একটা ভারত-পাকিস্তান ম্যাচে যা যা হওয়ার কথা, তা হল না। একতরফা ভালো খেলে ম্যাচ পকেটে পুরে নিল পাকিস্তান। অথচ ম্যাচের বাইরে যা যা হওয়ার কথা নয়, হল তাই-ই। কোথা থেকে যেন ফিরে এল পানিপথের ভূত! এমনকী ব্যঙ্গ করা হল শামিকেও! কেন? আর-একটু দায়িত্বজ্ঞানের পরিচয় কি আমরা দিতে পারতাম না!
আমার সমস্ত সুখ, শৈশবের স্বচ্ছ নদীনালা
ভেসে যায় রক্তস্রোতে, বিভাজিত কূট দৃষ্টিপাত
এখন রয়েছে শুধু। অন্ধকারে ধ্বস্ত বারান্দায়
আমার বিকট হাসি কশাঘাতে আমাকে কাঁদায়।
– অনন্য রায়
২০২১-এর সকালে কবর থেকে তুলে আনা হল ১৫২৬-কে। ফিরে এলেন মুঘল সম্রাট বাবর। তাঁর রাজ্যলিপ্সা, সাম্রাজ্যজয় সমেত। ফিরলেন ভূমিকাহীন, খানিকটা অপ্রস্তুত ভাবে। ফেরার তো প্রয়োজন ছিল না। কিন্তু যতবার ভাবি, প্রয়োজন ছিল না, তত মনে হয়, কোথাও নিশ্চয়ই লুকিয়ে ছিল অভিপ্রায়। নয়তো এই কার্তিকের হিম হিম মাসে কেনই বা ফেরানো হবে তাকে বাজারগরমের সার্থক প্রত্যাশায়! ঠিক এইখানে এসে, ঘাই দিয়ে ওঠে প্রশ্ন, খুব কি দরকার ছিল এই প্রত্যাবর্তন? কে দেবে উত্তর? জানা নেই।
সামান্য এই কণ্ঠস্বর, কোথাও পৌঁছাবে না জেনেও, একা একা এই কথা বলে যাওয়া।
আরও শুনুন: ‘অফসাইডের ঈশ্বরী’… অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে ইতিহাস গড়া স্মৃতিকে নিয়েও হোক হইচই
উপলক্ষ যৎসামান্য। বিশ-বিশের ক্রিকেট বিশ্বকাপে অনুষ্ঠিত হয়েছে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ। এইটুকুতে কেউ কেউ অবশ্য প্রশ্ন তুলতে পারেন বক্তার বুদ্ধির মাত্রা নিয়ে। আজকের ক্রিকেটবিশ্বে ভারত-পাক ম্যাচকে কি যৎসামান্য উপলক্ষ আদৌ বলা যায়? বলাটা কি ভুল হবে না! কে না জানে, এ-ম্যাচের নিশ্চিতই আলাদা গুরুত্ব আছে। আছে বলেই উত্তেজনা আছে, আর আছে সেই উত্তেজনার সঠিক বিপণন। তবু প্রশ্ন হল, সেই বিপণন কোন পথে এগোবে? এমনকি তা কি সেই পথও ধরতে পারে, যে-পথে সড়সড়িয়ে এগিয়ে আসে পারস্পরিক বিদ্বেষের সাপ! একটি ক্রিকেট ম্যাচ বই তো কিছু নয়। সে ম্যাচে অত্যন্ত স্বাভাবিক ভাবেই এক পক্ষের হার ও জিত আছে। খেলোয়াড়রা তা জানেন। আর জানেন বলেই, এই জয় বিশেষ হলেও সবিশেষ হয়ে ওঠে না। এক পক্ষের অধিনায়ক বলেন, সবে তো টুর্নামেন্টের শুরু। অন্য পক্ষের অধিনায়ক, অতি উচ্ছ্বাসে রাশ টানেন। একে অপরের সঙ্গে তাঁরা হাসিমুখে মোলাকাত করেন। এক পক্ষের মেন্টরকে দেখা যায় অন্য পক্ষের খেলোয়াড়দের সঙ্গে আলোচনায় মশগুল।
আরও শুনুন: জোড়া গোল করেও জুটল বাবার হাতে চড়, জীবনের অন্য শিক্ষা পেলেন পিকে
এই ছবিগুলোই একটি ক্রিকেট ম্যাচের বিজ্ঞাপন হয়ে উঠতে পারে এবং তাই হওয়া উচিত। অথচ ফিরল সেই ১৫২৬। স্রেফ বিপক্ষ দলের অধিনায়কের নাম বাবর বলেই, এই সামান্য উপলক্ষের সঙ্গে ১৫২৬-এর যোগসূত্র স্থাপন কি নেহাত শব্দে শব্দে মিল দেওয়ার লোভ সংবরণ করতে না পারা! সোশ্যাল মিডিয়ার বহু পোস্টে তো বটেই, এমনকী প্রতিষ্ঠিত গণমাধ্যমও সে তুলনা টানায় বিরত থাকেনি। এ কি নিছকই আপতিক, নাকি নেপথ্যে রয়ে আছে এমন কিছু গূঢ় এষণা, যা আমরা ঢেকে রাখি নাগরিক সফিস্টিকেশনের শৌখিনতায়? কে দেবে উত্তর! জানা নেই।
সামান্য এই কণ্ঠস্বর, কোথাও পৌঁছাবে না জেনেও, একা একা এই কথা বলে চলা!
বাকি অংশ শুনে নিন।