বিষ্ণুর দশ অবতারকে মাথায় রেখে পরিকল্পিত দশাবতার তাস। নিঃসন্দেহে বাংলার ঐতিহ্য। তবে এ নিছক তাস নয়। একটু খেয়াল করলে দেখা যায়, এই তাসে নেই সাহেব-বিবি-গোলামের ঔপনিবেশিকতার কাঠামো। অর্থাৎ, এই তাস উপনিবেশবাদের উলটোদিকে যে সংস্কৃতি, তারও স্মারক হয়ে আছে। আসুন শুনে নিই সে কথা।
তাস খেলা আজও সর্বত্রই জনপ্রিয়। খেলার ভিতরে সাহেব বিবি গোলামের এই কারবার কারোর কারোর কাছে যেন নেশার মতো। কিন্তু এই তাস খেলার ভিতর কি খানিক লেগে আছে ঔপনিবেশিকতার গন্ধ? অন্তত তাসের ক্ষমতার কাঠামোবিন্যাস দেখে গুণীজনেরা তাই মনে করেন। এখানে, সাহেবের ক্ষমতা সর্বোচ্চ, তারপরেই বিবি আর সবার নিচে আছে গোলাম। স্পষ্টতই বোঝা যায়, ব্রিটিশের গোলামির ফাঁস যে আমাদের গলায় চেপে বসেছিল, তার একরকম প্রতিফলন আছে জনপ্রিয় তাস খেলাতেও।
আরও শুনুন: কলকাতার রসগোল্লার জন্ম এঁর হাতেই, কীভাবে এল এই সাধের মিষ্টি?
খেয়াল করলে দেখা যায়, এই ধরনের তাস ছাড়াও এককালে এমন তাসও খেলা হত যেখানে ছিল না ঔপনিবেশিকতার কোনও নামগন্ধ। কেননা এই তাস ব্রিটিশ যুগের অনেক আগে থেকেই খেলা হত। ফলত সেখানে কোনও সাহেব-বিবি-গোলাম নেই। আছে আমাদের পুরাণ থেকে নেওয়া অনুষঙ্গ আর সমাজ-বাস্তবতার নানা ছবি। আমরা কথা বলছি বিষ্ণুপুরের বিখ্যাত দশাবতার তাস প্রসঙ্গেই, নাম থেকেই বোঝা যাচ্ছে, এই তাসে আছেন বিষ্ণুর দশ অবতার। এঁরা হলেন, মৎস্য, কূর্ম, বরাহ, নৃসিংহ, বামন, রাম, ভৃগুরাম বা পরশুরাম, বলরাম, জগন্নাথ ও কল্কি। এই দশ পৌরাণিক অবতারকে নিয়েই তৈরি হয়েছিল দশ তাসের খেলা। প্রতি তাসে আঁকা থাকে এক একজন করে অবতারের মূর্তি।
আরও শুনুন: ফ্যাশন নয় আন্দোলনের অংশ, সেকালে সমাদর পেয়েছিল ‘বিদ্যাসাগর পেড়ে’ শাড়ি
দশবতার তাসের কাঠামোয় সবার উপরে স্বাভাবিক ভাবেই থাকেন এই অবতাররা। তাঁদের অধীনে থাকেন উজীর। তিনিও যে যথেষ্ট প্রতাপান্বিত, তা নিয়ে সন্দেহ নেই। এবার এই উজীরের সঙ্গে থাকে আরও দশ তাস। এই দশ তাস যেন সমাজের দশজনের প্রতীক। সমাজের শ্রেণিবিন্যাসে যেমন ক্ষমতার ভাগ-বাঁটোয়ারা হয়, এই তাসগুলির ক্ষেত্রেও সেই পার্থক্য দেখা যায়। দশ নয় আট সাত ছক্কা পাঞ্জা চৌকা তিরি দুরি টেক্কা – এই হল বাকি তাসগুলোর ক্ষমতার বিন্যাস, যা আসলে সমাজের শ্রেণিকাঠামোকেই যেন সঙ্গোপনে তুলে ধরে। যেমন দাবা খেলায় লুকিয়ে থাকে রাজাদের যুদ্ধের ছবি। সেই অনুযায়ী ঠিক হয় কে রাজা আর কে বোড়ে, নির্দিষ্ট হয় তার ভূমিকা, এখানেও সেরকমই। এক একটি অবতারের আবার আলাদা আলাদা প্রতীক থাকে। যেমন রামের তির, বলরামের গদা, নৃসিংহ-এর চক্র ইত্যাদি। এইভাবে প্রত্যেক অবতার পিছু মোট বারোটি করে তাস, অর্থাৎ ১২০টি তাসের একটি সেট হয় দশাবতার তাসে।
শুনে নিন বাকি অংশ।