যখন যন্ত্রচালিত যানবাহানের রমরমা ছিল না পৃথিবীতে, ততদিন অবধি চিঠির গুরুত্ব ছিল সবচেয়ে বেশি। ফোনের আবিষ্কারে ব্যাকফুটে যায় চিঠি। স্মার্টফোন আর ইন্টারনেট বিপ্লবের যুগে চিঠি তত লেখাও হয় না আমাদের। তবু, আপনি কি জীবনে একবারও চিঠি লেখেননি? জানেন, পৃথিবীর সবচেয়ে বড় চিঠির সাইজ কেমন ছিল? সবচেয়ে ছোট চিঠিটিই বা কতটুকু ছিল? আসুন শুনে নিই।
চিঠি মারা গেছে। চিঠি আর ই-মেল এক জিনিস না। সহজ কারণে আলাদা। ই-মেলে অপেক্ষা নেই, চিঠিতে ছিল। অপেক্ষার দুঃখ আর আনন্দ দুই-ই ছিল। তবে, চিঠির মৃত্যু নিয়ে দুঃখ করে লাভ নেই। কারণ সে হাজার হাজার বছর ধরে যথেষ্ট করেছে। রাজায় রাজায় চিঠি চালাচালি হয়েছে যেমন, তেমন গরিব-গুর্বো প্রজারাও স্বজনকে জীবনের ভাল-মন্দের খবর জানিয়েছে চিঠি লিখেই। কালে কালে পত্রসাহিত্যের একটা মূল্যবান পৃথিবীও গড়ে উঠেছে। একজন বিশ্বখ্যাত সাহিত্যিককে চিঠির ইতিহাসে আশ্চর্য কারণে চিরকাল মনে রাখবে। কারণ তিনিই আজ অবধি ক্ষুদ্রতম চিঠিটির লেখক। আর বৃহত্তম চিঠি? ইতিহাসে সেই রেকর্ডও রয়েছে।
চিঠির জন্ম কোথায়, তা নিয়ে বিস্তর বিতর্ক রয়েছে। তবে প্রাচীন সভ্যতাগুলির কোনও একটিই যে চিঠির জনক, তা সবাই মানেন। ফলে ভারত, মিশর, রোম, সুমের এবং চিন নিয়ে দাবি ও পাল্টা দাবি রয়েছে। সে যেখানেই চিঠির জন্ম হোক, চিঠি কিন্তু প্রেমিক ও প্রেমিকাকে সুযোগ দিয়েছিল প্রাণ ভরে মনের ভাব প্রকাশ করার। আর এই সুযোগের যুগান্তকারী সদ্বব্যবহার যিনি করেছিলেন, তিনিই পৃথিবীর ইতিহাসের সবচেয়ে বড় চিঠির লেখক।
আরও শুনুন : কেন তৈরি হয়েছিল প্লাস্টিক? কোন প্রাণীকে বাঁচিয়ে দিয়েছিল?
কালের গর্ভে নাম হারিয়ে গেছে সেই প্রেমিকার। তবে অমর হয়ে গেছে তাঁর প্রেম। নিউইয়র্কের ব্রুকলিনে বাসিন্দা ছিলেন তিনি। ১৯৫২ সালে ঐতিহাসিক দীর্ঘতম চিঠিটি লিখেছিলেন। অবশ্যই নিজের প্রেমিককে। ওই সময় কোরিয়াতে যুদ্ধ চলছিল। সেখানে মার্কিন সেনাবাহিনীর সৈনিক হিসেবে যুদ্ধেক্ষেত্রে ছিলেন প্রেমিক। তাঁকেই ৩ হাজার ২০ ফুট লম্বা একটি চিঠি লিখে ফেলেন প্রেমিকা। যা নাকি লিখতে তাঁর সময় লেগেছিল একমাস। প্রশ্ন ওঠে, কীভাবে ওই চিঠির পৌঁছানোর ব্যবস্থা করেছিল ডাকবিভাগের কর্মীরা! যদিও তা আজ আর জানা যায় না।
বিশ্বের ক্ষুদ্রতম চিঠিটি লিখেছিলেন বিশ্বখ্যাত সাহিত্যিক ভিক্টর হুগো। ১৮৬২ সালে হুগোর অন্যতম ক্ল্যাসিক উপন্যাস ‘লা মিজারেবল’ প্রকাশিত হয়। উপন্যাসটি নিয়ে চিন্তিত ছিলেন কিংবদন্তি লেখক। প্রকাশের কিছুদিন পর হুগো একটি সাদা কাগজে কেবলমাত্র একটি প্রশ্নবোধক চিহ্ন (?) এঁকে প্রকাশকের কাছে পাঠিয়ে দেন। হুগো আসলে ওই একটিমাত্র চিহ্নের মাধ্যমে জানতে চেয়েছিলেন, তার বইয়ের কাটতি কেমন হচ্ছে। হুগোর প্রকাশক বলে কথা, তিনিও ছিলেন রসিক মানুষ। প্রশ্নচিহ্নের উত্তরে একটি বিস্ময়বোধক চিহ্ন (!) এঁকে পাঠিয়ে দেন। যার মানে, বিস্ময়করভাবে ভাল চলছে বই। যে উপন্যাসের বিক্রির খবর জানতে চেয়ে পৃথিবীর ইতিহাসের ক্ষুদ্রতম চিঠি লিখেছিলেন হুগো, সেটি কিন্তু ছোট ছিল না। বারোশোরও বেশি পৃষ্ঠার একটি উপন্যাস ‘লা মিজারেবল’।
আরও শুনুন : জন্ম গ্রিস, মিশর না চিনে, কীভাবে রূপ পেল আজকের ছাতা?
চিঠি প্রায় বিলুপ্ত হয়েছে। আরও হবে। তবে এমন সব আশ্চর্য ইতিহাস কিন্তু থেকে যাবে। যে কারণে শেষ অবধি মরেও মরা হবে না চিঠির।