বিজয়া দশমীর দিন প্রতিমা বিসর্জনের আগে উমাকে বরণ করেন বিবাহিত মহিলারা। মায়ের কপালে সিঁদুর পরিয়ে দেন। মিষ্টিমুখ করান। এরপর সধবারা নিজেদের মধ্যে সিঁদুর খেলেন। কবে থেকে শুরু হয়েছিল এই সিঁদুর খেলা?
শাস্ত্র মতে দশমীর ঘট বিসর্জনের পর উমার শ্বশুরবাড়ি ফিরে যাওয়ার পালা। তার আগে চলে উমা-বরণ। উমাকে সিঁদুর-আলতা-পান-সুপুরিতে বরণ করেন বাড়ির মেয়েরা। এরপরই বিবাহিত মেয়েরা মেতে ওঠেন সিঁদুর খেলায়।
আরও শুনুন: দশমীতে দেবী দুর্গার যাত্রার খবর দেয় নীলকণ্ঠ পাখি, জেনে নিন এই পাখির কথা
সিঁদুর খেলা দুর্গাপুজোর অন্যতম অংশ। একে অপরের সিঁথিতে সিঁদুর দিয়ে স্বামী ও পরিবারের মঙ্গলকামনা করেন সধবারা। উমাকে বরণের এই সিঁদুর বাড়িতে রাখা থাকে বছরভর। এদিন মাকে মিষ্টিমুখ করিয়ে তবেই সকলে মিষ্টি খান। প্রতিমা বরণের সময় বহুকাল থেকে লালপাড় সাদা শাড়িতে সেজে আসছেন মহিলারা। ব্লাউজও হয় লাল। সঙ্গে মানানসই সোনার গয়না। আর সিঁথি ভর্তি সিঁদুর। এদিনের সাজে সকলেই হয়ে ওঠেন দশভুজা! অন্য দিনগুলোয় পুজোর সাজে আধুনিকতার ছোঁয়া লাগলেও দশমীতে আজও সাবেকি পরম্পরার পোশাকই রেওয়াজ। এবং বরণের সময় অবশ্যই মাথায় থাকতে হবে ঘোমটা। সিঁদুর পরিয়ে দেবীর কাছে প্রার্থনা করে মেয়েরা বলেন, সর্বলোকের রঞ্জন পরমসৌন্দর্যযুক্ত সিন্দুর তিলক তোমার কপালকে মণ্ডিত করুক।
আরও শুনুন: দশমী তিথি উদযাপিত হয় প্রায় সারা দেশে, কী তাৎপর্য রয়েছে এই বিশেষ তিথির?
ভবিষ্য পুরাণে বলা হয়েছে, সিঁদুর স্বয়ং ব্রহ্মার প্রতীক। বিবাহিত নারী সিঁথিতে সিঁদুর দিয়ে পরম ব্রহ্মকেই আহ্বান করেন। গীতাতেও কাত্যায়নী ব্রত উপলক্ষে গোপিনীদের সিঁদুর খেলার বিবরণ পাওয়া যায়। কিন্তু তা অবশ্যই কৃষ্ণের মঙ্গল কামনায়। মনে করা হয় পরমব্রহ্ম সংসারের সকল দুঃখ-কষ্ট দূর করেন। দেবী রূপে মা পুজো পেলেও যখন তিনি বিদায় নেন, তখন তিনি ঘরের মেয়ে। আর এই বরণের সময় নতুন বস্ত্র পরতে পারলে সবচেয়ে ভাল হয়। নইলে অবশ্যই শুদ্ধ বস্ত্র পরতে হবে, এমনটাই মত শাস্ত্রের।
বিজয়া দশমীতে বিবাহিত মহিলারা তাঁদের স্বামীর দীর্ঘায়ু কামনা করেই সিঁদুর খেলেন। হিন্দু ধর্ম মতে এদিন সিঁদুর খেললে স্বামীর আয়ু বাড়ে। একটি সূত্রে জানা যায়, প্রায় সাড়ে চারশো বছর আগে প্রথমবার সিঁদুর খেলা হয় বিজয়ার দিনে। সেই থেকে এই রীতি মেনে আসছেন বাঙালি বধূরা।