“আমি কলকাতার তলায় থাকি।” – উৎপল দত্তের টিনের তলোয়ার নাটকের সেই বিখ্যাত উক্তি। কথক ময়লাঘাঁটা এক মেথর। তা এই কলকাতার বা এই ভারতবর্ষের তলায় থাকা মানুষদের কথা কতটা ভেবেছি আমরা? যাঁরা নিজেদের প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে নেমে পড়েন সেপটিক ট্যাঙ্কের তলায়। তুলে আনেন আমাদেরই বর্জ্য। পরিষ্কার রাখেন শহরকে, জীবনকে। বেশির ভাগ সময়েই নোংরা-ময়লা আর বিষ-বাতাসের মধ্যেই শেষ হয়ে যায় তাঁদের জীবন। যাঁদের হয় না, তাঁদের জীবন মৃত্যুর চেয়েও ভয়াবহ। স্বাধীনতার পরে এতগুলো বছর কেটে গেলেও বদলায়নি ছবিটা। এ বার ওঁদের এই গুরুভার লাঘব করতেই এগিয়ে আইআইটি মাদ্রাজের একদল গবেষক। বানিয়ে ফেলেছেন আশ্চর্য এক রোবট। শুনে নিন, সেই রোবটের কথা।
সরকারি তথ্য বলছে, ২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বিগত পাঁচ বছরে ভারতবর্ষে অন্তত ৩৪০ জন সাফাইকর্মীর মৃত্যু হয়েছে।
কটাই বা টাকা মেলে পারিশ্রমিক! তবু তার জন্যেই প্রাণ হতে করে সাফাইকর্মীদের নামতে হয় সেপটিক ট্যাঙ্কে। দীর্ঘদিন ধরে মাটির তলায় বর্জ্য জমে থাকায় সেখানে বিভিন্ন রকমের প্রাণঘাতী বিষাক্ত গ্যাস তৈরি হয়। আর অক্সিজেন তো প্রায় থাকে না বললেই চলে। ভূগর্ভস্থ বর্জ্য পরিষ্কার করতে নেমে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই অক্সিজেনের অভাবে মৃত্যু হয় সাফাই-শ্রমিকদের। তাঁকে উদ্ধার করতে নেমে প্রাণ যায় বাকিদেরও। এই ধারাই চলে আসছে।
আরও শুনুন: এক দানা নুনের মতোই খুদে ক্যামেরা, আশ্চর্য আবিষ্কারে দুনিয়া বদলের ভাবনা বিজ্ঞানীদের
২০১৩ সালে এই ধরনের সাফাইকর্মীদের জন্য পুনর্বাসন আইনও আনা হয়েছে। তবে সেসব কতটা বাস্তবায়িত হয়, তা বলা কঠিন। কবে মুক্তি পাবেন এই অমানবিক কাজের হাত থেকে সাফাই-শ্রমিকেরা! তা বলা কঠিন। তবে তাঁদের ভার লাঘব করতে প্রযুক্তির সাহায্য নেওয়ার কথা ভেবেছেন আইআইটি মাদ্রাজের একদল গবেষক। তাঁরা বানিয়ে ফেলেছেন, এক ধরনের অভিনব রোবট। যাঁর নাম তাঁরা দিয়েছেন হোমোসেপ (HomoSEP)। এই রোবটই সাহায্য করবে সাফাইকর্মীদের। প্রায় তিন বছর লেগেছে রোবটটিকে বানাতে। সাফাইকর্মীদের সঙ্গেও আলোচনা করে, তাঁদের সুবিধা-অসুবিধার কথা মাথায় রেখেই এই রোবট বানিয়েছেন গবেষকরা।
আরও শুনুন: কয়লার বদলে মানুষের মল ব্যবহার হবে জ্বালানির কাজে, দাবি বিজ্ঞানীদের
অনেকটা মাছের মতোই দেখতে এই রোবট, যা সোজা চলে যাবে সেপটিক ট্যাঙ্কের ভিতরে। হোমোসেপে তাঁরা জুড়ে দিয়েছেন বেশ কিছু ব্লেড, যা ঘুরতে থাকে এবং ছাতার মতো খুলতে এবং বন্ধ হতে পারে। সাধারণত সেপটিক ট্যাঙ্কের মুখের অংশটি ছোট হলেও ট্যাঙ্কের ভিতরের অংশটি বেশ খানিকটা চওড়া হয়। সেপটিক ট্যাঙ্কটির নিচের দিকে বর্জ্যগুলি জমে শক্ত কাদামাটির মতো আকার নেয়। সেগুলোকে টুকরো করে তার পরে সাকশন করে বের করে আনতে হয়। ঘুরন্ত ব্লেডগুলি ঠিক এই কাজটাই করবে।
বাকি অংশ শুনে নিন।