সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় যে সশরীরে আর আমাদের মধ্যে নেই, এ কথা যেন বাঙালির বিশ্বাসই হয় না। অথচ বছর ঘুরে গেল এই সত্যি নিয়েই যে, তিনি আর নেই। আসলে বাঙালির সংস্কৃতির পরিসরে তাঁর এমন উজ্জ্বল উপস্থিতি যে, আজও তাঁকে আমরা অনুভব করি, তাঁর সৃষ্টি আর কীর্তির মধ্য দিয়েই। একজন অভিনেতাকে অভিনয়জীবনে যেমন নানা পর্বের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়, তেমন ব্যক্তিজীবনেও থাকে কত না ওঠাপড়া। জন্ম হয় কত অবিশ্বাস্য গল্পের। আসুন, সেরকমই একটি গল্প শুনে নেওয়া যাক। চিনে নেওয়া যাক প্রায় অজানা সৌমিত্রকে।
তাঁকে নিয়ে কত না গল্প জমে আছে বাঙালির স্মৃতির ভাণ্ডারে। শুধু তো দীর্ঘ আয়ু নয়, জীবনকালে এত বিচিত্র কাজ সফল ভাবে করে যাওয়াও তো কম কথা নয়। বাঙালিয়ানার যে বিশেষ ঘরানার একেবারে শীর্ষে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর – যিনি একাধিক সৃষ্টিশীল কাজ করে চলেছেন সমান উৎকর্ষের সঙ্গে – সেই ঘরানার সম্ভবত শেষ প্রতিনিধি বলা চলে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়কে। তাই সিনেমা, নাটক, কবিতা, পত্রিকা, আবৃত্তি, রেডিও অনুষ্ঠান – নানা ক্ষেত্রের মানুষজনের মুখের গল্পে গল্পে মিশে আছেন এক অন্য সৌমিত্র। তিনি কত বড় মাপের অভিনেতা, অভিনয় নিয়ে, থিয়েটার নিয়ে তাঁর চিন্তা-চেতনার নানা বয়ান উঠে আসে এভাবেই। আমরা চিনতে পারি শিল্পী সৌমিত্রকে।
আরও শুনুন: কলকাতার রসগোল্লার জন্ম এঁর হাতেই, কীভাবে এল এই সাধের মিষ্টি?
আবার একই সঙ্গে আসে ব্যক্তি জীবনের প্রসঙ্গও। একজন অভিনেতা, যাঁর জীবন জনপরিসরের সামনে উন্মোচিত, তাঁকে যে কত বিব্রতকর পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে পড়তে হয়, সেরকম কথাও উঠে আসে এরকমই গল্পে গল্পে। এমনই এক ঘটনার কথা প্রিয় বন্ধুর স্মৃতিচারণে জানিয়েছিলেন শ্রদ্ধেয় সুধীর চক্রবর্তী। সেবার সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের বাবা হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছেন। তিনি তখন ছিলেন কৃষ্ণনগরে। খবর পেয়েই সেখানে ছুটে গিয়েছেন সৌমিত্র। যদিও শেষরক্ষা হল না। প্রয়াত হলেন সৌমিত্রর বাবা।
আরও শুনুন: ফ্যাশন নয় আন্দোলনের অংশ, সেকালে সমাদর পেয়েছিল ‘বিদ্যাসাগর পেড়ে’ শাড়ি
সৌমিত্র ঠিক করলেন, অশৌচের কটাদিন কৃষ্ণনগরেই থেকে যাবেন। একদিন সন্ধেবেলা দুই বন্ধুতে মিলে একটু বেড়াতে বেরিয়েছেন। সৌমিত্রর পরনে অশৌচের পোশাক। এমন সময় একজন ব্যক্তি তাঁদের সামনে এসে দাঁড়ালেন। কিছুক্ষণ সৌমিত্রর দিকে তাকিয়ে থাকলেন। তারপর কথা নেই বার্তা নেই হঠাৎ সৌমিত্রর গায়ে একটা চিমটি কাটলেন। সৌমিত্র স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়ায় ‘উঃ’ বলে জানতে চাইলেন, কী ব্যাপার? ভদ্রলোক কেন এমন করছেন? উত্তরে তিনি জানালেন, সৌমিত্র সত্যিই অতটা ফরসা কি-না সেটাই চিমটি কেটে পরখ করে নিচ্ছিলেন। ঘটনার অভিঘাতে দুই বন্ধুই তখন বিমূঢ়। সৌমিত্র অবশ্য ঊষ্মা প্রকাশ করে সেই ব্যক্তিকে কিছু বলেছিলেন বলে জানাননি সুধীরবাবু।
বাকি অংশ শুনে নিন।