পৃথিবীতে কত কিছুই না ঘটে, যার ব্যাখ্যা খুঁজে পাওয়া যায় না। এমনই এক রহস্যের নাম স্কেলিটন লেক। কোথায় দেখা যায় এই লেক? কেনই বা এমন নাম এই হ্রদের? শুনে নিন।
হিমালয়ের কোলে ভেসে থাকা ছোট্ট একটি হ্রদ। সমুদ্রতল থেকে প্রায় সাড়ে ষোল হাজার ফিট উঁচুতে এক বরফে ঢাকা উপত্যকার মাঝে এর অবস্থান। বিস্তার ১৩০ ফিট জায়গা জুড়ে। বছরের অধিকাংশ সময় বরফের পুরু স্তর ভেদ করে জলের দেখা মেলে না সেখানে। আর যখন সেই বরফ গলে যায়? অমনি নজরে আসে এক হাড় হিম করা দৃশ্য।
আরও শুনুন: এই ব্রিজে উঠলেই আত্মহত্যা করে বসে পোষা কুকুরেরা, কেন জানেন?
হ্যাঁ, আক্ষরিক অর্থেই। হিমের দেশ থেকে মুক্তি পেয়ে জলের মধ্যে ভেসে ওঠে অসংখ্য হাড়! দেখা যায় অপূর্ব সুন্দর প্রকৃতির মাঝে ওই হ্রদে ভেসে আছে শয়ে শয়ে হাড়। মরা মানুষের হাড়!
কী ভাবছেন? কোনও হরর মুভির গল্প? একেবারেই না। সত্যিই অস্তিত্ব রয়েছে এমন একটি হ্রদের। তাও কোনও নির্জন পাণ্ডববর্জিত দেশে নয়, খোদ আমাদের এই দেশেই দেখা মেলে এই হ্রদের। উত্তরাখণ্ডের এই হ্রদের আদি নাম রূপকুণ্ড, কিন্তু ‘স্কেলিটন লেক’ নামেই এর পরিচিতি ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্ব জুড়ে। বরফ গলে জলের দেখা মিললেই এই হ্রদে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকতে দেখা যায় অন্তত আটশো মানুষের হাড়। কোনও কোনও হাড়ে মাংসও লেগে রয়েছে এখনও। বরফের মধ্যে থাকার কারণেই তাতে পচন ধরেনি। কিন্তু এত হাড় কিংবা কঙ্কাল ওই একই জায়গায় কী করে এসে জড়ো হল, এই রহস্য এখনও কেউই ভেদ করে উঠতে পারেননি।
আরও শুনুন: মায়ের খুনের বদলা, ছোট্ট প্রাণীটি কী করেছিল জানেন?
বিজ্ঞানী ও নৃতাত্ত্বিকেরা এই হ্রদ নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে জানিয়েছেন, বরফ এবং পাথরের ঘর্ষণ, ধস, পর্যটকদের উপদ্রব, সব মিলিয়ে অনেক প্রাচীন চিহ্নই ধুয়েমুছে গিয়েছে। তবুও তাঁরা ২৩টি পুরুষ এবং ১৫টি মহিলার হাড়ের নমুনা চিহ্নিত করতে পেরেছেন। জিনগত বিশ্লেষণ করে হাড়গুলিকে তিনটি পৃথক জেনেটিক গ্রুপে ভাগ করেছেন ওই বিজ্ঞানীরা। তাঁদের মতে, সপ্তম থেকে দশম শতাব্দীর মধ্যে বয়স এমন অন্তত ২৩ জনের হাড় পাওয়া গিয়েছে, এবং এদের উৎস দক্ষিণ এশিয়া। অন্য হাড়গুলির বয়স আরও ১০০০ বছর কম, সম্ভবত সতেরো থেকে বিশ শতকের মধ্যে। এর মধ্যে মাত্র একজন পূর্ব এশিয়ার মানুষ, এবং বাকি ১৪ জন পূর্ব ভূমধ্যসাগর অঞ্চলের বলেই বিজ্ঞানীদের ধারণা। কিন্তু এত মানুষের কীভাবে মৃত্যু হয়েছিল, তা নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েই গিয়েছে। কোনও ভাইরাসের সংক্রমণ কিংবা মহামারির ইঙ্গিতও পাওয়া যায়নি। আজও তাই এক অমীমাংসিত রহস্যের নাম হয়েই রয়ে গিয়েছে স্কেলিটন লেক।