ভাইফোঁটা সংক্রান্ত দুটি পৌরানিক কাহিনির কথা সকলেরই জানা। একটিতে বলা হয়েছে, নরকাসুরকে বধ করে বোন সুভদ্রার কাছে গিয়েছিলেন শ্রীকৃষ্ণ। সুভদ্রা দাদাকে স্বাগত জানিয়েছিলেন ফুল-মিষ্টান্ন দিয়ে। কপালে টিকা পরিয়ে দিয়েছিলেন। অন্য কাহিনি অনুযায়ী, যমকে ফোঁটা দিয়েছিলেন বোন যমী। সেই থেকেই নাকি ভাইয়ের মঙ্গলকামনায় প্রবর্তিত হয় ভ্রাতৃদ্বিতীয়া। কিন্তু যম কি আদৌ বোনের হাতে ভাইফোঁটা নিয়েছিলেন?
যম ও যমীর কাহিনি রয়েছে ঋগ্বেদে। ঋগ্বেদের দশম মণ্ডলের দশম সূক্তের শ্লোক বলছে, এক নির্জন দ্বীপে এসে ভাই যমের শয্যাসঙ্গিনী হতে চান বোন যমী। যদিও যম বোনের প্রস্তাব গ্রহণ করেননি। তাঁর মতে, এ বিশুদ্ধ অজাচার! যমী কিন্তু নিরস্ত হলেন না। তাঁর প্রতিযুক্তি ছিল, তাঁরা যময সন্তান, অর্থাৎ মাতৃগর্ভেই তাঁদের মিলনের সূচনা হয়েছিল। একত্র শয়ন করেছিলেন, অতএব গর্ভের বাইরেও তাতে অপরাধ নেই!
উত্তরে যম বলেন, “যখন সূর্যের ইচ্ছায় পৃথিবী এবং অন্তরীক্ষ একত্র হবে। তখন আমরাও দিন ও রাতের মতো একত্র হব, রাত্রি দিনের সঙ্গে দাম্পত্য মিলন উপভোগ করবে৷ কিন্তু সেই সময় অনেক অনেক বছর পরে আসবে। যখন গতিপথ বিপরীতমুখী হবে, তখনই একত্রে এবং সহঅবস্থানে থাকা অসঙ্গত হবে না৷ তাই এ সময়ের জন্য হে প্রিয়ে, তোমার প্রেমের হাত অন্য কারও দিকে বাড়িয়ে দাও, যে হবে তোমার স্বামী৷”
আরও শুনুন: কাক মানুষের জন্য অশুভ? সেই কাকই কীভাবে পরলোকের বার্তাবাহক?
যদিও এই বক্তব্যেও নিরস্ত হননি যমী। ক্ষুব্ধ হন তিনি। চলে যান নির্জন দ্বীপের অপর প্রান্তে। ফিরে আসেন কিছু পরে। ফিরে এসে চমকে ওঠেন। যখন দেখেন, একটি বৃক্ষতলে শুয়ে রয়েছেন যম। কিন্তু তাঁর দেহে প্রাণ নেই। বেদ অনুযায়ী, এরপর যমীর বিরহ দূর করতে তৎপর হন দেবতারা। তাঁরা যমীকে সান্ত্বনা দেন, তবুও তাঁর কান্না বন্ধ হয় না। এরপরই যমীর শোক দূর করার জন্য দেবতারা দিন ও রাত- এই দুই ভাগে বিভক্ত করলেন সময়কে। যমীও যমহীন সময়বিভাগ ও কালের মাহাত্ম্য উপলব্ধি করে চোখের জল মুছলেন!
আরও শুনুন: বনদেবীর আরাধনা করেন অরণ্যের মানুষ, তবে সব পুজোই আসলে প্রকৃতি পুজো
ঋগ্বেদের এই কাহিনিতে কোথাও যমীর হাতে যমের ভাইফোঁটা নেওয়ার কথা নেই। কারণ, যমের মৃত্যু হয়েছে! ফলে ভাইফোঁটার আর অবকাশও নেই! অতএব, ভাইফোঁটার যে রীতি প্রচলিত ভারতে তার সঙ্গে কৃষ্ণ ও সুভাদ্রার কাহিনির সম্পর্ক থাকলেও থাকতে পারে, কিন্তু যম ও যমীর কোনও যোগাযোগ নেই। তবে ভাইফোঁটা দেওয়ার সময় বোনেরা যে ছড়াটি বলে থাকে সেই যম ও যমুনার ছড়াটি কোথা থেকে এল? সেটা একটা রহস্যময় প্রশ্ন।