শরদচন্দ পবন মন্দ
বিপিনে ভরল কুসুমগন্ধ
ফুল্ল মল্লিকা মালতী যূথী
. মত্তমধুকর-ভোরণি। … শারদপূর্ণিমার রাতেই গোপীগণের সঙ্গে এক অপূর্ব লীলায় মেতেছিলেন শ্রীকৃষ্ণ। এই রাস লীলা বৈষ্ণব ভক্তগণের কাছে অতি পবিত্র তো বটেই, ভারতীয় দর্শনেও এই রাসের আলাদা গুরুত্ব আছে। আসুন শুনে নিই এই অপ্রাকৃত লীলার কথা। আস্বাদন করি তার মাধুর্য।
শারদপূর্ণিমার সে এক অপূর্ব রাত। জ্যোৎস্নাপ্লাবিত প্রান্তর। কুসুমগন্ধে চারিদিক উদ্বেল। এমন সময় এক অপূর্ব লীলার বাসনা জাগল গোবিন্দের মনে। তিনি কী করলেন? পদকর্তা গোবিন্দদাস বলছেন,
হেরত রাতি ঐছন ভাতি
শ্যাম মোহনমদনে মাতি
মুরলী গান পঞ্চম তান
. কুলবতী-চিত চোরণি।।
আরও শুনুন: ঠাকুর বলেন, জগৎসংসার মায়া বলে উড়িয়ে দিতে নেই
শ্রীকৃষ্ণের বংশীধ্বনি কানে যাওয়া মাত্র উতলা হলেন যত গোপীগণ। সেই বস্ত্রহরণের সময়, তাঁরা তো দেবী কাত্যায়নীর পূজা করেছিলেন। প্রার্থনা করেছিলেন তাঁদের প্রাণসখা শ্রীকৃষ্ণের সঙ্গলাভের। সেদিনের সেই কঠিন পরীক্ষা অন্তে কৃষ্ণ তাঁদের কথা দিয়েছিলেন এক অপূর্ব লীলাবিহারের।
“যখন করেন হরি বস্ত্রহরণ।
গোপীদের কাছে তিনি করিলেন পণ।।
আগামী পূর্ণিমাকালে তাঁহাদের সনে।
করবেন রাসলীলা পুণ্য বৃন্দাবনে।।”
সেই বৃত্ত সম্পূর্ণ হয় রাসলীলায় পৌঁছে। কৃষ্ণের বাঁশি শুনে তাই উতলা গোপীগণ যে যেমন ছিলেন, সেই অস্থাতেই ছুটে গেলেন। পদকর্তা তাই লিখছেন,
শুনত গোপী প্রেম রোপি
মনহি মনহি আপন সোঁপি
তাঁহি চলত যাঁহি বোলত
. মুরলীক কললোলনি।
বিসরি গেহ নিজহুঁ দেহ
এক নয়নে কাজররেহ
বাহে রঞ্জিত কঙ্কণ একু
. এক কুণ্ডল-দোলনি।।
শিথিলছন্দ নীবিক বন্ধ
বেগে ধাওত যুবতিবৃন্দ
খসত বসন রশন চোলি
. গলিত-বেণী-লোলনি।
আরও শুনুন: ভক্ত জানতে চাইলেন ‘রামের ইচ্ছা’ গল্পটা কী, ঠাকুর বললেন…
এইভাবে শুরু হয় ব্রজের অপ্রাকৃত সর্বোত্তম লীলা- রাস। পূর্ণিমার চাঁদকে সাক্ষী রেখে গোপীগণ এই রাতেই শ্রীকৃষ্ণের সঙ্গলাভ করেন। সেদিন প্রতি গোপী আপন করে পেয়েছিলেন তাঁদের পরানসখা কৃষ্ণকে। তাই যত গোপী তত কৃষ্ণ। রাস অর্থে মণ্ডলীকারে নৃত্য। শ্রীধর স্বামী বলেছেন, বহু নর্তকীযুক্ত নৃত্য বিশেষের নাম রাস। টীকাকাররা বলেন, ‘রস’ থেকেই রাসের উৎপত্তি। এই রস হচ্ছে মধুর রস। গোপীগণ যখন পরমানন্দে কৃষ্ণসঙ্গ করছেন, তখন তাঁদের মনে হতে থাকে, কৃষ্ণ বুঝি কেবল তাঁদের অধীন। এই সামান্য অহং-ও ভক্তের হৃদয়ে থাকা কাম্য নয়।
বাকি অংশ শুনে নিন।