্তু তারা চিনেরই সম্পত্তি। সম্ভবত পৃথিবীতে জীবিত সবকটি পান্ডার আইনি সত্ত্বই চিনের। হ্যাঁ, তেমনটাই নাকি সত্যি। অর্থাৎ এই হিসাবে চিন ছাড়া অন্য দেশগুলিতে যতগুলি পান্ডা আছে, তারা সবাই সেই দেশের কটা দিনের অতিথি মাত্র। এমনটাই জানা গিয়েছে একটি রিপোর্টে।
আদতে দক্ষিণ-মধ্য চিনেরই বাসিন্দা এই প্রাণীটি। ওয়ার্ল্ড ওয়াইল্ডলাইফ ফান্ডের দেওয়া শেষ তথ্য অনুযায়ী, দুনিয়া জুড়ে জীবিত পান্ডা রয়েছে দু-হাজারটির কাছাকাছি। তার মধ্যে চিড়িয়াখানা, স্যাংচুয়ারি ও ব্রিডিং সেন্টারে রয়েছে সাড়ে তিনশো-চারশোর মতো। ওই রিপোর্ট অনুযায়ী, আর এই সবকটি পান্ডাই কিন্তু রয়েছে আদতে চিনের মালিকানায়। এমনকি অন্য দেশে পান্ডার ছানা জন্মালেও, সেগুলোও চলে যায় চিনেরই আইনি সত্ত্বের আওতায়।
আরও শুনুন: পৃথিবীর সব পিঁপড়ে জোট বাঁধলে ওজনে সমান হবে সব মানুষের! দাবি বিজ্ঞানীদের
ভাবছেন তো এমনটা কী করে হতে পারে?
এর পিছনে অবশ্য রয়েছে কূটনৈতিক কারণ। আর তা অনেক অনেক বছরের পুরনো কাহিনি। ৬৮৫ খ্রিষ্টাব্দের ঘটনা সেটা। চিনের তাং সাম্রাজ্যের রাজা উ জেতিয়ান একজোড়া পান্ডা উপহার দিয়েছিলেন জাপানের রাজা তেনমুকে।
এই উপহার দেওয়ার ভাবনা আবার মাথাচাড়া দেয় ১৯৫০ সালে। চিনা সরকার অন্যান্য দেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক স্থাপন করতে পান্ডা পাঠানো শুরু করে। চিন সফরে গিয়ে এইভাবেই দুটো জায়েন্ট পান্ডা দেশে নিয়ে ফিরেছিলেন প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট নিক্সন। কূটনৈতিক সম্পর্ক মজবুত করতে এটা ছিল আমেরিকাকে চিনের উপহার। আর তারপর থেকেই চিনের কাছে পান্ডার দাবি জানাতে থাকে অন্যান্য দেশও।
আরও শুনুন: শহর জুড়ে লকডাউন, রাস্তার দখল নিল বিরাট কাঁকড়া-বাহিনী
১৯৮৪-তে অবশ্য সেই নীতি পালটে ফেলে চিন। উপহার পাঠানোর বদলে এ বার অন্য দেশগুলোকে জায়েন্ট পান্ডা ঋণ হিসেবে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিল তারা। আর এই ব্যাপারটি চিনের ‘পান্ডা ডিপ্লোমেসি’ নামে পরিচিত। এইভাবেই গোটা বিশ্বেই প্রায় ছড়িয়ে আছে চিনের পান্ডা।
চিনের বাইরে অন্য যে কোনও দেশের ক্ষেত্রে একমাত্র চিড়িয়াখানাতেই পান্ডা রাখার অনুমতি রয়েছে। তা-ও আবার মাত্র দশ বছরের জন্য। রিপোর্ট অনুযায়ী, পান্ডাদের একটি নির্দিষ্ট বয়সের পরে তাদের আবার চিনের কাছে ফেরত দিয়ে আসাটাই নাকি নিয়ম। ফলে ১৯৮৪ সালের পরে জন্মানো চিনের বাইরে থাকা সবকটি পান্ডাই কার্যত এখনও চিনের সম্পত্তি। আমরা তাদের ধার করে কটা দিন আমাদের কাছে রেখেছি মাত্র!