রক আর্ট, মানে পাহাড়ের গায়ে প্রাচীন মানুষের আঁকিবুকি কেমন ‘কলম’ দিয়ে হত, তা আর জানা যায় না। তবে খাগের কলম, পাখির পালক দিয়ে লেখার কথা আমাদের জানা। এই পাখির পালকের সঙ্গে আজকের ‘পেনে’র সম্পর্ক গভীর। তবে আধুনিক পেনের জনক হলেন দুই ব্যক্তি। একজন ফাউন্টেন পেনের আবিষ্কর্তা, আরেকজনের উদ্ভাবন হল বল পয়েন্ট পেন। আসুন শুনে নিই কলমের কাহিনি।
ঋষিরা সংস্কৃত পুথি ‘পেন’ দিয়েই লিখতেন। কালিদাসও পেনের ব্যবহার জানতেন! মেঘদূত রচনা করছিলেন ‘পেন’ দিয়ে লিখেই। তবে সেই পেন ছিল পাখির পালক। কালির দোয়াতে পালকের পেন ডুবিয়ে লেখাই ছিল লেখালিখির দীর্ঘতম ইতিহাস। জানেন কি এই ‘পেন’ শব্দটির সঙ্গে গভীর সম্পর্ক রয়েছে পাখির পালকের।
আসলে ইংরেজি ‘পেন’ শব্দটি এসেছে ল্যাটিন ‘পেন্না‘ থেকে। ‘পেন্না‘র অর্থ পাখির পালক। গোটা বিশ্বের মতো ভারতেও ব্যবহার ছিল খাগের কলমের ও পাখির পালকের। তবে, মিশরীয়রা অন্য ব্যবস্থা করেছিল বলে জানা যায়। তারা কাঠির ডগায় তামার নিব লাগিয়ে লেখা আরম্ভ করেছিল। হাতির দাঁতও কলমের কাজ করত বলে জানা যায়। এই ব্যবস্থা ছিল গ্রিসে। গ্রিসের এই পদ্ধতিকে বলা হত ‘স্টাইলাস’। এই কারণেই এখন লেখন আঙ্গিককে বলা হয় স্টাইল।
আরও শুনুন: ফোনে ধরলেই তো বলেন ‘হ্যালো’, জানেন এই শব্দ কোথা থেকে এল?
চিনে প্যাপিরাসের ব্যবহার পুরনো। তবু, মধ্যযুগে কাগজ আবিষ্কারের পর পালকের কলমের প্রচলন শুরু হয়। এমনটাই চলছিল। অনেক পরে ১৮৮৩ সালে আমেরিকান লুইস ওয়াটারম্যান আবিষ্কার করেন ফাউন্টেন পেন। দ্রুত জনপ্রিয় হয় এই পেন। খাগের কলম, পাখির পালক গত হতে শুরু করে ধীরে ধীরে। আমেরিকায় প্রশাসনিক কাজে একচেটিয়া জায়গা দখল করে নেয় এই ফাউন্টেন পেন। এর পর অন্য দেশেও ফাউন্টেন পেন তৈরি শুরু হয়ে যায়।
এক সময় এই ফাউন্টেন পেনকেও জায়গা ছাড়তে হল! কারণ বল পয়েন্ট পেন এসে গেল বাজারে। বল পেনের জনক হাঙ্গেরির ল্যাজলো জোসেফ বিরো। বিরো পেশায় ছিলেন সাংবাদিক। তিনি ফাউন্টেন পেন ও নানা রকম কালির ব্যবহার নিয়ে গবেষণা করছিলেন দীর্ঘদিন ধরে। শেষ পর্যন্ত বল পয়েন্ট পেন উদ্ভাবন করে ফেলেন। ১৯৩১ সালে প্রকাশ্যে আনেন তাঁর উদ্ভাবন। ওই বছর একটি আন্তর্জাতিক মেলায় বল পয়েন্ট কলম-এর প্রদর্শন করেন। ১৯৩৮ সালে বল পয়েন্ট পেনের পেটেন্টও লাভ করেন ল্যাজলো জোসেফ বিরো।
আরও শুনুন: চিঠি পাঠাতে শিখতে হবে সাঁতারও, জলের তলায় ঠিকানা এই আশ্চর্য ডাকঘরের
ডট পেন হোক বা জেল পেন, আমরা আজও কিন্তু বল পয়েন্ট পেনেরই লেখক। কেউ কেউ অবশ্য শখ করে ফাউন্টেন পেনেও লেখেন। তবে, এতখানি যুগ বদলের পরেও কালিদাশ যে পেনে লিখতেন, আজকের আমরাও কিন্তু সেই পেনেই লিখে চলেছি। কারণ ল্যাটিন ‘পেন্না’ থেকেই তো ‘পেন’ শব্দের উৎপত্তি। আগেই বলা হয়েছে, ‘পেন্না’ মানে পাখির পালক।