রাজা খায় ব্যাঙভাজা, শুনতে মজা লাগলেও ডাইনিং টেবিলে প্লেট জুড়ে সাজানো ফড়িং কিংবা পঙ্গপাল ভাজা! বলবেন, ওসব তো চিনা-জাপানিরা খায়। যদি বলি, ইদানিং সেসব দিব্যি উদরস্থ করছে বিলিতি সভ্যতাও। খেতের পর খেত শস্য সাবাড় করে দেওয়া পঙ্গপাল ভাজার নাকি স্বাদই আলাদা! কী খাচ্ছেন ইংরেজরা? শুনে নিন সেই গল্পই।
সত্যজিৎ রায়ের ‘আগন্তুক’ সিনেমার সেই মামাবাবু চরিত্রটিকে মনে আছে তো। সেখানে মামাবাবুর ভূমিকায় উৎপল দত্তকে বলতে শোনা গিয়েছিল, আমি সর্বভুক ও স্বল্পাহারী। তা মানুষ স্বল্পাহারী হোক বা না হোক, সর্বভুক তো বটেই। নানা দেশের নানা খাবার, তার নানা উপাদান। মাছ, মাংস থেকে লতা-পাতা-শাক, ফলমূল, শস্য, গাছের কন্দ থেকে শুরু করে কী নেই সেই তালিকায়। আজকাল তো বিভিন্ন আন্তর্জাতিক চ্যানেল খুললেই দেখতে পাওয়া যায়, নানাবিধ রোমাঞ্চকর অভিযান। কোথাও বিপদসঙ্কুল জঙ্গলে জীবনযুদ্ধ, তো কোথাও মাঝদরিয়ায় একা। প্রাণে বাঁচতে মুখে পুরতে হচ্ছে কাঁচা মাছ, কোথাও ঝলসানো মাংস। অস্তিত্ব বাঁচানোর লড়াই বলে কথা। তা মানুষ বিপদে পড়লে সবই খায়। মুসকান জুবেরি বা অঘোরী সাধুদের কথা তো নিশ্চই জানেন আপনারা। সে প্রসঙ্গ বরং থাক।
আরও শুনুন: মিশরে মমির সঙ্গে মিলেছিল মেনুকার্ড, কেন তৈরি হয়েছিল এই তালিকা?
চিনা-জাপানি. কোরিয়ান কিংবা থাই-পাতে পোকামাকড় কিন্তু খুবই সাধারণ ব্যপার। তেলে ভাজা মুচমুচে আরশোলা কিংবা গঙ্গাফড়িং ভাজা, তা অত্যন্ত জনপ্রিয় সে সব দেশে। পিঁপড়ের ডিম থেকে শুরু করে আরশোলা, সাপের মাংস, কী নেই সেই তালিকায়। এমনকি ইদানীং সেখানকার বড় বড় রেস্তঁরাতেও মেলে সে সব খানাপিনা। এসব খাবারে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিনের জোগান থাকায়, এসবের চাহিদা ক্রমশ বাড়ছে। আর এ বার সেই পথে হাঁটতে চাইছে ইউরোপীয় দেশগুলোও।
সম্প্রতি খাদ্যতালিকায় পঙ্গপালকে জায়গা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। কিছু দিন আগেই মিলওয়ার্ম লার্ভা খাওয়ায় সম্মতি দিয়েছে তাঁরা। চাল বা আটার মধ্যে প্রায়শই দেখতে পাই আমরা এই ধরনের পোকা। সামনেই লাইনে রয়েছে ঝিঁঝি পোকারাও। খুব শিগগিরই সিলমোহর পেতে চলেছে তা-ও।
আরও শুনুন: শুধু আদিম মানুষ নয়, এখনও কাঁচা মাংস খান অনেকেই… তাঁরা কারা?
এই পঙ্গপাল কিন্তু আদতে পরিযায়ী। এক দেশ থেকে এক দেশে সদলবলে উড়ে যায় তারা। শস্যের খেতে ঝাঁপিয়ে পড়ে। মুহূর্তে সাবড়ে দেয় খেত কে খেত, শস্যের পরে শস্য। মাথায় হাত পড়ে চাষীদের। এই তো গতবছরের কথা। পঙ্গপালের আক্রমণের মুখে পড়েছিল উত্তরভারতের বেশ কয়েকটি রাজ্য। পাকিস্তান থেকে পাল পাল পঙ্গপাল ধেয়ে এসেছিল রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ, উত্তরপ্রদেশ, পঞ্জাবে। সামাল দিতে হিমশিম খেতে হয়েছিল প্রশাসনকে। ব্রিটেন থেকে আনানো হয়েছিল বিশেষ ধরনের কীটনাশক। কোটি কোটি টাকার শস্য নষ্ট করে দিয়েছিল পঙ্গপালের ঝাঁক। প্রতি বছরই কোনও না কোনও দেশকে এই ধরনের পঙ্গপাল-হামলার মুখোমুখি হতে হয় ।
বাকি অংশ শুনে নিন।