হেমন্তের রাতে মাঝে মাঝেই জ্বলে উঠছে ইডেনের বাতিস্তম্ভের আলো। আকাশবাণীর ছাদ, শহিদ মিনার, গড়ের মাঠে এসে পড়ছে সেই আভা, বহুদিন পর কলকাতার নন্দনকাননে ফিরছে ক্রিকেট। অতিমারীর যন্ত্রণা পেরিয়ে গ্যালারিতে ফিরছে চেনা চেনা হাসিমুখ। ইডেনের ফ্লাডলাইট মানে শুধু তো ক্রিকেটের মহড়া নয়, ইডেনের মায়াবী আলোয় দৃশ্যমান হয়ে ওঠে ইতিহাসের পাতাও। গুরু দ্রাবিড়ের কোচিং-এ নতুন ভারত মাঠে নামবে, মাঠে নামবে কত বর্ণময় ইতিহাসের বহমান খাতায় আরও একটা পৃষ্ঠা জুড়তে। নস্ট্যালজিয়ার পাতা ওলটালেন অর্পণ গুপ্ত।
তিনের দশকে ব্রিটিশ-অজি চিরন্তন দ্বৈরথের সেই বডিলাইনের অপমান যেন জ্বলে পুড়ে ছাই হয়ে গেল সাতাশির বিশ্বকাপ ফাইনালে। উত্তাল কলকাতার বুকে ট্রফি তুললেন ব্র্যাডম্যানের অপমানের বদলা নিতে নিজেকে নিউ সাউথ ওয়েলসের মাটিতে একটু একটু করে গড়ে তোলা বর্ডার। লয়েড জমানার পর সীমিত ওভারের ক্রিকেটে ওই প্রথম অজি আধিপত্যের শুরু। ইডেনের বাইশগজ শুধু বুকে আগলে নিল ইতিহাসের ঘ্রাণটুকু। কীভাবে যেন বদলার ইতিহাস ওই দিন থেকেই আরও বেশি করে আগলে রাখল ইডেন উদ্যান। নইলে কি শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ লেগস্পিনার শেন ওয়ার্নকে ম্যাচের আগেই ড্রেসিংরুমে শ্যাম্পেন আনিয়ে রাখার পরেও ম্যাচ শেষে অপমানের লালমুখ নিয়ে মাথা নিচু করে ফেলতে হয় অখ্যাত শিখ তরুণের সামনে? রিকি পন্টিং-এর ফার্স্ট স্লিপ থেকে ক্রমাগত চেঁচিয়ে যাওয়া অজি স্লেজিং কবজির মোচড়ে মিডঅফের পাশ দিয়ে বাউন্ডারি পার করে দেন একবারও বিশ্বকাপে সুযোগ না পাওয়া হায়দ্রাবাদি? স্টিভ ওয়ের দেশে পনেরো থেকে ষোলো হতে চলা টেস্ট জয়ের খবর ছাপা হয়ে যাবার পরেও প্রেস থেকে তাকে চিরনিদ্রায় পাঠিয়ে দেন এক ধ্রুপদী কর্নাটকী ও নাছোড় হায়দ্রাবাদি তরুণ?
আরও শুনুন: রং-তুলির স্বাধীনতার উদযাপন, কলকাতায় প্রথমবার বসছে কার্টুন মেলা
ইডেনের সঙ্গে দ্রাবিড়ের সেই সখ্য আজও যেন অটুট। ৯৬-এর সেমিফাইনালে শচীনের স্টাম্প ছিটকে যাবার পর জ্বলতে থাকা গ্যালারি, খেলা পরিত্যক্ত, ইডেন যেন মৃত্যুপুরী। অনিয়ন্ত্রিত আবেগের আগুনের পুড়ল তিলোত্তমার উদ্যান। আবার এই ইডেনকেই ফের রাঙিয়ে দেন বীরেন্দ্র সেওয়াগ, ২০১০ সালে। ইডেন জানে কীভাবে নিজের পরিবারের ওপর ব্রিটিশদের নৃসংশ অত্যাচারের বদলা নিতে পরপর ছয় মেরে। ব্রিটিশ রক্তে স্বর্গোদ্যান রাঙিয়ে দেন অখ্যাত কৃষ্ণাঙ্গ কার্লোস ব্রেথওয়েট, টিটোয়েন্টি বিশ্বকাপের সেই ফাইনালে ইডেন জন্ম দিয়েছিল এক নতুন কাহিনির।
আরও শুনুন: এই ব্রিজে উঠলেই আত্মহত্যা করে বসে পোষা কুকুরেরা, কেন জানেন?
এই ইডেনের বুকেই চারের দশকে পোস্টার পড়ে সুটে ব্যানার্জির নামে, খোকন সেন, মন্টু ব্যানার্জিদের পর ভারতীয় দলে ডাক পাওয়া বাঙালি সুঁটেকে আজ আর ক-জনই বা মনে রেখেছেন? ইডেনের দেওয়ালে কান পাতলে শোনা যায় মুশতাক আলির নাম। মুশতাককে খেলানোর দাবিতে ইডেনের সামনে বিলি হয়েছিল প্যামফ্লেট, পড়েছিল পোস্টারও।
শুনে নিন বাকি অংশ।