কোথাও আগুন লাগলে দমকলকে ডাকতেই হয়। দমকলই যে ফায়ার ব্রিগেড বা ফায়ার সার্ভিস তাও আমাদের জানা। কিন্তু কলকাতা শহরের অগ্নিনির্বাপণ বাহিনীর ডাকনাম ‘দমকল’। কেন ‘দমকল’? চলুন দেড়শো বছর পিছিয়ে জেনে নিই উত্তর।
কোথাও আগুন লাগলেই যাদের কথা মনে পড়ে, তারা হলেন অগ্নিনির্বাপণ বাহিনী। ইংরেজিতে যাকে বলে ফায়ার ব্রিগেড বা ফায়ার সার্ভিস। কিন্তু আগুন লাগলে কোথায় খবর দিই আমরা? খবর দিই ‘দমকলে’। ভেবে দেখেছে কি, এই ‘দমকল’ শব্দটা কোথা থেকে এল? এর মানেই বা কী?
উত্তর দিতে দেড়শো বছর পিছোতে হবে। এক লহমায় উত্তর মেলে উনবিংশ শতাব্দীর বিশিষ্ট সংগীত রচয়িতা রূপচাঁদ পক্ষীর এক লেখা পড়লে। সেই লেখা বলছে- “অগ্নিদেব হলে প্রবল, নির্বাণ করে দমকল।” তিনি আরও লেখেন, “মেসিনেতে দিলে দম, করে ঝম ঝম, তেজে বেরোয় ওয়াটার, সকল প্রস্তুত কলিকাতাতে, এমন নাই ভূ-ভারতে।”
আরও শুনুন: মামলায় অভিযুক্ত খোদ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, শেষমেশ কী হল পরিণাম?
যে মেশিনে দম দেওয়ার কথা লিখেছিলেন রূপচাঁদ পক্ষী, সেগুলি আসলে ফায়ার ব্রিগেডকে সতর্ক করার একটি বিশেষ যন্ত্র। সেকালে বিভিন্ন রাস্তায়, মোড়ে মোড়ে বসানো থাকত লাল রঙের আশ্চর্য লোহার বাক্স। বাক্সের ভেতরে কাচে ঢাকা একটা খোপে থাকত হাতল ঘুরিয়ে যন্ত্রে দম দেওয়ার ব্যবস্থা। হাতল ঘোরালেই খবর চলে যেত নিকটবর্তী দমকলের দপ্তরে।
যতদূর জানা যায়, দম দেওয়া এই যন্ত্রটি তৈরি করেছিলেন ব্রিটিশ অফিসার ক্যাপ্টেন বার্নাড অ্যান্সন ওয়েস্টব্রুক। আর এটিই সম্ভবত ভারতে প্রথম ফায়ার অ্যালার্ম। অতএব যেটা বোঝা গেল, দম দেওয়া কল দিয়ে তৎকালীন অগ্নিনির্বাপণ বাহিনীকে ডাকা হত বলেই মানুষের মুখে মুখে তার নাম হয়ে যায় দমকল। অবশ্যি অন্য একটি মতও রয়েছে। সেই মতে, সেকালে ফায়ার ব্রিগেডের গাড়িতে যে জলের পাম্পগুলো থাকত, সেগুলি চালাতেও হাতল ঘোরাতে হত, অর্থাৎ কিনা দম দিতে হত। এও ফায়ার সার্ভিসের দমকল হয়ে ওঠার আরেক কারণ।
আরও শুনুন: শুধুই খেলনা নয়, ছাপোষা মানুষের প্রতিবাদের প্রতীক হল তালপাতার সেপাই
দেড়শ বছর পরেও ঘরে বা পথে-ঘাটে আগুন লাগলে অগ্নিনির্বাপণ বাহিনী, মানে ফায়ার ব্রিগেড বা ফায়ার সার্ভিসকে ডাকতে হয় বটে, তবে তার জন্য কোনও কলে দম দিতে হয় না। তথাপি অনন্ত, অমর হয়ে গেল ব্রিটিশ কলকাতার ‘দমকল’।