মর্তে যে কজন দেবতা বিরাজ করেন তাদের মধ্যে সবচেয়ে ধনী হলেন পদ্মনাভস্বামী। তাঁর বিপুল ধন-সম্পত্তির পাহারায় আজও রয়েছেন স্বয়ং অনন্ত নাগ।
ধনতেরাসে গিনিটা, রুপোর কয়েনটা মায় বাসন-কোসন পর্যন্ত কেনার চল বাঙালির মজ্জায় ঢুকে গেছে বেশ কয়েক বছর। ওই দিন ধনদেবীর পুজোও করে থাকেন অনেকে। সে প্রসঙ্গেই বলি, দেশের তথা বিশ্বের সবচেয়ে ধনী দেবালয় কোনটি জানেন? সেটি কিন্তু আছে আমাদের দেশেই।
আরও শুনুন: কার্তিক মাসে কেন জ্বালানো হয় আকাশপ্রদীপ?
ভারতের ‘God’s own Country’ বলে খ্যাত কেরল রাজ্যে রয়েছে সেই মন্দির। ১৭৫০ সালে ভগবান পদ্মনাভর উদ্দেশে উৎসর্গ করা হয় রাজ্যটিকে। আর রাজপরিবারের লোকজন ভগবানের হয়ে কাজকর্ম পরিচালনা করে চলেছেন। তামিল সাহিত্য অনুয়ায়ী, মর্তে ভগবান বিষ্ণুর ১০৮ টি পবিত্রতম বাসস্থান বা দিব্য দেশমের মধ্যে এটি অন্যতম। মন্দিরে কুণ্ডলী পাকানো অনন্তনাগের ওপর আধশোয়া হয়ে বিরাজ করেন ১৮ ফুট দৈর্ঘ্যের ভগবান বিষ্ণু। আর তাঁর নাভিমূল থেকে বেরিয়ে আছে একটি পদ্ম, যেখানে অধিষ্ঠান মা লক্ষ্মীর। তাই শ্রী বিষ্ণু এখানে পদ্মনাভম রূপে পূজিত। অনন্তনাগের পাঁচটি ফণা তাঁর শিয়রের কাছে থাকে। যেন তীক্ষ্ণ পাহারায় রয়েছে। লোকবিশ্বাস অনুযায়ী, অনন্তনাগ এখনও এই মন্দির ও তার বিপুল ধনরাশির পাহারায় রয়েছেন।
আরও শুনুন: ভুল করলেই বাড়বে বিপদ, জানেন কীভাবে পুজো করলে তুষ্ট হন শনি দেব?
কেরলের রজধানীর থিরুওয়ানন্তপুরমের নামও হয়েছে এর থেকেই। থিরু অনন্ত পুরম অর্থাৎ মহাশয় অনন্ত এখানে আছেন বা বিরাজ করেন। আর যে বিপুল রত্নভাণ্ডারের পাহারায় তিনি আছেন তা পৃথিবীর আর কোনও মন্দিরে দেখা যায় না ।
২০১১ সালে সুপ্রিমকোর্টের নির্দেশ মতো মন্দিরের মোট সম্পত্তির তালিকা প্রস্তুতের সময় জানা যায়, মন্দিরের মাটির তলায় মোট ৬টি মণিমুক্তো ঠাসা কক্ষ রয়েছে। পরে আরও ২টি অনুরূপ কক্ষ আবিষ্কৃত হয়। প্রথম ৫টি ভল্ট থেকে উদ্ধার হওয়া দুর্লভ রত্ন, বাসনকোসন, প্রাচীন মুদ্রার সম্ভার দেখলে চোখ ধাঁধিয়ে যায়। মূল্য অনুমান করতে পারবেন? প্রায় ২২০০ কোটি মার্কিন ডলার। তবে ২নং ভল্ট বা B ভল্টটি বহু চেষ্টাতেও খোলা যায়নি, যার দরজায় নাকি অনন্তনাগের প্রতিকৃতিও আছে। তবে এই ভল্ট খোলার বা ভাঙার চেষ্টা একাধিকবার হয়েছে। আর তার ফল? প্রচলিত গল্প অনুযায়ী, কখনও দুষ্কৃতীরা সাপের তাড়া খেয়ে কোনোমতে পালিয়ে বেঁচেছে তো কখনও মাটির নীচের সুড়ঙ্গে তাদের সাপে কাটা দেহ মিলেছে।
আর তাই মনে করা হয় স্বয়ং অনন্ত নাগ রয়েছেন এই দেব সম্পত্তির পাহারায়। একমাত্র গড়ুর মন্ত্র জপেই নাকি তার দরজা খোলা সম্ভব। আর তা হলে, কলিযুগের শুরুতে তৈরি হওয়া এই মন্দিরকে ঘিরেই হয়তো নেমে আসবে প্রলয়।
হতেই পারে ওই B ভল্টে আরও অনেক মণি-মানিক, রত্ন ও ধন রয়েছে। তাই পদ্মনাভস্বামী মন্দিরের দেবোত্তর সম্পত্তির পরিমাণ আসলে কত, তা এখনও অনুমান করাই সম্ভব হয়ে ওঠেনি। তবে একথা নির্দ্বিধায় বলা যায়, এই মর্তধামে সবচেয়ে ধনী দেবতা এই পদ্মনাভস্বামী-ই।