পুতুল-খেলার দিন কোনওদিনই ফুরোয় না। প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে ছোটদের খেলার উপকরণের তালিকায় শীর্ষে কিন্তু এই পুতুল। নানা দেশের নানা পেশার পুতুল। তাদের গড়ন আলাদা, পোশাক আলাদা। রোগা-মোটা, ফর্সা-কালো, ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার, কী নেই সেই তালিকায়? আসলে পুতুলখেলা তো জীবনেরই অনুকরণ। ছোটদের মতো করে তাদের একটা দুনিয়া গড়ে নেওয়া। তবে এতদিন সেই বিশ্বে ঠাঁই পায়নি বিশেষ ভাবে সক্ষম শিশুরা। সময় এসেছে বদলের। শুনে নিন সেসব অন্যরকমদের অন্যরকম পুতুল-খেলার গল্প।
ছোটবেলা ছিল, অথচ পুতুলখেলা ছিল না, এমন মানুষ বোধহয় হাতে গোনা। খেলার ঘর জুড়ে নানাবিধ পুতুল, তাদের নানা নাম, নানা ভুষা, নানা ভূমিকা। কয়েকটা প্রজন্ম আগে পর্যন্ত বাচ্চাদের ছোটবেলার একটা বড় অংশ জুড়ে থাকত রান্নাবাটি, পুতুলের বিয়ে– এমন নানাবিধ ‘মিছিমিছি’ খেলা। সে সব যুগের সঙ্গে বদলালেও পুতুলের চাহিদা কিন্তু কমেনি। পুতুলের রকম বদলেছে, বদলেছে পোশাক-আশাক, সাজগোজ এমনকি গড়নও। তালিকায় ঢুকে গিয়েছে ‘সফট টয়’। তবে আস্তসমস্ত ছোটবেলা জুড়ে পুতুলের দাবি কিন্তু রয়েই গিয়েছে।
পুতুলখেলার গোড়ার কথা জুড়েই রয়েছে জীবনের অনুকরণ। ছোটদের নাগালের বাইরের যে বিশ্ব, তাকে নিজের ছাদে ফেলে একটা নিজস্ব পৃথিবী গড়ে নেওয়া। আর সেই পৃথিবীর সব চেয়ে বড় কর্ত্রী বা কর্তা কিন্তু শিশুটি নিজেই। তাই নিজের পুতুলের মধ্যে সবার আগে সে খোঁজে নিজের ছায়া। নিজের মতো কাউকেই সে তাঁর বিশ্বের নাগরিক করতে চায়। তাই সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বদলেছে পুতুল তৈরির ধারণাও। সময় বদলাচ্ছে। সেই মতো নিজেদেরকেও আধুনিক করে তুলেছেন বার্বির মতো নামীদামী পুতুলের ব্র্যান্ডগুলোও। পুতুলের তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে কৃষ্ণাঙ্গ থেকে স্থূলকায়া। এমনকি পেশার ধরণ, আঞ্চলিকতা সব কিছু মাথায় রেখেই তৈরি হচ্ছে পুতুলের সাজ।
আরও শুনুন: সোনালি রাংতায় মোড়া শিশুশ্রমিকের যন্ত্রণা, স্বাদের আড়ালে লুকিয়ে চকোলেট ইন্ডাস্ট্রির রূঢ় বাস্তব
কিন্তু এত কিছুর পরেও যেসব শিশুরা অন্যরকম ভাবে সক্ষম, যারা বিশেষ, তাদের জন্য তাদের মতো পুতুল কিন্তু এতদিন বাজারে তেমন ভাবে ছিল না। সেই ভাবনাটাই কুরে কুরে খেত ৩৯ বছরের ব্রিটিশ মা ক্লেয়ার টাওয়েলকে। তাঁর বছর চারেকের মেয়ে মাটিলদা কানে শুনতে পায় না। দোকানে বাজারে অনেক খুঁজেছেন ক্লেয়ার। কানে হিয়ারিং এইড লাগানো একটিও পুতুল খুঁজে পাননি তিনি, যাঁর সাথে একাত্মবোধ করতে পারে মাটিলদা। তখন থেকেই কিছু একটা করার কথা ভাবছিলেন ক্লেয়ার।
পেশায় মেডিক্যাল রেডিয়েশন টেকনোলজিস্ট ক্লেয়ার। সেই কাজের ফাঁকে ফাঁকেই মেয়ের জন্য তার মতো পুতুল তৈরির কাজে হাত লাগান তিনি। সেই থেকে শুরু। কেউ কানে শুনতে পায় না, ছোট থেকেই সঙ্গী হিয়ারিং এইড। কারও ঠোঁট অসম্পূর্ণ, কারওর বা নাকে অক্সিজেন নল, এমনই নানাবিধ মেডিক্যাল সমস্যার কথা নিজের তৈরি পুতুলের মধ্যে তুলে ধরতে শুরু করলেন ক্লেয়ার।
আরও শুনুন: এখানে ১২ বছর বয়স হলেই মেয়েরা হয়ে যায় ছেলে, জানেন সেই আজব গ্রামের কথা?
২০১৭ সাল থেকে অন্যরকম পুতুল বানানোর এই মিশনে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন তিনি। সেই থেকে এখনও পর্যন্ত দু-হাজারেরও বেশি অন্যরকম পুতুল বিক্রি করেছেন ক্লেয়ার। ব্রিটেনের ব্রাইট ইয়ারস বলে একটি পুতুল প্রস্তুতকারক সংস্থার তরফে নিয়মিত অর্ডার পাচ্ছেন ক্লেয়ার। যা ডেলিভারি করতে কালঘাম ছুটছে তাঁর। অনেক সময়ই বিশেষ কোনও একটি বিশেষ ধরণের পুতুল গড়ে দেওয়ার অর্ডার পান। ক্লেয়ার মনে করেন, ধৈর্যের বিকল্প নেই। তাই সময় নিয়ে সেসব আবদার মেনে পুতুল গড়ে দেন ক্লেয়ার। কেবলমাত্র বিশেষ ভাবে সক্ষম, তেমন শিশুদের অভিভাবকেরাই যে ক্লেয়ারের কাছ থেকে পুতুল কেনেন, এমনটা কিন্তু নয়। বহু ক্ষেত্রেই স্কুল, নার্সারি থেকেও এই ধরনের পুতুল কেনা হচ্ছে।
বাকি অংশ শুনে নিন।