মৃত্যু জীবনের একটা অধ্যায় মাত্র। তা কোনও ভাবেই জীবনের শেষ নয়। বহু দেশের মতোই এমনই ধারণায় বিশ্বাস করতে শেখায় পেরুর সংস্কৃতিও। তাই মৃত মানুষের সঙ্গে তাঁরা জুড়ে দিতে চান জীবনের সরঞ্জাম। তেমনটাই দস্তুর। সম্প্রতি পেরুর লিমা এলাকার কাছে মাটি খুঁড়ে মিলেছে একটি আশ্চর্য মমি। কীরকম? শুনে নেওয়া যাক।
মৃত্যু জীবনচক্রের একটা অধ্যায় মাত্র। সেই পথ ধরেই বাইরে থেকে ভিতরের আমির পথে যাত্রা শুরু করে আত্মা। সেই আত্মা অবিনশ্বর। সেই আত্মাই দেবতার মতো বাঁচিয়ে রাখে এই পৃথিবী। অপরিবর্তিত রাখে জীবনের ধারা। সমাজকে এগিয়ে নিয়ে যায়। মৃত্যুকে নিয়ে এমনই বিশ্বাস পেরুর।
আরও শুনুন: কলাপাতা দিয়ে তৈরি হচ্ছে কফিন, একইসঙ্গে থাকছে বৃক্ষরোপণের ব্যবস্থাও
তাই মৃতদেহকে স্তরে স্তরে পেঁচিয়ে যত্ন করে মাটির নিচে রেখে আসে তারা। সঙ্গে রেখে আসে জীবনের নানা অনুষঙ্গ, সরঞ্জাম। সেখান থেকেই ফের জীবনের যাত্রা শুরু হবে বলে বিশ্বাস করে তারা।
মৃতদেহকে মমি বানিয়ে সংরক্ষণের ইতিহাস পেরুর সুপ্রাচীন। সম্প্রতি পেরুর মধ্য উপকূলের কাছে লিমা থেকে এমনই একটি মমি উদ্ধার করলেন নৃতত্ত্ববিদেরা। তবে মমিটি পুরুষ না মহিলার তা এখনও শনাক্ত করা যায়নি। মাটির তলায় একটি সমাধি থেকে ওই মমিটি উদ্ধার হয়।
তবে একটি বিষয় দেখে অবাক হয়ে গিয়েছেন গবেষকেরা। মমিটি পুরোটাই দড়ি দিয়ে পেঁচানো, মুখ ঢাকা দুহাতে। পেরুর কোনও বিশেষ রীতি মেনে দেহটির সৎকার হয়েছিল কি না তা জানার চেষ্টা করছে গবেষকদলটি।
স্টেট ইউনিভার্সিটি অব সান ম্যাক্রোসের অধ্যাপক ভ্যান ডালেন লুনা জানাচ্ছেন, মনে করা হচ্ছে, পেরুর উপকূল ও পাহাড়ের মাঝামাঝি যে সংস্কৃতি গড়ে উঠেছিল, সেখানেই ওই মৃত ব্যক্তির বাস ছিল। তাঁর সঙ্গে রাখা ছিল সিরামিকের কিছু জিনিস, পাথরের সরঞ্জাম, রয়েছে সবজিপত্তর। মৃতদেহকে মমি বানিয়ে সংরক্ষণের ইতিহাস বহুদিনের।মৃতদেহের সঙ্গে তাঁর পছন্দের সামগ্রী রেখে দেওয়ার চল রয়েছে প্রায় সব দেশেই। পেরুতে শুধু পছন্দের জিনিসই নয়, জন্তু জানোয়ারের শিং, পাথরের জিনিসপত্র বহু কিছু রাখার চল রয়েছে।
আরও শুনুন: বয়স প্রায় ৪০০০ বছর, এখনও অবিকৃত আছে মিশরের প্রাচীনতম মমি
প্রাথমিক ভাবে মনে করা হচ্ছে, পেরুর হাই আন্দিয়ান অঞ্চলে বাস করতেন মৃত ব্যক্তিটি। ওই মৃতদেহের সঙ্গেই উদ্ধার হয়েছে আরও ১৫টি মৃতদেহ। মনে করা হচ্ছে, একই সময় সমাধিস্থ করা হয়েছিল দেহগুলিকে।
যে জায়গা থেকে মমিটি উদ্ধার হয়েছে, সেই সংস্কৃতিটি ইনকা সাম্রাজ্যের আগে গড়ে ওঠা বলেই মনে করছেন গবেষকেরা। আটশো বছরের পুরনো এই মমিটির শরীর যেভাবে দড়ি দিয়ে প্যাঁচানো ছিল, এবং তার হাতের অবস্থান দেখে রীতিমতো তাজ্জব গবেষকেরা। এর সঙ্গে শুধুই পেরুর সংস্কার জড়িয়ে, নাকি অন্য কিছু… সেটাই এখন খুঁজে দেখতে চান তাঁরা।