একেই বলে রোল রিভার্সাল! লোকে দেখে ভাববে বিয়ের মণ্ডপে বর এল বুঝি! তারপরেই ভাল করে দেখে ধরা যাবে, এ তো কনে! কিন্তু কেমন করে ঘটতে পারে এমন ঘটনা? উঁহু, ঘটবে নয়, ঘটে গিয়েছে। শুনে নিন সে কথাই।
ভারতীয় বিয়ের প্রচলিত রীতিনীতি এক এক রাজ্যে এক একরকম। উত্তর ভারতের রাজ্যগুলিতে বর বিয়ে করতে আসে ঘোড়ায় চড়ে। পরনে থাকে জমকালো শেরওয়ানি, মাথায় পাগড়ি, কোমরে তরোয়ালও ঝোলে ক্ষেত্রবিশেষে। আর লেহেঙ্গা-গয়নায় সেজে উঠে কনে মণ্ডপে অপেক্ষা করে লজ্জানত মুখে। কেমন হবে যদি এই চেনা ছবিটাই বদলে যায়, বলা ভাল, ঠিক বিপরীত হয়ে যায়?
আরও শুনুন: ইংল্যান্ডের রাজমুকুটের মণি নাকি অভিশপ্ত! বহু দুর্ঘটনার সাক্ষী এই রত্ন
সেই কাজটাই করেছেন রাজস্থানের এক মেয়ে কৃতিকা সাইনি। শেরওয়ানি পরে, পাগড়ি মাথায়, কোমরে তরোয়াল ঝুলিয়ে, সোজা ঘোড়ায় চড়ে বিয়ের মণ্ডপে হাজির হয়েছেন তিনি। সেই শেরওয়ানিটি আবার তাঁর নিজের হাতে বানানো। আর এই ঘটনার সাক্ষী থেকেছেন রাজস্থানের শিকার জেলার রানোলি গ্রামের সব লোক। বিবাহ-পূর্ব এক প্রথাকে এই সাজেই পালন করেছেন কৃতিকা। যে প্রথার নাম ‘বানদোরি’। পরিবারের লোকের ইচ্ছাতেই বরের মতো সাজপোশাক করে এই আচার পালন করেছেন তিনি। কৃতিকার বাবা জানিয়েছেন, মেয়েকে বড় করে তোলার সময় তাকে কোনোভাবেই বঞ্চিত করেননি তাঁরা। একটি পুত্রসন্তান যা যা সুযোগ পায়, সেভাবেই মেয়েকে তাঁরা মানুষ করেছেন। তাই মেয়ের বিয়ের সময়েও পাত্রপক্ষের মতো শোভাযাত্রা করার শখ ছিল তাঁর। কনেকে এমন সাজে সাজিয়ে ওই পরিবারের লোক আসলে লিঙ্গসাম্যের বার্তাই দিতে চেয়েছেন। ছেলে এবং মেয়ের মধ্যে বিভেদ না করে তাদের যে সমান সুযোগসুবিধা দেওয়া উচিত, এই বক্তব্যই প্রকাশ করতে চেয়েছেন তাঁরা। উল্লেখ্য, বাগদান পর্বে দেওয়া ১ লাখ টাকা পণ প্রত্যাখ্যান করেছেন পাত্রও। পাত্র এবং পাত্রী উভয়েই শিক্ষিত এবং সুপ্রতিষ্ঠিত। পাত্র পেশায় অ্যাকাউন্ট্যান্ট। পাত্রী জয়পুর থেকে ফ্যাশন ডিজাইনিংয়ের কোর্স করেছেন। স্কাউটিংয়েও একাধিক পদক অর্জন করেছেন তিনি।
আরও শুনুন: নিজের জন্মের জন্য খোদ চিকিৎসককে কাঠগড়ায় তুলে আদালতে তরুণী
কৃতিকার আগে একইভাবে ‘বানদোরি’ প্রথা পালন করেছিলেন রাজস্থানেরই আরেক মেয়ে। তিনি আইআইটির স্নাতক, নেহা খিচার। বরের সাজে ঘোড়ায় চড়ে মণ্ডপে এসেছিলেন তিনিও।
রানাদের দেশ রাজস্থান। সেখানে একদিকে আজও কন্যাভ্রূণ হত্যা হয়, কিন্তু আরেকদিকে রানি পদ্মিনীর গৌরবগাথাকেও ভোলে না রাজস্থান। প্রাচীন ভারতের রাজস্থান যে বীরাঙ্গনাদের দেখেছিল, যারা শৌর্যে বীর্যে রাজপুত বীরদের চেয়ে কম যেতেন না, তাঁদের স্মৃতিই আরেকভাবে ফিরিয়ে দেন কৃতিকারা। মনে করিয়ে দেন, মেয়ে বলে কোথাও এতটুকুও অবহেলা কিংবা অসম্মান প্রাপ্য নয় তাঁদের।