ভগবান বিষ্ণুর প্রকাশ নানা যুগে নানা অবতারে। তাঁর দশ অবতারের নানা কীর্তি আমাদের গুরুত্বপূর্ণ কিছু শিক্ষা দেয়। এর মধ্যে নরসিংহ বা নৃসিংহ অবতার বেশ উল্লেখযোগ্য। কেন এমন অদ্ভুত বেশে ধরা দিয়েছিলেন স্বয়ং ভগবান? বিষ্ণুবিদ্বেষী হিরণ্যকশিপু বধ যদি তার একটা কারণ হয়, তবে অবশ্যই অন্য পরতে থাকবে ভক্ত প্রহ্লাদের কথা। আসুন আমরা সবিস্তারে এই কাহিনি আজ শুনে নিই।
একদা প্রবল প্রতাপশালী হয়ে উঠেছিলেন হিরণ্যকশিপু। তাঁর দাদা হিরণাক্ষ্যের মৃত্যু হয়েছিল ভগবান বিষ্ণুর হাতেই। তখন বরাহ অবতারে প্রকাশ হয়েছিল বিষ্ণুর। দাদার মৃত্যুর পর থেকেই প্রবল বিষ্ণুবিদ্বেষী হয়ে ওঠেন হিরণ্যকশিপু। ঠিক করেন, স্বয়ং বিষ্ণুকেই হত্যা করবেন তিনি। কিন্তু তার জন্য চাই ক্ষমতা। সেই ক্ষমতা কে দিতে পারেন? না, স্বয়ং প্রজাপতি ব্রহ্মা। হিরণ্যকশিপু তখন খুব করে ব্রহ্মার ধ্যান করলেন। একদিন প্রজাপতি এলেন তাঁকে বর দিতে। হিরণ্যকশিপু বললেন, বর যদি দিতেই হবে, তবে এমন বর দিন, যাতে প্রজাপতির সৃষ্ট কোনও জীবের হাতে আমার মৃত্যু না হয়। দিনে বা রাতে, কোনও অস্ত্রের আঘাতে আমার মৃত্যু না হয়। ঘরে বা বাইরে- কোথাও যেন আমার মৃত্যু না হয়। হিরণ্যকশিপু এমন এমন বর চাইলেন, যাতে তিনি অবধ্য হয়ে ওঠেন। একরকম হলেনও তাই।
আরও শুনুন: পরহিতে আত্মত্যাগের মহৎ শিক্ষা দেয় মহর্ষি দধীচির উপাখ্যান
এদিকে হিরণ্যকশিপুর ছেলে প্রহ্লাদ ঘটনাচক্রে দেবর্ষি নারদের ছত্রছায়ায় বেড়ে উঠছিলেন। তাই প্রহ্লাদ হলেন পরম বিষ্ণুভক্ত। এই লেগে গেল দ্বন্দ্ব। পিতা চরম বিষ্ণু বিদ্বেষী। আর ছেলে পরম ভক্ত। একদিন প্রহ্লাদ যখন বিষ্ণুর স্তব কীর্তন করছেন, তখন সেখানে উপস্থিত হলেন হিরণ্যকশিপু। বিষ্ণুর নাম শুনেই ক্রোধে আরক্ত তিনি। প্রহ্লাদের কাছে জানতে চাইলেন, তিনি যে এত বিষ্ণুর নামগান করছেন, কোথায় থাকেন বিষ্ণু? প্রহ্লাদ তো বরাবরই বলে এসেছেন, তাঁর আরাধ্য সর্বত্র উপস্থিত। সর্বব্যাপী। এর আগেও হিরণ্যকশিপু তাঁর ছেলেকে বলেছেন যে, বিষ্ণু নন, তিনিই সর্বক্ষমতাময় সত্তা। কিন্তু প্রহ্লাদ তা অস্বীকার করেছেন। জানিয়েছেন, বিষ্ণুই মহৎ, তিনিই সর্বশ্রেষ্ঠ, প্রভু। এই দ্বন্দ্ব চলেছে বহুদিন।
আরও শুনুন: ‘বিদ্রোহী ভৃগু’ কেন ভগবানের বুকে এঁকে দিয়েছিলেন পদচিহ্ন?
এবার হিরণ্যকশিপু প্রমাণ চাইলেন প্রহ্লাদের কাছে। কোথায় থাকে বিষ্ণু, তাঁর প্রশ্ন। একটি থাম দেখিয়ে তিনি ভক্ত প্রহ্লাদকে জিজ্ঞেস করলেন, এর মধ্যে কি বিষ্ণু আছে? প্রহ্লাদ জবাব দিলেন, একটি তৃণে কি যষ্ঠিতেও যেমন বিষ্ণু আছে, তেমনই থামের মধ্যেও বিষ্ণু আছেন। ক্রোধে অন্ধ হিরণ্যকশিপু তখন সেই থামে পদাঘাত করলেন। আর, সেখান থেকে বেরিয়ে এলেন বিষ্ণু স্বয়ং, নরসিংহ অবতারে। তিনি দেবতা, মানব বা পশু নন। এক অন্য মূর্তি। দিন বা রাত নয়, গোধূলি লগ্নে, হিরণ্যকশিপুকে নিজের জঙ্ঘার উপর বসিয়ে, নখরাঘাতে তাঁকে বধ করেন ভগবান।
বাকি অংশ শুনে নিন।