আকারে লবনের একটি ক্ষুদ্র দানার মতো। আর তাতেই নাকি উঠবে দুর্দান্ত ঝাঁ-চকচকে সব ছবি। সাধারণ লেন্স বিশিষ্ট ক্যামেরার তুলনায় অন্তত ৫ লক্ষ গুণ ভাল ছবি নাকি তুলতে পারে এই মাইক্রোস্কোপিক ক্যামেরা। এমনই দাবি, এক দল মার্কিন বিজ্ঞানীর। শুনে নিন, তাক লাগানো সেই আবিষ্কারের গল্প।
নুনের একটি মাত্র দানা। তার দৈর্ঘ্য প্রস্থ উচ্চতা মাপতে পারবেন? বলবেন হয়তো, ধুর খালি চোখে ভাল দেখাই যায় না, তো তার মাপ। তবে এই নুনের একটি দানার আকারের ক্যামেরাতেই নাকি এ বার বন্দি হতে পারে বিশ্ব। এমনই একটি মাইক্রোস্কোপিক ক্যামেরা আবিষ্কার করে ফেলেছেন একদল মার্কিন বিজ্ঞানী।
তাঁদের দাবি, কেবল ছবি উঠবে তাই নয়, উঠবে চকচকে, পরিষ্কার ও রংচঙে ছবি। আর সাধারণ লেন্সের চেয়ে তা হবে অন্তত ৫ লক্ষ গুণ স্পষ্ট। আমেরিকার প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটি ও ইউনিভার্সিটি অব ওয়াশিংটনের একদল গবেষক সম্প্রতি বানিয়ে ফেলেছেন এমনই এক আলট্রা কমপ্যাক্ট অপটিক্যাল ডিভাইস। নতুন এই ক্যামেরার মধ্যে রয়েছে এক ধরনের আর্টিফিশিয়াল ইন্টালিজেন্স। বুঝিয়ে বলতে গেলে, ক্যামেরার মধ্যে থাকা ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র রোবটগুলি আশপাশের ছোটখাটো জিনিসগুলিকেও সেন্স করতে পারবে। এমনকি শরীরের ভিতরের নানা সমস্যা ও রোগ নির্ণয়ের ক্ষেত্রেও ব্যবহার করা যাবে এই মাইক্রোস্কোপিক ক্যামেরা।
আরও শুনুন: গাছেদের মনের খবর জানাবে যন্ত্র-উদ্ভিদ, জানেন বিজ্ঞানীদের এই আশ্চর্য আবিষ্কারের কথা?
ইথান সেং নামে জনৈক কম্পিউটার বিজ্ঞানী ও তাঁর দল এই ক্যামেরাটি বানিয়েছেন। এ ক্ষেত্রে তাঁরা ভরসা করেছেন এক ধরনের বিশেষ মেটাসারফেসের উপরে, যার উপরে রয়েছে প্রায় ১৬ লক্ষ সিলিন্ডারের মতো পোস্ট। সেগুলিই অ্যান্টেনার মতো কাজ করে আলোর চরিত্রকে নিয়ন্ত্রণ করে। আর এই ক্যামেরা দিয়ে উচ্চমানের সম্পূর্ন রঙিন ছবি তোলা যাবে বলেই দাবি বিজ্ঞানীদের। আগে মাইক্রোস্কপিক ক্যামেরার ক্ষেত্রে বেশ কিছু সীমাবদ্ধতা ছিল। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ঝাপসা, ফাটাফাটা ছবি উঠত। তবে নতুন এই ক্যামেরা লাল, সবুজ ও নীল- এই তিনটি প্রাথমিক রং ব্যবহার করেই অন্যান্য রংগুলিকে শনাক্ত করতে পারবে। সাধারণ আলোতেও একই রকম কাজ করবে এই ক্যামেরা।
আরও শুনুন: কোন মাটি কোন ফসলের জন্য ভালো? জানতে নয়া পদ্ধতি আবিষ্কার নবম শ্রেণির ছাত্রীর
ক্যামেরা তৈরিতে সারফেস অপটিক্যাল টেকনোলজির ব্যবহার নতুন নয়। তবে এমন আনুবীক্ষণিক ক্যামেরা আগে দেখা যায়নি। পরবর্তীকালে এই ক্যামেরাকে যাতে আরও ভালো করে তোলা যায়, সে নিয়ে চলছে গবেষণা। ছবির মান, ব্যবহারকারীর অভিজ্ঞতার পাশাপাশি যে কোনও জিনিস চিনে নেওয়ার শক্তিকেও পরবর্তীকালে এই ক্যামেরায় যোগ করতে চান বিজ্ঞানীরা। এই প্রযুক্তিকে কাজে লাগানো গেলে পরবর্তীকালে মোবাইলের পিছনে আলাদা করে তিনটি বা চারটি ক্যামেরা লাগানোর প্রয়োজন হবে না। মোবাইল স্ক্রিনের উলটোদিক পুরোটাই হয়ে উঠবে সামগ্রিক একটি ক্যামেরা। এমনকী চিকিৎসায় রোগ নির্নয়ের ক্ষেত্রেও ঘটবে বিপ্লব। আর তেমনটা হলে আগামী দিনে সত্যিই বদলে যেতে চলেছে ক্যামেরার ভাষা। পৃথিবীতেও যে বদল আসবে, তা বলাই যায়।